google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0

গুরুত্বপূর্ণ খবর

google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0

বেবি চক্রবর্তী, সাংবাদিক ও লেখিকা, কলকাতা:

পথের ধারে অজস্র রক্তপাত বয়ে ছিল মৃত্যুর ঢল উঠেছিল স্লোগান, ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায় - লাখো ইনসান্ ভুখা হ্যায়।

মাতৃভূমির বুকে বেজে ছিল শঙ্খ ধ্বনি - উড়েছিল পতাকা মধ্যরাতের অন্ধকারে রাত্রি বারোটায় অখন্ড ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা।

সূর্যালোকে আসেনি ভারতের স্বাধীনতা। আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম মধ্যরাতের অন্ধকারে। ঘড়িতে তখন রাত বারোটা| অখন্ড ভারতের বারোটা বাজিয়ে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছিল| মাঝরাতে দু’টুকরো হয়ে গেল দেশ| কিন্তু ভারত ভেঙে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নেয়নি| জন্মেছিল দু’টি পৃথক ডোমিনিয়ন| ১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসের ঠিক মাঝামাঝি ১৪ – ১৫ ই আগষ্ট বাস্তবে কি ঘটেছিল তাঁর ছোট একটা বিবরণ ইংরেজিতে তুলে দিলাম —

New Delhi, Aug 15 :- Two new Dominions , India and Pakistan , were born at zero hour today, ushering in political freedom to 400 million people constituting one – fifth of the human race. At a special session of the Indian Constituent Assembly, the House assumed full powers for the administration of the Indian Dominion.

সূর্যডোবা সেই রাতে এসেছিল ভারতের বুক চিরে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামে আলাদা দুই ডোমিনিয়নের জন্ম| সেইসঙ্গে ক্ষমতার হস্তান্তর|

মুক্তিযুদ্ধে দুই প্রধান নায়কই ছিলেন ওই দৃশ্যে অনুপস্থিত| ১. মহাত্মা গান্ধী, যিনি কলকাতার বেলেঘাটায় বস্তি এলাকায় মুখ লুকিয়ে ওই রাতটি কাটিয়েছিলেন| ২. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (নেতাজি স্বয়ং থাকলে বোধ হয় এটি হত না)|

স্বাধীনতা দেশভাগ একসঙ্গে জড়িয়ে গেল। কিন্তু দেশভাগ ছিল যতটা নিরেট সত্য, স্বাধীনতা ততটা নয়| দেশভাগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল কোটি কোটি মানুষের চোখের জল| রক্তের স্রোত বয়েছিল| জাতির চেয়ে বড় হয়েছিল সম্প্রদায়| যেখানে সম্প্রদায় বিশেষ জেহাদ ছাপিয়ে গিয়েছিল জাতীয় সংগ্রামকে। শুরুতেই গড়ার চেয়ে ভাঙাই পেল মর্যাদা| দেশপ্রেমকে বিদায় জানিয়ে মান্যতা দেওয়া হল ক্ষমতার কাড়াকাড়িকে|

কে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন!

সেইরাতে গান্ধিজিও নাকি নিরবে কেঁদেছেন। পরে স্বীকার করছিলেন ১৫ ই আগষ্ট ছিল তাঁর পরাজয়ের দিন| গ্লানিভারে নুয়ে পড়েছিলেন তিনি| গান্ধিজি বলেন –“জওহরলাল, সর্দার প্যাটেল, মৌলানা আজাদ সবাই তাঁর দূরের মানুষ| এরা এতকাল আমাকে মই হিসেবে ব্যবহার করেছে| কাজ ফুরোলে ছুঁড়ে ফেলেও দিয়েছে| গান্ধিজি পরে স্বীকার করেন যে “যদি সুভাষ ফিরত তবে দেশভাগ হত না|”

স্বাধীনতা ও দেশভাগ একই সময়ে ব্রিটিশ আইনের আওতায়| আইনের নাম The Indian Independence Act, 1947 …

কিন্তু ৫নং ধারায় এসে থলির বেড়াল বেড়িয়ে পড়েছিল|

For each of the new Dominions, there shall be a Governor General who shall be appointed by His Majesty and shall represent His Majesty for the purposes of the Govenment of the Dominion.

ব্রিটিশ যে ভারত থেকে বিদায় নেবে সুভাষচন্দ্র তা জানতেন। যাবার আগে তারা যে অখন্ড ভারতকে খন্ডিত করে দিয়ে যাবে তা তিনি যুদ্ধ শুরু হবার আগেই বুঝেছিলেন| কংগ্রেস সভাপতির ভাষণে সে বিষয়ে তিনি জনসাধারণ ও শিক্ষামন্ডলীকে হুঁশিয়ার করেও দিয়েছিলেন| তারপর যখন তিনি দেশের বাইরে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় স্বাধীনতার যুদ্ধ চলা কালীন তখন বেতার ভাষণে গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল প্রমুখ নেতৃমন্ডলীর কাছে বারবার তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন, মাতৃভূমিকে দ্বিখন্ডিত হতে দেবেন না| কেউ শোনেনি তাঁর কথা। তাই আজ সমগ্র ভারতবর্ষের রাজনীতি যেন জাতির অন্ধ বিবেচিত নির্বাচিত প্রার্থী কূটনীতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে দুর্নীতির দিকে ক্রমশ অগ্রসর হয়েছে| অর্থনীতি সাম্যতা কমে দিনে দিনে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে| স্বাধীনতার নতুন সূর্য কখনও দেখতে চায়নি ক্ষুধার্ত অসহায় শিশুর কান্না আর বেকারত্বের অবহেলিত নীরব নোনাজল!

ব্রিটিশ ভারতকে দীর্ঘদিনের  নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের পর ১৯৪৭ এর ১৫ ই আগষ্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ভারত (India) - পাকিস্তান (Pakistan) নামে দুটি স্বাধীন অধিরাজ্যে বিভক্ত হয়| সারা দেশ যখন মুক্তির আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছে, তখন দেশে একটি নতুন শ্লোগান ওঠে ---- "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় | ভুলো মাৎ ভুলো মাৎ" এই স্বাধীনতা মিথ্যা, ভুলো না, ভুলো না। বলা বাহুল্য, এ অভিযোগ যথার্থ নয়, বরং বলা য়ায় ---- অর্ধ - সত্য | ড. অমলেশ ত্রিপাঠী বলেন, "এ আজাদি একেবারে ঝুটা না হলেও জন্মসূত্রে প্রতিবন্ধী|" আসলে স্বাধীনতা লাভের ফলে ভারত দু- টুকরো হয়ে যায়| ভারতের দুটি সমৃদ্ধিশালী প্রদেশ ---- বাংলা ও পাঞ্জাব দ্বিখন্ডিত হয়| দেশজুড়ে শুরু হয় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা, লুন্ঠন, নারী নির্যাতন, ধর্মান্তর এবং লাখ লাখ ছিন্নমূল মানুষের দেশান্তর গমন| ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হওয়ায় পাকিস্তান ভারত - ভুক্ত পাঞ্জাব থেকে লাখ লাখ মানুষ ভারতে চলে আসতে থাকে| এইসব দেশত্যাগী মানুষদের জন্য বাসস্থান, খাদ্য ও কাজের ব্যবস্থা করা কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়| দেশ ভাগের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিও বিভক্ত হয়ে যায়| ভারতে দেখা যায় চরম বেকার সমস্যা| ১৯৪৭ এর অখন্ড ভারত ভাগ নতুন দেশের গৃহহীন ও বাস্তুুচ্যুত| ১৯৪৭ সালের এপ্রিলেও বোঝা যায়নি আগষ্টে দেশভাগ হবে| এপারের মানুষ ওপারে যাবে। ওপারে মানুষ এপারে| মুর্শিদাবাদ, খুলনার মানুষ বিভ্রান্ত হবে তাদের অংশে ভারত না পাকিস্তানের পতাকা উড়বে। সিলেটের করিমগঞ্জে পাকিস্তানের পতাকা উড়েও নেমে যাবে| প্রাক্তন এক ইংরেজ বিচারক স্যার সেরিল র‍্যার্ডক্লিফ যিনি আগে কোনদিন ভারতবর্ষে আসেনি, ভালো করে ম্যাপ পড়ার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা (Cartographic Knowledge) যার নেই, প্রত্যক্ষ কোনও অভিজ্ঞতা নেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন সংস্কৃতি, ভাষা ও আনন্দ - বেদনার তাকে কিনা দায়িত্ব দেওয়া হল বাংলাকে বিভক্ত করার বাউন্ডারি কমিশনের| স্যার লর্ড মাউন্টব্যাটেন দেশভাগের জন্য তাড়াতাড়ি করে ধরে এনেছিল তখনকার রাজনৈতিক চাপের পরিস্থিতি সামাল দিতে তার আঁকিবুকি ও নানা কূটকৌশলের রাজনৈতিক সমীকরণে কোটি কোটি মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা আর বিপর্যয় নেমে আসবে| অনেকের নতুন পরিচয় হবে উদ্বাস্তু| ছেড়ে যেতে হবে সাত পুরুষের বসতি, স্মৃতি ও সংগ্রামের ভূমি, নদী -মাঠ- ঘাট, আশৈশব, হেঁটে যাওয়া চেনা পথ, প্রান্তর। পেছনে পড়ে থাকবে ধূ-ধূ স্মৃতির ভূমি, স্বজনের কবর আর শশ্মান| অসহায় অজস্র মানুষের স্থান হবে রিফিউজি ক্যাম্প| কেউ যাবে দূর পৌরাণিক কাহিনীর অনুর্বর দেশ -দণ্ডকারণ্যে। তাদের সংগ্রাম ও গভীর বেদনা ফুরাবে না একজীবনে। আজ যেন সব স্মৃতির পাতা।

(www.theoffnews.com fractured freedom India)


বেবি চক্রবর্তী, সাংবাদিক ও লেখিকা, কলকাতা:

ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শত শত বিপ্লবীদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ। কোটি মানুষের রক্তের ওপর দেশভাগ। কথায় আছে গোড়ায় গলদ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসন নিয়েও দলাদলি ছিল খোদ কংগ্রেসের অন্দরমহলে, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং জওহরলাল নেহরুর মধ্যে। যখন কংগ্রেসের ওয়াকিং কমিটির ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১২ টা ভোট পেয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আর বাকি তিনটে ভোট ঝুলিতে ছিল জহরলাল নেহরুর। সেই দিন গান্ধীজি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে আসার জন্য বাধ্য করেন। এবং গান্ধীজি নিজে প্যাটেল এর পদত্যাগপত্র লিখে তাতে স্বাক্ষর করার জন্য প্যাটেলকে বললে তিনি বলেন, "স্বাধীনতার শুরুতেই গণতান্ত্রের গলা টিপে তাঁকে হ্রাস করা হল।" সেই সময় এটি একটি তৎকালীন ইংরেজি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অনুমোদন ছাড়া প্রধানমন্ত্রী পদ নির্বাচন করা যায় না কিন্তু সেখানে গান্ধীজি সবকিছু উপেক্ষা করে খোদ স্বয়ং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নাম ঘোষণা করেন পন্ডিত জহরলাল নেহরু'কে। আজ‌ও তাঁর জন্মদিন শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়। 

ভারতের রাজনীতির মঞ্চ যেন এক চিরকালীন নাট্যগৃহ। যেখানে সিংহাসন নিয়ে চলে চরম কৌশল দ্বন্দ এবং প্রতিযোগিতা। আজও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার কেবল একটি প্রশাসনিক পদ নয় বরং হয়ে উঠেছে শক্তির প্রভাব ও আর্দশের প্রতীক। স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু ছিলেন গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তা। তাঁর শাসনে ভারতের পরিকল্পিত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়। সিংহাসন ছিল তাঁর কাছে দায়িত্ব, দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার মঞ্চ।পন্ডিত জহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর ভারতের রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে ইন্দিরা গান্ধীর। তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা স্পষ্ট ভাষী একরকম স্বৈরাচারী। তাঁর আমলে ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ছিল এক ভয়াবহ অধ্যায় যেখানে দেশীয় গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক কন্ঠরোধ ঘটেছিল। এরপর রাজীব গান্ধী - সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর হাত ধরে গান্ধী পরিবার রাজনৈতিক সিংহাসনের মূল দাবিদার হয়ে ওঠে। কংগ্রেস এই ধারাকে "ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার" হিসাবে দেখতে চেয়েছে অথচ বিরোধীরা একে পরিবার তন্ত্রীয় রাজনীতি বলে কটাক্ষ করে।

ভারতের রাজনীতিতে সিংহাসন কেবল পদ নয়। এ যেন এক নীতিগত প্রতিশ্রুতি ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। এরপর নব্বইয়ের দশকে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে যায়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ক্ষমতায়নের অলিন্দে ঢোকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তৈরি হয় জোট সরকার। এখানে একে একে ক্ষমতায় আসেন ভিপি সিং, চন্দ্রশেখর, দেবগৌড়া, আই কে গুজরাল এবং পরবর্তীতে একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। এই সময় সিংহাসনের খেলা হয়ে দাঁড়ায় বিরামহীন বোঝাপড়া ও সামঝোতার চর্চা। যেখানে স্থায়ী নীতি ও পরিকল্পনা থেকে রাজনৈতিক সুবিধাইত অবস্থানটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তাঁর শাসনাধীন সরকার আত্মবিশ্বাসী আক্রমনাত্মক ও এক ধরনের ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রতিচ্ছবি। তিনি জনসংযোগকে মূল হাতিয়ার বানিয়ে এক নিরঙ্কুশ শাসনের মডেল গড়ে তোলেন। যদিও অনেকে এই সময়কে গণতন্ত্রের সংকোচন হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। আবার অনেকেই একে বলেন উন্নয়নের যুগান্তকারী ধারা। ভারতের রাজনীতি আজও একটি চিরন্তন দ্বন্দ্ব আদর্শ বনাম ক্ষমতা নেতৃত্ব বনাম দম্ভ। জনসেবা বনাম ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা। প্রথম প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আজকের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই সিংহাসন ভিন্ন সময় ভিন্ন চেহারার রূপ নিয়েছে কিন্তু একটা বিষয় সব সময় স্পষ্ট থেকেছে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় বরং সাধারণ মানুষের আস্থা এবং গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর নির্ভরশীল। ভারতের রাজনীতির এই সিংহাসন শুধু একটা পদ নয়। এটা একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা। ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে যারা এই সিংহাসনকে প্রকৃত জনসেবার হাতিয়ার বানিয়েছেন তাঁরাই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। পাশাপাশি ভোট প্রচারের আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে যে জনপ্রতিনিধিরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট ভিক্ষা করেন পরে তাঁদের কাছে কোনও প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে জুতোর সোল খুইয়েছেন। তাঁরাই আবার পরে ক্ষমতাকে নিজস্ব হাতিয়ার করে। সময় তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে ইতিহাসের প্রান্তে। তাই আজকের প্রজন্মের উচিত রাজনীতিকে কেবল ক্ষমতার খেলা না ভেবে সমাজে পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে দেখা তবেই সত্যিকারের গণতন্ত্রের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। বর্তমান ভারতের প্রয়োজন আর্দশবান নেতৃত্ব গণতান্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনীতির আঙিনায় এই সিংহাসনের খেলা আজও চলছে। সময়ের ধারা পরিবর্তনশীল কিন্তু এখানে মানুষের আশা নেতৃত্ববোধ জনকেন্দ্রিক মানবিক এবং নৈতিকতায় ঋদ্ধ।

(www.theoffnews.com Prime Minister India)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম: 

প্রতি বছরের মতো এবারও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন থেকে শেষ বিদায় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানটি পালিত হল শান্তিনিকেতনে। পায়ে পায়ে শান্তিনিকেতন থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ বিদায়ের ৮৪ বছর হলো অতিক্রান্ত। শান্তিনিকেতনের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে সেই আবেগ ঘন মুহূর্তের স্মরণে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো হুগলির কুশাঙ্কুর নামে এক সংস্থা। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবিগুরুর একান্ত সচিব সুধাকান্ত রায়ের পুত্র, প্রবীণ আশ্রমিক ও রবীন্দ্র স্নেহধন্য দ্বীপেশ রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ যাত্রার এক প্রত্যক্ষদর্শী। অনুষ্ঠানে তিনি শান্তিনিকেতন থেকে কবিগুরুর শেষ বিদায়ের মুহূর্তগুলি তুলে ধরেন এবং নিজের স্মৃতিচারণায় উপস্থিত দর্শকদের আবেগপ্রবণ করে তোলেন।

রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক অমৃত্রসূদন ভট্টাচার্য কবিগুরুর অন্তিম সময় ও তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মের গভীর দিকগুলি তুলে ধরেন যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

অনুষ্ঠানের আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন কুশাঙ্কুরের প্রতিষ্ঠাতা মৃণালকান্তি দাস। সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কবিতা, সংগীত, নাটক ও নৃত্যের মাধ্যমে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

প্রতি বছর আয়োজিত হয় এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। উদ্দেশ্য একটাই শান্তিনিকেতনের সঙ্গে কবিগুরুর শেষ বিদায়ের ইতিহাস ভিত্তিক স্মরণকে স্মৃতিতে ধরে রাখা।

(www.theoffnews.com Shantiniketan Rabindranath Tagore)





 



বেবি চক্রবর্তী, সাংবাদিক ও লেখিকা, কলকাতা: 

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমায় টানা বৃষ্টির জেরে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন, চাষবাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। সংস্থার পক্ষ থেকে ঘাঁটালের বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। চিড়ে, গুড়, বিস্কুট, মুড়ি সহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুর্গত মানুষদের হাতে। শুধু খাবার নয়, অসুস্থ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প। সেখান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান সম্পাদক স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ মহারাজ জানিয়েছেন, “এই দুর্যোগে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। আমাদের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকরা নৌকায় করে বন্যা প্লাবিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার অন্তর্গত দৌলৎচক, ফতেপুর, রামচক, গঙ্গাপ্রসাদ, নিচ মনসুকার ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার ও মেডিকেল ক্যাম্পের এর মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।

(www.theoffnews.com Ghatal Bharat Seva Shram)


বেবি চক্রবর্তী, সাংবাদিক ও লেখিকা, কলকাতা:

সৃষ্টির অনন্ত পথে সত্যের সাধনা। অসীম ধৈর্য নিয়ে তাকিয়ে ---- সময়! মরদেহ সমাধি নিয়ে চলেছিল বিবাদ চরমে। তৎকালীন ডেভিড হেয়ারের সমাধি নিয়ে একের পর এক বিবাদের ঝড় উঠেছিল।মৃতদেহ পচে নাকি দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে লালদীঘির জল নাকি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মামলাও রুজু হয়েছিল কোর্টে। এত সন্ধিক্ষণের পর জয়ের মুকুট পেল ডেভিড হেয়ার। প্রবল ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেয়ারের শবযাত্রা। ওদিন কলকাতার রাজপথ ছিল জনসমাগম। বউবাজারের চৌরাস্তা থেকে মাধব দত্তের বাজার পর্যন্ত। হাজার হাজার মানুষ সেই যাত্রায় পা মিলিয়েছেন। কেউ গাড়িতে কেউ পায়ে হেঁটে সঙ্গ দিয়েছিল প্রিয় হেয়ার সাহেবকে।  

সেদিন সমাধি নিয়ে উঠেছিল ঝড়। কোথায় শায়িত হবেন মহারতি হেয়ার...? খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী তিনি ছিলেন না তাই কবরস্থানে তাঁর জায়গা হল না! অবশেষে হিন্দু কলেজের কাছে তাঁরই কেনা জমিতে লালদীঘির ধারে আজও তিনি শায়িত রয়েছেন।

ডেভিড হেয়ার ছিলেন একজন স্কটিশ ঘড়ি ব্যবসায়ী। যিনি কলকাতায় এসে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি হিন্দু স্কুল, হেয়ার স্কুল এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। কলকাতায় আসার পর তিনি ডালহৌসি এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে তার বন্ধু গ্রে সাহেবের সাথে একটি বাড়িতে থাকতেন। তিনি ১৮০০ সালে ভারতে এসেছিলেন ঘড়ি তৈরির কাজে অর্থ উপার্জনের জন্য। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গে কলকাতায় তাঁর সাক্ষাৎ হয়। রামমোহন প্রতিষ্ঠিত আত্মীয় সভার সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। জনহিতকর কাজ শিক্ষার উন্নতির জন্যে প্রচেষ্টা কর‍তে থাকেন। তাঁর নিজের ঘড়ির ব্যবসার ক্ষতি করেও অর্থ, সময় এবং নিরলস শ্রম দান করতে থাকেন শিক্ষার উন্নতিকল্পে। 'আত্মীয় সভা'য় কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এডওয়ার্ড হাইড ইস্টকে তার এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে হাইড ইস্ট ও কতিপয় ভদ্রলোকের সক্রিয় সহযোগিতায় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই বছরই তিনি ইংরেজি এবং বাংলা পুস্তক মুদ্রণ ও প্রকাশনার জন্য ‘কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজসেবায় সার্বক্ষণিকভাবে আত্মনিয়োগের জন্য ডেভিড হেয়ার ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তার ব্যবসার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন তার বন্ধু গ্রে সাহেব-এর ওপর। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা দুজন হেয়ার স্ট্রিটের একটি বাড়িতে একসঙ্গে অবস্থান করতেন। ইতোপূর্বে তিনি ব্যবসা করে কলকাতায় বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন। ওই সম্পত্তির কিছু অংশ তিনি হিন্দু কলেজকে দান করেন বাকিটা সংস্কৃত কলেজের নিকট নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিয়োর সঙ্গে ডেভিড হেয়ারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়। ইয়ং বেঙ্গলের একজন হিতৈষী হিসেবে হেয়ারের তাদের সংগঠন ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অব জেনারেল নলেজ ১৮৩৮ সালে সংস্থার পৃষ্ঠপোষক হন। নিষ্ঠুর শ্রম আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। ওই আইনের আওতায় সে সময়ে ভারতীয় শ্রমিকদের দাস হিসেবে ইউরোপের উপনিবেশ গুলোতে পাঠানো হত। ঔপনিবেশিক আমলের উৎপীড়নমূলক, অমানবিক আইনের সংস্কার সাধনের জন্য তিনি জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। দেশীয় সংবাদপত্রের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্যও সংগ্রাম করেন। নতুন স্কুল এবং অন্যান্য জ্ঞানচর্চামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দানের কারণে হেয়ার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কলকাতার শেরিফ পদের জন্য মনোনীত করে। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে মাসিক ১০০০ রুপি বেতনে উক্ত পদে নিয়োগ দিয়ে তাঁর ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করেছিল।

হেয়ার ১৭৭৫ সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন ।তিনি যখন তার ব্যবসায় উন্নতি করছিলেন। তখন স্থানীয় জনগণের শোচনীয় পরিস্থিতি তাঁর মনকে বিক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। অন্যান্য বেশিরভাগ লোকের মতো নয় যারা শান্তি ও সমৃদ্ধিতে জীবনযাপনের জন্য সম্পদ অর্জন করে তাঁদের জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন। তিনি এই দেশেই থেকে যাওয়া এবং এর উন্নয়নের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 

এরপর জীবনে তিনি তাঁর ঘড়ির ব্যবসা দেখার মতো সময় দিতে পারছিলেন না। সেই জন্যে ওটা গ্রে নামে তাঁর এক বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে কিছু অর্থ দিয়ে তাঁর নিজের জন্যে একটা ছোট বাড়ি কিনেছিলেন এবং বাকি অর্থ স্কুলের উন্নয়নের জন্যে খরচ করেছিলন। দীর্ঘ কর্মজীবনের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলন। ৩১ শে মে রাত্রি একটায় কলেরার জীবাণু মেলে হেয়ারের শরীরে। তিনি কলেরায় আক্রান্ত হন। ভয়ঙ্কর বমি‌ শুরু হয়ে যায়। ডেভিড হেয়ার বুঝতে পেরেছিলেন ধীরে ধীরে মৃত্যু গ্রাস করছে তাঁকে। বন্ধু গ্রে'কে বলেছিলেন কফিনের ব্যবস্থা করতে। পরের দিন সকালে ডেভিড হেয়ারের প্রিয় ছাত্র কলকাতা মেডিকেল কলেজ উত্তীর্ণ ডাক্তার প্রসন্ন কুমার মিত্র তাঁকে আরোগ্য করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করেও বিফল হন। সেদিনটা ছিল পয়লা জুন। সন্ধ্যা বেলায় হেয়ারের মৃত্যু হয়। গোটা কলকাতা জুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। ছোট থেকে বড় প্রায় সবাই ভিড় করতে থাকে ডেভিড সাহেবের বাড়িতে তাঁর অন্তিম মরদেহ দেখার জন্য। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে ১ জুন ডেভিড হেয়ার জীবনাবসান হয়। ভুলে গেছি আমরা পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের অবদানের কথা। আজও স্মৃতির ফলকে কলকাতার রাজপথে গোলদীঘির ধারে কফিন বক্সে শায়িত ডেভিড সাহেব...!

(www.theoffnews.com David Hare Kolkata)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

আজ বুধবার শান্তিনিকেতনে হেরিটেজ ওয়াকিং শুরু হল। কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক গনেরা আজকে টুরিস্টের ভূমিকা পালন করেন। গাইড এর ভূমিকা পালন করেন প্রশিক্ষিত ভলেন্টিয়ার্সরা। 

বিশ্বভারতীর কর্ম সচিব অমিত হাজরা সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, বুধবার হেরিটেজ ওয়াকিং এর ট্রায়াল শুরু হলো। চারজন ছেলে এবং চারজন মেয়েকে গাইডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। একজন ছেলে ও একজন মেয়ে মোট চারটি টিমে বিভাজিত হয়ে গাইডের কাজ করবেন। জানা গেছে হেরিটেজ ওয়াকিং এর জন্য ৩০০ টাকা টিকিট হবে। রবীন্দ্র ভবনের জন্য আড়াইশো টাকা টিকিট কাটতে হবে। সমস্ত টিকিট রবীন্দ্র ভবন থেকে কাটা যাবে। কলা ভবন, রবীন্দ্র ভবন এবং হেরিটেজ ওয়াকিং এই তিনটি ক্যাটেগরিতে টিকিট বুকিং করা যাবে। পড়ুয়াদের জন্য ব্যাচে ৫০ টাকা এবং ব্যক্তিগতভাবে ঘুরলে দেড়শ টাকা টিকিট কাটতে হবে। একটি ব্যাচে মোট ২৫ জন পর্যটক থাকতে পারবে। এছাড়াও সমস্ত কিছু ঘুরতে চাইলে কন্সেশন রেটে একটি কম্ব টিকিট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক পর্যটক শনি রবিবার দুদিনই ঘুরতে চান। সেক্ষেত্রে তারা লাভবান হবেন। বিদেশি পর্যটকদের জন্য হাজার টাকা টিকিট ধার্য হয়েছে। বুধবার হেরিটেজ ওয়াকিং এর ট্রায়ালের শেষে প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষিত গাইডদের কোন ভুল থাকলে সংশোধন করে দেবেন। মোট তিনটি ভাষায় এই গাইড কথা বলবেন। সেগুলি হলো বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি। মার্চ মাস থেকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। জুলাইয়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এই হেরিটেজ ওয়াকিং এর কাজ বিলম্বিত হয় বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সূত্রে বলা হয়েছে। নভেম্বর থেকে অনলাইন টিকিট বুকিং করা যাবে। কেউ গাড়ি ছাড়াও ঘুরতে পারে তার জন্য টিকিটের মূল্য আলাদা ধার্য আছে। এছাড়াও দেড় ঘন্টা ভ্রমণের পর এক্সিট পয়েন্টে বিশ্বভারতী পড়ুয়ারা তাদের নিজস্ব সৃষ্টিসম্ভার নিয়ে দু তিনটে স্টল নিয়ে হাজির থাকবে। ভবিষ্যতের জন্য এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশ্বভারতী তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে হেরিটেজ সাইটকে সকলের জন্য উন্মোচিত করে এক ইতিবাচক সময়ের সূচনা করতে চলেছে। হেরিটেজ ওয়াকিং এর পর স্মৃতি হিসেবে সকলের হাতে স্মরণিকা তুলে দেওয়া হবে, বলে বিশ্বভারতী সুত্রে খবর। বুধবার এই স্মরণিকা এবং টিকিটের উদ্বোধন করা হয়। এই ঘটনায় শান্তিনিকেতনবাসী ও প্রবীণ আশ্রমিকরা খুবই খুশি। বিশ্বভারতীর এই সদর্থক পদক্ষেপ কে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত প্রবীন আশ্রমিকরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। 

 আসুন এক ঝলকে জেনে নেওয়া যাক, সেই স্মরণিকায় কী কী আছে...

হাটিমাঙ্গলা

মহার্শি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধ্যানের বেদি। আনুমানিক ১৮৬৮ সালের মার্চ মাসে শান্তিনিকেতন আশ্রমের প্রাঙ্গণে নির্মিত হয়। কিছুকাল পরেই সেখানে একটি পাকা মন্দির নির্মিত হয়।শান্তিনিকেতনের-গৃহ

শান্তিনিকেতনের প্রাচীনতম বাড়ি। ১৮৬৩ সালে এই বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে এটি মহর্ষির গ্রীষ্মকালীন বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৭ সালে এই বাড়িতেই ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস রচনা করেন। পরে এটি অতিথি-গৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯১৯ সালে গেস্ট হাউস রূপে ব্যবহৃত হওয়ার পর এখানে থাকার জন্য আসতেন দেশের ও বিদেশের বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি। এই ঘরে এক সময় শান্তিনিকেতনের পুরনো জাদুঘরও ছিল। এখানকার বেশির ভাগ আসবাবপত্র কলকাতার সবরকার এসেছে।

দিনলিপিকা

শান্তিনিকেতন চাতুর্মাস্য মধ্যভাগে দিগন্তবিস্তৃত চত্বরে ‘উপাসনা’ নামে ১৯০১ সালে একটি প্রার্থনাগৃহ নির্মিত হয়। এই প্রার্থনাগৃহে মেঝেতে বসে উপাসনা হয়। কোন মূর্তি বা প্রতীক নেই। এখানে রবিবারে ব্রহ্মসঙ্গীত গাওয়া হয় এবং পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করা হয়।

চীন ভবন

১৯৩৭ সালের চীন ভবনের প্রতিষ্ঠা হয়। চীন এবং ভারতীয় সংস্কৃতি-সভ্যতা চর্চা ও প্রসারের উদ্দেশ্যে এই ভবন নির্মাণ করা হয়। চীন ভবনে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি, দালান ও হলঘর, যেখানে চিনা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা করা হয়। ভবনটি stucco শিল্পরীতিতে নির্মিত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বাক্ষর

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ হেরিটেজ সেবা কেন্দ্র প্রকাশিত।

স্বত্বাধিকারঃ হেরিটেজ সেবা কেন্দ্র।

উপাসনা-গৃহ

বিশ্বভারতীর এই উপাসনা-গৃহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ ডিসেম্বর ১৮৯৮ সালে। এই স্থানে ব্রাহ্মসমাজের আদর্শে শান্তিনিকেতনের সকল আবাসিক ও অতিথিদের নিয়ে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হত। ১৯০১ সালে ২৩ ডিসেম্বর বিদ্যালয় স্থাপনের পর ‘উপাসনা’ শান্তিনিকেতনের একটি গুরত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে।

বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহটি চারদিকে খোলা, কোন দেয়াল নেই। এর মেঝেতে বসেই উপাসনা হয়। এখানে কোন প্রতিমা নেই, উপাসনা সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। রবিবার সকালে ও বিশেষ উৎসবে এখানে উপাসনার আয়োজন করা হয়।

নতুন বাড়ি

রবীন্দ্রনাথ সংসারের নবনির্মাণের জন্য ১৯০২ সালে এই বাড়ি নির্মাণ করেন। নির্মাণকালে তার মাতামহীর স্মৃতিমগ্নতা এবং স্বজন হারা রবীন্দ্রনাথের নিঃসঙ্গতা, বিশেষভাবে কাজ করেছিল।

এই বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। বিভিন্ন সভা, বৈঠক ও আন্তর্জাতিক কর্মপরিকল্পনার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘নতুন বাড়ি’ ব্যবহৃত হয়েছে

তালদেহ

একটি তালগাছকে ঘিরে এই ঘর তৈরি, hence তালদেহ। এটি বর্তমানে শান্তিনিকেতন বিদ্যাভবনের অধ্যাপক শিক্ষকদের বাসগৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি একতলা একটি ভবন, যার অভ্যন্তরে একসময় অধ্যাপক সেলিম মুরাদ বাস করতেন।

দেবেন্দ্রভবন

১৯০৪ সালে ‘দেবেন্দ্রভবন’ নির্মাণের কাজ শুরু। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ এই বাড়িটিতে বসবাস করেন। বাড়ির নির্মাণের সময় কবির মতামত মেনে কাজ হয়েছে।

এই বাড়িতে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এসেছেন এবং বসবাস করেছেন।

এই বাড়িতেই প্রথম শান্তিনিকেতন পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল।

সত্যমঙ্গল

রবীন্দ্রনাথের জীবনের অন্যতম পর্যায়ে এই বাড়িটি নির্মিত হয়। সত্যমঙ্গল বাড়িটি তার স্ত্রীর স্মৃতিবিজড়িত। তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ১৯০২ সালের ২৩ নভেম্বর এই বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯০৪ সালে এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সাধনা’, ‘শিক্ষা’, ‘আত্মশক্তি’ প্রভৃতি প্রবন্ধ রচনা করেন। বর্তমানে এটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ঘণ্টাতলা

১৯০৫ সালে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের শাশুড়ি বেলি দেবীর উদ্যোগে এই বাড়িটি নির্মিত হয়।

ঘণ্টাতলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো - মূল প্রবেশপথের সামনে একটি ঘণ্টা ঝোলানো থাকে। বাড়িটি শিক্ষকদের আবাসিক ভবন হিসেবে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচী ও স্মারক নির্দিষ্টকরণে ব্যবহৃত হয়।

পূর্ব-ভবন ও পশ্চিম-ভবন

বিদ্যালয়-এলাকার প্রথম ভবনগুলোর মধ্যে দুটি ভবন পূর্ব-ভবন ও পশ্চিম-ভবন হিসেবে পরিচিত। বাড়ি দুটি সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের শাশুড়ি বেলি দেবীর অনুদানে নির্মিত। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসন ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সিংহসদন

রায়বাহাদুর জীবনচন্দ্র সান্যালের অনুদানে এই ভবন নির্মিত হয়। ১৯৪২ সালে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৪৫ সালে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়।

এই ভবনটি নির্মিত হয় শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে। ভবনটি আজও বিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিন তলা বিশিষ্ট ভবনটির সম্মুখে সিংহের মূর্তি থাকায় এর নামকরণ হয়েছে সিংহসদন।

পাঠভবন

শান্তিনিকেতনের প্রাচীনতম বাড়িগুলোর অন্যতম পাঠভবন বিদ্যালয় ভবন।

প্রথমে এটি শিক্ষকদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯১৯ সালে পাঠভবন নামকরণ হয়।

শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম শিক্ষার্থী অন্নপূর্ণা তুরু ১৯০১ সালে ভর্তি হন। বিদ্যালয়ের স্থাপনার সময় পাঠভবন ছিল কেন্দ্রস্থলে।

১৯০৪ সালে কবিগুরু লিখেছেন –

“শিক্ষার প্রথম ক্রমে যেটি সবচেয়ে বড়ো সম্পদ তা হলো গৃহ। গৃহশিক্ষা আমাদের দেশের প্রাচীন আদর্শ। এই সময় পাঠভবন সেই আদর্শকে বাস্তব রূপ দিয়েছিল।”

(www.theoffnews.com Shantiniketan)


সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

দেশ অনেক। ভাষা, মতামত ভিন্ন। কিন্তু আমাদের পৃথিবী একটাই। এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে দরকার সচেতনতা। আর ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে কনটেন্ট ক্রিয়েটার্সরাই হয়ে উঠতে পারে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির অন্যতম হোতা। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত IAMCR 2025 কনফারেন্সে‌ অংশগ্রহণ করে এমনই মতামত তুলে ধরলেন তন্ময় সামন্ত। বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা তন্ময় সামন্ত বর্তমানে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার। তিনি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত IAMCR 2025 কনফারেন্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলেন। পরিবেশ ন্যায় (Environmental Justice) নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে তিনি কেবল প্রশংসা নয়, বরং বিশ্বের নানা দেশের খ্যাতনামা প্রফেসর ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আন্তরিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে বড় হয়ে ওঠা তন্ময় নিজের আত্মবিশ্বাস ও স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও যোগাযোগ বিষয়ক বৈশ্বিক আলোচনায় নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

১৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের নামী নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় International Association for Media and Communication Research (IAMCR) 2025। এবারের সম্মেলনের মূল থিম ছিল— “Communicating Environmental Justice: Many Voices, One Planet”। সম্মেলনে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ১৫০০ জন গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন কী-নোট বক্তৃতা, থিমেটিক প্যানেল ও রাউন্ডটেবিল আলোচনার মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ ও ন্যায্যতার বার্তা তুলে ধরা হয়।

তন্ময় সামন্ত সম্মেলনে দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রথম পত্র “Digital Greenwashing: Analysing the Role of Content Creators in Sustainability Narratives”, যেখানে তিনি দেখান কিভাবে কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটর পরিবেশবান্ধবতার মুখোশ পরে মূলত ভ্রান্ত বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার কিছুজন কিভাবে পরিবেশ সচেতনতায় অগ্রণীর ভূমিকা পালন করছেন। দ্বিতীয় গবেষণাপত্র “Championing the Fight Against Climate Change: A Thematic Dissection of Selected Indian Films on Environmental Issues”—এই প্রবন্ধে তিনি বিশ্লেষণ করেন ভারতীয় মূলধারার চলচ্চিত্র কীভাবে পরিবেশ সংকট ও জলবায়ু আন্দোলনের বার্তা বহন করে। উভয় প্রবন্ধই আন্তর্জাতিক গবেষকদের মধ্যে গভীর আলোচনার জন্ম দেয় এবং ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বকে বৈশ্বিক অঙ্গনে তুলে ধরে।

নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তন্ময় সামন্ত বলেন, “একটি গ্রামীণ পটভূমি থেকে উঠে এসে এবং বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে আমি যখন আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে নানা দেশের বর্ষীয়ান গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম, তখন নিজেকে অসম্ভব গর্বিত ও অনুপ্রাণিত মনে হচ্ছিল। এই কনফারেন্স প্রমাণ করেছে, চিন্তাশীল গবেষণা ভাষা বা ভৌগোলিক সীমার তোয়াক্কা করে না।"  তিনি আরও বলেন, “IAMCR 2025 শুধুমাত্র একাডেমিক অর্জন নয়, বরং এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক বিনিময়ও ছিল। এই বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা আমার কাছে এক বড় সাফল্য।”

শুধু গবেষণাপত্র উপস্থাপন নয়, তন্ময় অংশ নিয়েছিলেন গ্রিন কমিউনিকেশন এথিক্স, যুব সমাজের জলবায়ু আন্দোলন এবং ডিজিটাল স্টোরিটেলিং নিয়ে নানা আলোচনা সভায়ও। তাঁর উপস্থিতি প্রমাণ করেছিল, ছোট শহর ও আঞ্চলিক শিক্ষার পটভূমি থেকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। সম্মেলনে তিনি যুক্তরাজ্য, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন।

IAMCR 2025 শুধু একটি গবেষণা প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, বৈচিত্র্য এবং জ্ঞানবিনিময়ের এক অনন্য উদাহরণ। তন্ময় সামন্তের জন্য এটি ছিল এক ব্যক্তিগত ও প্রফেশনাল মাইলস্টোন—একটি মুহূর্ত যা বাংলা তথা ভারতের গর্বের।

(www.theoffnews.com Tanmay Samanta)


দেবাত্রেয়ী গুহ, লেখিকা, বারাসাত, কলকাতা:

দলে দলে মানুষ ছুটে চলেছেন সরু রাস্তা দিয়ে। মন্দিরে পুজো দিয়ে মনোস্কামনা পূর্ণ করার জন্য ভিড় করেছেন অগুনতি মানুষ। 

এই পুজোয় দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য উপাচার হিসাবে ভক্তেরা শরীরে জড়িয়ে নেন জ্যান্ত সাপ। এক বা একাধিক সাপ নিয়ে উল্লাস করতে করতে ভক্তেরা জড়ো হন মন্দিরে। 

বিহারের সমস্তিপুরের সিংহিয়া ঘাটে শত শত মানুষ জড়ো হোন নাগ পঞ্চমী মেলায় যোগ দিতে।

এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সাপ। ভক্তদের হাতে একটা করে জ্যান্ত সাপ থাকে, প্রাচীন প্রথা মেনেই পালিত হয় এই মেলা।

প্রায় প্রত্যেকের হাতে একটা করে সাপ। প্রতিটি সাপই জ্যান্ত। দেখলে হাড় হিম হতে পারে। কিন্তু এটাই প্রথা। এভাবেই প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে এই মেলা।

মাতাবিষহারীর নামে জয়ধ্বনি দিতে নাগপঞ্চমীতে ভক্তরা পুজো দেন সাপকেই। পুজো শেষে অধিকাংশ সাপকে স্থানীয় জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই মেলায় শুধু সমস্তিপুর নয়, বিহারের মিথিলা এলাকার বিভিন্ন জেলা, খাগড়িয়া, সহরসা, বেগুসরাই, মুজফ্ফরপুর থেকেও বহু ভক্ত আসেন। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ঐতিহ্য প্রায় শতাধিক বছরের পুরনো, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে একইভাবে।

মহিলাদের মধ্যেও রয়েছে একান্ত পূজা-পদ্ধতির রেওয়াজ। তাঁরা গহ্বর বা নির্দিষ্ট পবিত্র স্থানে নাগদেবতার আরাধনায় বসেন। সন্তান প্রাপ্তি, পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে পরবর্তী নাগপঞ্চমীতে ‘ঝাঁপ’ ও প্রসাদ অর্পণ করে কৃতজ্ঞতা জানান।

স্থানীয়দের দাবি, মেলায় এখনও পর্যন্ত কোনও সাপের ছোবলের ঘটনা ঘটেনি।

(www.theoffnews.com snake fair)

 

দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

শুধুই কি পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে বা স্কুলছুট রুখতে স্কুলে পড়ুয়াদের জন্মদিন পালনের উদ্যোগ  ব্রাহ্মণখণ্ড বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে? এটাই শুধু ভাবলে বোধহয় ভুল হবে। আমরা যারা স্কুলে যাই বা গেছি। শুধুমাত্র পড়া মুখস্ত দেওয়া আর পড়া গলাধঃকরণের জন্য নয়। স্কুলে যাওয়া মানুষ হওয়ার জন্য। যে মানবিক মূল্যবোধ গুলো আজ তলানিতে, সেগুলির প্রসূতিগার এই স্কুল বা বিদ্যালয়। আজকের দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঘটা করে জন্মদিন পালন হয়। কিন্তু কে খোঁজ রাখে দু:স্থ পরিবারের ছেলে মেয়ের কথা? যারা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কেউ কথা রাখেনি কবিতা পড়েছেন, নিশ্চয়ই জানেন, লস্কর বাড়ির ছেলেমেয়েদের লাঠি লজেন্স চুষে চুষে খাওয়া দেখার বর্ণনা। তাই স্কুলে এই অভিনব উদ্যোগ। যাদের জন্মদিন বাড়িতে পালন করার সামর্থ্য নেই। স্কুল তাদের জন্মদিন পালন করবে। এর থেকে বড় পাওনা আর কি হতে পারে?

প্রতিমাসে যতজন পড়ুয়ার জন্মদিন আছে সকলের জন্মদিন মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে পালন করা হবে তিথি ভোজনের মাধ্যমে। তিথি ভোজন কী? বাংলা ক্যালেন্ডারের কোন একটা তিথিতে একসঙ্গে অনেক পড়ুয়ার জন্মদিন পালন। মিড ডে মিল স্কিমের সঙ্গেই ওই একটা দিন একটু ভাল খাবার খাবে পড়ুয়ারা। জুলাই মাসের এক তিথি ভোজনে মিড ডে মিলের ভাত, ডাল, তরকারির সঙ্গে এদিন জুড়ে গেল জন্মদিনের পায়েস, পাশাপাশি থাকল মাংস কষা, মিষ্টি, চাটনি।

ছেলেমেয়ে মিলিয়ে এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১২০০ জন। তবে নিত্যদিন অনুপস্থিতির সংখ্যাও আছে। এরই মাঝে কিভাবে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা যায় সেই উদ্যোগ নিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত প্রায় ২২ জন পড়ুয়ার জন্মদিন এই জুলাই মাসে। প্রত্যেককে পাশাপাশি বসিয়ে উপহার দেওয়া হল, পায়েস-মিষ্টি খাইয়ে জন্মদিন পালন হল স্কুলেই। ঠিক বাড়ির মতই। সহকারী শিক্ষিকা দীপান্বিতা গাঙ্গুলী জানালেন, মূলত স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই উদ্যোগ। সঙ্গে আছেন তাঁরা সকলেই। শিক্ষিকা হওয়ার আগে তাঁরা তো মা। ছেলেমেয়েদের জন্মদিন স্কুলে পালন হলে এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে।

ব্রাহ্মণখণ্ড বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামকৃষ্ণ রজক জানান, স্কুল থেকে যাতে পড়ুয়ারা মুখ ফিরিয়ে না নেয় এবং নতুন উৎসাহে যাতে স্কুলে আসে, পড়াশোনায় আগ্রহী হয় এটাও একটা ভাবনা। তবে সর্বোপরি সকলের সঙ্গে একাত্মীভূত হওয়া এই মানবিক ভাবনা তাঁর মাথায় আসে। শিক্ষকই তো মানুষ গড়ার কারিগর। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি কামরুল হোদা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।

আর যাদের জন্য এই ভাবনা তারা কী বলছে? সব দেখে শুনে আজ ওদের মুখে চওড়া হাসি। কারও কোনওদিনই জন্মদিন পালন হয়নি, কারও হয়তো কখনও সখনও হয়েছে। তবে বন্ধুদের মাঝে স্কুলে বসে এমন হইহই করে আনন্দ তারা কখনই উপভোগ করেনি। তাইতো অনাবিল নির্মল আনন্দ আজ তাদের চোখে-মুখে উপচে পড়ছে। আবেগে উচ্ছ্বাসে চোখদুটি তাদের জ্বল  জ্বল করছে।  একমাত্র এই আনন্দের ভাগ হয়।

(www.theoffnews.com Birbhum school birthday students)



 

দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম: 

শুক্রবার বোলপুর রেলওয়ে ময়দানে বোলপুর বিধানসভার অন্তর্গত এলাকা থেকে সর্বমোট ২৫ টি রথ কমিটিকে সম্মান প্রদান করা হলো শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের (এসএসডিএ) পক্ষ থেকে। রথ কমিটির হাতে একটি স্মারক, একটি মানপত্র ও ১০,০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয়। 

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, রথের দিনই দুর্গা প্রতিমার কাঠামোয় মাটি পড়ে। তাই একটা গুরুত্ব আছে। তিনি বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন পূজা পার্বণে বিশেষ করে রথযাত্রায় সঙ দেখেছেন। মূলত এই সঙের আকর্ষণে তারা রথের পেছনে ছুটতেন। কিছুটা আর্থিক অসংগতির কারণে সঙের মতো লোকশিল্প আজ গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব কারণেই এবার রথযাত্রা কমিটিকে সম্মাননা প্রদানের কথা এসএসডিএ ভাবে। 

 উল্লেখ্য, বর্তমান প্রজন্ম এই সঙ কি তা জানে না। সঙে যেমন বিচিত্র সাজ থাকে, তেমনি তার গানও বিচিত্র ভাবে লেখা হতো। যা শুনে ও দেখে আট থেকে আশি সবাই হেসে মজা পেতেন। যেমন, "লেট মি গো গিরিধারী। আই ভিজিট টু বংশীধারী। আমি এসেছি ব্রজ হতে। আমি ব্রজনারী। কিম্বা, সাপ্লাই অফিস দেখুন, মশাই। এখানে যতসব যুধিষ্ঠিরের নাতি। ভক্তি ভরে শিন্নি দিলে, এরা ছুঁচে গলায় হাতি।" 

অনেকের ধারণা এই সম্মাননা প্রদর্শনের ফলে রথযাত্রায় আবার সঙ ফিরে আসবে। মন্ডল বাড়ি রথ কমিটির কর্ণধার জীবন মন্ডল সম্মাননা পেয়ে জানান, রথ তার নিয়মেই চলে। আমরা উপলক্ষ্য মাত্র। আর্থিক সাহায্য এখানে বড় কথা নয়। বড় কথা হলো সম্মাননা প্রদান। আজ ৪০  বছর ধরে জগন্নাথের রথ চলছে। এতদিন বাদে এই সম্মাননা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই এসএসডিএকে। এদিন মন্ত্রী চন্দনাথ সিনহা আরও বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী বরাবর বলে থাকেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলায় দুর্গাপূজায় যেমন সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একত্র হয়, তেমনি ঈদেও সকলে একসঙ্গে উৎসব পালন করে। এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। বিজেপি ধর্মের নোংরা রাজনীতি করতে গিয়ে তারা ধর্মের ব্যবসা ফেঁদেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই মেকি ধর্মের বিরুদ্ধে। আমরা তৃণমূল কংগ্রেস উন্নয়নকে মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছি।

(www.theoffnews.com Bolpur Rath)



 


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

অপু দুর্গার বায়োস্কোপ দেখার দৃশ্য সবার মনে এনে দেয় এক পুরনো দিনের নস্টালজিক অনুভূতি। সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশব। তার ছোঁয়া বা স্পর্শ পাবেন শান্তিনিকেতন। কলা ভবনের গেটের সামনে দেখতে পাবেন বায়োস্কোপ। এই যন্ত্রের গবাক্ষে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী ভবন, রামকিঙ্কর বেইজ, কে জি সুব্রামানিয়াম, সুরেন্দ্রনাথ কর প্রভৃতি বিশ্ববরেণ্য শিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি। বিশ্বভারতীর নতুন নিয়মে পর্যটকদের ক্যাম্পাসে এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই পর্যটকদের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে এক অনবদ্য সাহচর্য এই বায়োস্কপের। কলা ভবনের ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র রোহিত সেন প্রায় একমাস ধরে নিজের চেষ্টায় তৈরি করেছেন এই বাইস্কোপ। বিশ্বভারতীতে পর্যটকদের মনের সাধের খোরাক জোটাতে বিপুল সম্ভার নিয়ে হাজির তার এই বায়োস্কোপ। রোহিত সেন বলেন, পর্যটকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে না তাই তাদের সুবিধার জন্য এই বায়োস্কোপ বানিয়েছি এখানে চোখ রাখলেই কলা ভবন সহ পুরো ক্যাম্পাসটা দেখা যাবে। 

২০২৩ সালে ইউনেস্কোর কাছ থেকে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পায়। সেই অনন্য তকমা বা ট্যাগকে ধরে রাখতে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধের এক নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেদিক থেকে এই বায়োস্কোপ পর্যটকদের কাছে পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার আনন্দ। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারলেও বাইরে থেকে খুব সুন্দরভাবে বাইস্কোপের গবাক্ষে চোখ রেখে দেখা যাবে ভিতরের পুরোটাই। পর্যটকরা জানিয়েছেন, খুব সুন্দর এই বায়োস্কোপ। আমরা তো আগে দেখিনি, মা ঠাকুমার কাছে শুনেছি এই বায়োস্কোপের কথা। এখন চাক্ষুষ করে খুব ভালো লাগলো। আরেক পর্যটক বলেন, আমরা ছোটদের বায়োস্কোপের কথা বলেছি। তারা আজ চাক্ষুষ করতে পারলো। আমরা পড়েছি ১৫ দশকের অরুণোদয়ের জলের বায়োস্কোপ বই বা হালে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বায়োস্কোপের সেই বিকেল বেলার গান। একটা নস্টালজিয়া ফিলিং বলতে পারেন। এই বায়োস্কোপও তো ধরে রেখেছে অনেক পুরনো স্মৃতি।

(www.theoffnews.com Bioscope Shantiniketan)




 দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

মুছে গেলো অবন ঠাকুরের বাড়ি। স্মৃতি হিসেবে শুধু থেকে গেলো এলাকার নাম "অবন পল্লী।" শান্তিনিকেতনে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হল প্রখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি। কে বা কারা ভেঙে ফেললো গোটাটাই রহস্য। বোলপুর পুরসভা বলতে পারছে না। একরকম নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বাড়িটি৷ বাড়িটি ভাঙা হতেই শুরু হয়েছিল হই-চই। তার পরেই বোলপুর পুরসভার তরফে কাজ বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ সেই তালা এখনও ঝুলছে বাইরের গেটে। অথচ ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি আর রইল না। এই নিয়ে ক্ষোভ, আক্ষেপ সকলের৷

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য ছিলেন৷ তাঁর ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে একটি বাড়ি করেছিলেন৷ সেই বাড়িতে বেশ কিছুদিন ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর নামানুসারেই শান্তিনিকেতনের ওই জায়গার নাম হয় 'অবনপল্লী'। সেই ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিবিজড়িত 'আবাস' নামের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হল। এই প্রসঙ্গে বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, "আমরা তো সেই সময় কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম৷ তারপর ভাঙা হয়েছে শুনলাম৷ খোঁজ নিয়ে দেখব, কারা করছে।"

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য ছিলেন৷ তাঁর ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বাড়ি করেছিলেন৷ সেই বাড়িতে বেশ কিছুদিন ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। 

 বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্য ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৪১ সালে কবির প্রয়াণের পর ১৯৪২ সালে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য হয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  

প্রবীণ আশ্রমিকরা ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক৷ জমি ব্যবসায়ীদের কাছে জমির দাম অনেক বেশি অবনীন্দ্রনাথের বাড়ির চেয়ে৷ নতুন কিছু নয়৷ বিশ্বভারতীতে আনন্দ পাঠশালার উল্টো দিকে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর আবাসও ধূলিসাৎ করা হয়েছে একটা সময়৷

জানা গেছে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজো ভাই গিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁর ছেলে গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্ত্রী সৌদামিনী ঠাকুরের ছোট ছেলে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাঁর যোগ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে, কথোপকথন, শিল্পচর্চা প্রভৃতি নিয়ে বহু লেখনী, ইতিহাস রয়েছে। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখকও ছিলেন। চিত্রকলার মধ্য দিয়ে কাহিনী বর্ণিত শকুন্তলা, রাজকাহিনী, ক্ষীরের পুতুল, ভারত শিল্প, নালক প্রভৃতি কালজয়ী বইয়ের স্রষ্টা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

(www.theoffnews.com Abanindranath Tagore residence destroyed)

দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম: 

অনুব্রতদের কখন অক্সিজেন যায়, আর কখন‌ যায় না, এটা চিকিৎসক নয়, দল ঠিক করে দেয়। অনস্বীকার্য যে, অনুব্রত মণ্ডল একজন পুলিশ আধিকারিক অর্থাৎ থানার বড়ো বাবুকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ভাষায় কথা বলেছেন। কিন্তু এর আগে যে উনি বলেননি, এমনটা তো কাউকে বলতে শুনিনি। আর এটা যদি তার প্রথম অপরাধ হয়, দল তার বিরুদ্ধে চটজলদি ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন? 

বিরোধীরা বলছে, ক্ষমা চাইলেই হলো? গণমাধ্যম বলছে, অনুব্রত দিদির ভাই, কোনও ব্যবস্থায় নেবে না পুলিশ। ধীরে রাধে ধীরে! সাত মণ তেল ও পুড়বে, রাধাও নাচবে? কেউ ভাবতে পেরেছিলেন, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করবে? ২০১৪ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর বোলপুর থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে অনুব্রত অনুগামীদের মারধরের ঘটনা ঘটেনি? পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিল? 

একটু ভেবে দেখুন, পুলিশ বলছে কে অনুব্রত ও আইসির ফোনালাপের অডিও ভাইরাল করলো তদন্ত করে দেখবে। কিন্তু ওই দুজনের অডিও ক্লিপস প্রকাশ কে করলো? অনুব্রত? নিশ্চয়ই না। আইসি? এতো কদর্য ভাষায় কথা, নিজের স্ত্রীকে নিয়ে? উচ্চ কর্তারা কী অনুব্রতর ফোন ট্যাপ করে? না, অনুব্রতকে উচিত শিক্ষা দিতে যত অসম্মানজনক হোক এই অডিও ফাঁস? সবটাই অনুমেয়। ছাব্বিশে পুলিশকে আরও কাছে টানতে, রাজনৈতিক বার্তা? স্বর্গের সিঁড়ি ভেঙে চোদ্দো তলায় কী জানা যাবে? 

অনুব্রত মনে পড়ে? শিবপুরে বিরোধীদের জমি বিরোধী আন্দোলনে সটান ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিএসপি কাশীনাথ মিশ্রকে বলে ছিলেন, 'কটা বাজে? ২ ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু খালি না হলে আমি ঢুকে যাব ৷ সব চাড়িয়ে দেব।' পুলিশকে প্রকাশ্যে এই নিদানেও তীব্র বিতর্ক তৈরি হয় ৷ এর পিছনে কোনও নোংরা কথা বার্তা হয়নি মনে করেন? 

২০১২ সালে নানুরের ওসিকে হুমকির পর ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর অনুব্রত মণ্ডলকে রাজ্য গ্রামন্নোয়ন পর্ষদের সভাপতি করা হয় ৷ সেই থেকে লালবাতি ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি৷ ২০১৪ লোকসভা, ২০১৬ বিধানসভা, ২০১৯ লোকসভা, ২০২১  বিধানসভা নির্বাচনে অনুব্রত ম্যাজিকে বীরভূমে ভালো ফল করে তৃণমূল । এই নির্বাচনগুলির প্রচারে গিয়ে কখনও গুড়-বাতাসা, নকুলদানা, কখনও পাচনের বাড়ি, কখনও চড়াম-চড়াম, কখনও শুঁটিয়ে লাল করে দেব, কখনও খেলা হবে বলে সংবাদ শিরোনামে থেকেছেন তিনি৷ নির্বাচন এলেই কমিশনের তাঁর নামে জমা পড়ে একাধিক অভিযোগ। যার জেরে অনুব্রতকে ৩ বার নজরবন্দিও করে নির্বাচন কমিশন৷ ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সভা থেকে 'পুলিশের উপর বোম মারুন, আমি বলছি বোম মারতে, বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিন '- এ ধরনের কথা বলেছেন অনুব্রত। আর তা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য৷ এই মন্তব্যের পরেই ওই রাতে খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ৷ যে মামলায় পরে অব্যাহতি পেলেও একসময় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তখন অনুব্রতকে চার ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ আসেনি। লাল বাতি অঞ্চলের একটা ধারণা আছে, একবার নথ ভাঙতে পারলেই...

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আর যায় করুন, তার একটা কথা মনে পড়ে গেল। অনুব্রত একটু খেয়াল করতে পারতেন- শাসনের মজিদ মাস্টারকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মজিদদের মতো লোককে দিয়ে মানুষ খুন করিয়ে শেষে ছুড়ে ফেলাই সিপিএমের রেওয়াজ!’’ তাহলে কী অনুব্রত জমানার শেষের শুরু? সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করার পর ২০০৩ সাল থেকে জেলা সভাপতি ছিলেন অনুব্রত। এমনকি যখন গরু পাচার ও কয়লা পাচার মামলায় জেলে ছিলেন, তখনও যে কোনও বৈঠকে তার চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। নিজের জেলার বাইরেও অনুব্রত মডেল কাজে লাগাতো দল। অনুব্রতর ছবিও কাজে লেগেছিল ২০২৪ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে। চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরার পর অনুব্রত বুঝতে পারলেন ময়ুরাক্ষী নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। তার গড় আর নেই। অনুব্রত নিজেই বলছেন, বোলপুর আইসি তাঁর অনুসারীদের এফআইআর নিচ্ছে না। এসব কারণেই তার অনুগামীরা ঘর ফিরতে গেলেই মার খাচ্ছে। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে দিয়ে আইসিকে বলতে হচ্ছে, আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করুন। এসবের বিরুদ্ধে দল এখনও পর্যন্ত নিশ্চুপ। রাজনীতিতে না বলা কথা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাকিটা ক্লাইম্যাক্স!

(www.theoffnews.com Anubrata Mondal audio clip phone TMC)


google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0