google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0

গুরুত্বপূর্ণ খবর

google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0

দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

বাঁশি সকলের হৃদয়ে বাজে, সকল হৃদয়ে বিরাজে। তার সুর ধরতে জানতে হয়। বর্ষবরণের এক অভিনব সন্ধ্যায় মিলন বিরহ প্রেম অনাগত দিনে আরও সুখকর বার্তা বয়ে আনুক এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ সংস্কৃতি সন্ধ্যা উপভোগ করলো বড়শাল গ্রাম। শনিবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় বড়শাল দক্ষিণা কালী তলা নাটমন্দিরে গীতাঞ্জলি শিক্ষায়তনের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় গীতিনাট্য "মৃদুল মধুর বংশি বাজে " রাতুল হৃদয়ে বয়ে আনলো বাৎসল্য রস, অন্তিমে মাথুর বিরহরস। অনুষ্ঠানের মূলে সুর বেঁধে দেয় ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে অর্জুন কৃষ্ণ সংবাদে শ্রী গীতার স্তোত্র। যা শেষ পর্যন্ত ছিল অটুট গ্রন্থিল অনিন্দ্য সুন্দর। যন্ত্র অনুষঙ্গ সহচর্যে গীত সঙ্গীত, নৃত্য বিহঙ্গে প্রেম বিরহ, কর্মযোগ অধ্যাত্মিকতার বুননে এক অপূর্ব গীতিনাট্য উপহার দিলো গীতাঞ্জলি শিক্ষায়তন ও তার কলাকুশলীরা। গীতাঞ্জলি শিক্ষায়তনের কর্ণধার প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায় ও রজত মুখোপাধ্যায় জানান, "ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব, গোঠ পর্ব, রাস, কংস বধের আগে বৃন্দাবন ত্যাগ বাৎসল্য, মাথুর বিরহ রস এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিবেশন করতে পেরে আমরা ধন্য। আমাদের সকলের চলার পথ সুমসৃণ হোক এই টুকুই প্রার্থনা। অনুষ্ঠানে মোট চব্বিশটি সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনায় সমগ্র নাটিকা সার্থক হয়ে ওঠে। গ্রামের  বাসিন্দারা ছাড়াও অনেক অতিথি এসেছিলেন শহর থেকে। তাঁরা জানান, বিরতি বিহীন সঙ্গীত নৃত্যের মূর্চ্ছনায় আবেগের ঝড় তুলেছে সঙ্গীত শিল্পী থেকে নৃত্য শিল্পীরা। কবিতার সহজপাঠের কলাকুশলীদের আবৃত্তি পাঠ ও তার কর্ণধার তথা অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়।

(www.theoffnews.com Birbhum cultural programme)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

ধর্মনিরেপেক্ষতা? উঁহু! কোনও মহারাজা দেননি। আফ্রিকা থেকে সিপলিফটেড আমাদের জন্য পাঠানো তোফা ধর্মনিরেপেক্ষতা নয়। যুগ যুগ ধরে  দেশের মাটি এই ধর্মনিরেপেক্ষতা ধারণ করেছে, পোষণ করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে যতই ফতোয়া আসুক, অন্তত রাতে যদি সবাই লুকিয়ে চুরিয়েও এই ধর্মনিরেপেক্ষতার জিরাফকে দেখতাম, কেমন হতো? 

পদাতিক কবির কাব্য নিয়ে বোধহয় আমাদের জীবন চলে না। জীবন চলে অন্য খাতে। তাই আমরা ধর্মেও নেই, জিরাফেও নেই।

য ধৃতি স ধর্ম। আজকে ধর্ম ধারণ করে সাম্রাজ্যবাদ। হয় তুমি আমার ধর্মের, না হলে তুমি বিধর্মী, আমার শত্রু। প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মাচারীদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দর সেই "ইউনিভার্সাল একসেপ্ট্যান্স, টলারেন্স" চেতনা বোধ অদৃশ্য। কারও বেশি, কারও কম, বা কারও সেটা আছে, এই টুকুই তফাৎ বা মিল। অন্যকে অস্বীকার করার এতো তীব্রতা, মনুষ্য মাত্রই সম্ভব। যাক, এগুলো আমরা সবাই জানি।

আমার যেটা জানি, কিন্তু বুঝি না বা বুঝি কিন্তু জানতে চাই না কিম্বা বুঝতে চাই না- সেটা বলা যাক।

যে কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে একদল আছে তুলনামূলক কম বা বেশি বা আদৌ নেই, তারা ভাঙচুর, লুঠপাট ও খুন জখমে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের মধ্যে বা অন্যের মধ্যে সেগুলোতে সরাসরি অংশগ্রহণ করে বীরত্ব প্রকাশ করে। আরেকদল আছে, তারা দূরে থেকে কুযুক্তি বা অযৌক্তিক যুক্তি দেখিয়ে সেই অপরাধ গুলোকে আড়াল করার চেষ্টা করে। সেটা কিভাবে করে?

১) ভিকটিম কার্ড। ২) বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে। ৩) সম্প্রদায় আইডেন্টিটি ঢেকে বলে, ধর্ম বলবেন না, বলুন মানুষ করেছে। ৪) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে। ৫) অন্য রাজ্যের, অন্য দেশের সুদূর অতীতের কোনও ঘটনা উদ্ধৃত করে সাম্প্রতিক অন্যায়কে জাস্টিফাই করে। ৬) সবই গুজব মিথ্যা বলে ধামাচাপা দিয়ে। ৭) বিভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি করে। সেটা তাদের সম্প্রদায় কতো ভালো তার দূর দূর ঘটনা দেখিয়ে। বা ফলস ন্যারেটিভ বানিয়ে অপপ্রচার করে। একটা ভালো ঘটনা দেখিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভে কোনও লাভ হলে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু যখন যে রোগ তার উপসর্গ অবজ্ঞা করে, কোনসময় তার শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল বা অন্য কোথাও কোনও ব্যক্তি সুস্থ আছে সেই আলোচনায় রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রোগ নিরাময় হতে পারে না। অর্থাৎ যে রোগ ধরা পড়েছে, সেটা রোগ। তার নিরাময়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মকে ভিত্তি করে কোনও সম্প্রদায় একজোট হলে, স্বাধিকার। আর অন্য কোনও সম্প্রদায় একজোট হলে সাম্প্রদায়িক, এটা বেশি দিন চলতে দিয়ে দেখুন, আখেরে কী লাভ হয়? ৮) সম্প্রদায় ভিত্তিক ন্যারেটিভে সফট টার্গেট কারা? উত্তর একটাই। যারা ঐক্য বদ্ধ নয়। এখন প্রশ্ন, ঐক্যবদ্ধ না হতে দেওয়া কাদের কৌশল?

ক) ধর্মভিত্তিক রাজনীতি:-১) একটি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল যারা হিন্দুধর্ম, তার রীতিনীতির সমালোচক। সেক্ষেত্রে ধর্ম "আফিম" মতের তারা প্রবর্তক। তারা হিন্দু ধর্মে কুসংস্কার খোঁজে। আবার ইসলাম,  খ্রীষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মে তাদের অবাধ প্রেম। ২) অন্য আরেকটি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল দেখায় তারা হিন্দু ধর্ম প্রেমী। তবে সেটা সেই রাজনৈতিক দল দ্বারা স্বীকৃত বা পালিত হতে হবে। বাদবাকি সাম্প্রদায়িক ও দাঙ্গাবাজ। সেই দল রাম নবমীতে মুসলিমদের দিয়ে হিন্দুদের পানীয় খাওয়াবে। ফটো শেসন হবে। ক্যাপশন থাকবে- "ভালো মুসলিম হিন্দুদের ঘৃণা করে না। ভালো হিন্দু মুসলিমদের ঘৃণা করে না।" অর্থাৎ যেটুকু হয় ব্যতিক্রম। না হলে আরও বেশি হতো। থাকতে পারতো না। ইত্যাদি। কেউ বলবে, শিক্ষা নেই, বেকারত্ব তাই এসব হচ্ছে। অর্থাৎ বেকারত্বের জন্য হিন্দুরাই দায়ী? হিন্দু দেবদেবী দায়ী?  তাহলে বেকারত্বের কথা আসছে কেন? স্বজাতি ও স্বধর্মের প্রতি এই ধার্তরাষ্ট প্রেম যত দেখা যাবে, তত প্রশস্ত হবে ধর্মের বিস্তৃতি। ৩) আরেক আপাত নির্দল দেখাবে তারা অরাজনৈতিক। তারা বলবেন, একসাথে বড়ো হলাম, কোনও দিন হিন্দু বা মুসলিম কি জানলাম না। এখন জানছি। হিন্দু মুসলিম করবেন না। বলুন মানুষ। বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা সব কিছু ছেড়ে প্রাণ টুকু নিয়ে আসতে পেরেছিল, তাদের দুই একজনকে বলতে শুনেছি, "পরিচিতরা রাতে চুরি করতে এসেছে। বাড়ির সবাইকে সাবধান করে বলেছি, "মানুষ" এসেছে রে। সাবধানে থাকিস। সাহস করে চোর বলতে পারিনি। তাহলে দল বেঁধে এসে চোর বলার অপরাধে সব লুঠ করে নিয়ে যাবে।" এদেরই কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের জিকিরে আজ ইলিশের সইতুতো সম্পর্কে বলবে, "সব মানুষ সমান না। আমি ধর্ম মানি না।" নিজের টাকে মানি না বলা সহজ। অন্যেরটাকে সমীহ না করলে কল্লা যাবে যে। ৪)  আরেক আপাত উদারনৈতিক বলবে, আমি নামায পড়ি না। সব হিন্দুদের অনুষ্ঠানে যায়। তারা কিন্তু অনেকটা এক রাজনৈতিক দলের মতো। সারা বছর নিন্দা করবে। কিন্তু আইন পাশের সময় ভোটাভুটিতে জয়েন না করে, তাদেরই পাশ করিয়ে দেবে। কিছু ভালো মানুষ দেখবে এই উগ্র লোক আমাদের সম্প্রদায়ের তো ক্ষতি করছে না। যাগগে এসব ভেবে লাভ নেই। তারপর? যেখানে হিন্দু নেই! তারা খুব সুখে আছে তো? সুখে থাকতে পারলেই ভালো। ৫) আরেক দল আছে যাদের বদনাম, হিন্দুত্বের ঠিকাদার বলে। যখন পুলিশ কিছুই করতে পারলো না। রতনপুরে মা শীতলার মূর্তি ভাঙলো, বাড়ি ঘর পুড়লো, দোকান লুঠ হলো, হিন্দুদের ঘর ছেড়ে পালাতে হলো, দুই মৃর্তির কারিগর   হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে কুপিয়ে খুন করা হলো, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হিরন্ময় নীরবতার মধ্যে, তখন সেই ধর্মের ঠিকাদার দলের কয়েকজন আদালতে গিয়ে সেন্ট্রাল ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট অর্ডার নিয়ে এলো। না হলে হয়তো এই ওয়াকফ কাণ্ডে আরও হিন্দুদের বেঘোরে প্রাণ যেত। বলুন তো

ওয়াকফ বিলের সঙ্গে দূর দূর পর্যন্ত এই অনভিপ্রেত ঘটনার কোনও সম্পর্ক আছে? যদি কোনও "জিরাফ" আমাকে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক দেখাতে পারে, আমি তাকে সালাম জানাবো। বিশ্বাস করতে হবে বেকারত্বর জ্বালায় এসব করতে হয়েছে? ভাতের জন্য এসব করেছে? কই টার্গেট তো ভুল হয়নি। টার্গেট ভুল হয়নি পাকিস্তান আদায়ে, কাশ্মীর দখলে টার্গেট ভুল হয়নি। বাংলাদেশে যেমন টার্গেট ভুল হয় না। ভবিষ্যতে প্যালেস্টাইনে ইজরাইল আক্রমণ করলে এখানে হিন্দুদের ভুগতে হবে না, এমন আশঙ্কা অনেকের দূরাশা হলেই মঙ্গল। ছেচল্লিশে দাঙ্গার সময় বলা হয়েছিল, এখানকার বাঙালি মুসলিমের দোষ ছিল না, পশ্চিমা মুসলিমরা উস্কে ছিল। উস্কালে, নিজের ঘরে তো কেউ আগুন দেবে না। ওয়াকফ তো বাহানা হয়ে গেল। ছেচল্লিশে একই বৃন্তের দুটো কুসুমের বিনা প্ররোচনায় দাঙ্গা আগেও অনেকে দেখেছে। ইংরেজি ২৫ সালে আমরা দেখলাম।

(www.theoffnews.com riots)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

অল ইণ্ডিয়া রাঙ্ক ওয়ান পেল ডিফেন্স একাডেমীতে বোলপুরের ইমন ঘোষ। নিজস্ব অফিসিয়াল ট্যুইটারে তার উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "ভীষণ খুশি এবং গর্বিত এটা জেনে যে আমাদের বীরভূম জেলার ছেলে ইমন ঘোষ ডিফেন্স একাডেমি ২০২৪ যেটা ইউপিএসসি কন্ডাক্ট করে এখানে সর্বোত্তম স্থান অর্জন করেছে। ফলাফল সদ্যই প্রকাশিত হয়েছে এবং এই কিশোর একজন বোলপুর নিবাসী ইন্ডিয়ান আর্মির অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদারের পুত্র, এই গৌরব আমাদের সকলের জন্য সে নিয়ে এসেছে।"

উল্লেখ্য, অতি সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই তালিকাতে কোনও পরীক্ষার্থী এই সর্বোচ্চ তালিকায় স্থান পায়নি। ইমন জানিয়েছে, সে প্রথম দশের মধ্যে রাঙ্ক করবে ভেবেছিলো। ভাবেনি, রাঙ্ক ওয়ান হবে। ইমনের মা গার্গী ঘোষ একজন গৃহবধূ। তিনি জানান, বদলির চাকরির কারণে বিভিন্ন জায়গায় তাকে পড়তে হয়েছে। বরাবর ডিফেন্স একাডেমীতে লক্ষ্য ছিল। এখন পুণেতে আছে। ওকে ছাড়া আমরা এই আনন্দ উপভোগ করতে পারছি না। 

দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র বোলপুর নিবাসী ইমন ঘোষ 'রাষ্ট্রীয় ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ' থেকে অল ইন্ডিয়া পরীক্ষায় প্রথম রাঙ্ক করেছে। এই পরীক্ষা নেয় ইউপিএসসি। আর আইএমসির মতো এক সুযোগ্য মিলিটারি প্রতিষ্ঠানের সফল ছাত্র ক্যাডেট ইমন ঘোষ।   

বীরভূমের বোলপুর নিবাসী ইমন ঘোষ আর্মি পরিবারের ছেলে। তার বাবা হাবিলদার উজ্জ্বল কুমার ইন্ডিয়ান আর্মি থেকে অবসরপ্রাপ্ত। মা গার্গী ঘোষ একজন গৃহবধূ। তার বাবার কর্মসূত্রে বদলির কারণে ইমন বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে, সবশেষে সাইনিক স্কুল কুঞ্জপুরা,হরিয়ানাতে ভর্তি হয় এবং পরবর্তীতে আর আইএমসি, দেরাদুনে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় অষ্টম শ্রেণীতে।

(www.theoffnews.com Birbhum)

 

সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবরডাঙ্গা পৌর টাউন হলে খাঁটুরা শিল্পাঞ্জলি আয়োজিত রং সংস্কৃতি উৎসব ২০২৫ অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানের সূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সন্মাননা প্রদান, পুতুল নাটক, পুতুল নাচ, নৃত্যনাট্য, মূকনাটক এবং আরও নানা আকর্ষণীয় পরিবেশনা।

কনিকা দাসের গাওয়া মঙ্গল গীতি দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পৌর পিতা শঙ্কর দত্ত, শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, সংস্কার ভারতীর প্রান্ত সম্পাদক পদ্মশ্রী গোকুল চন্দ্র দাস, যুব পুরস্কার প্রাপ্ত সোমা দাস এবং গঙ্গারিডি পাপেট থিয়েটারের পরিচালক প্রদীপ সরদার। ঐতিহ্যবাহী বেণী পুতুল নাচের মাধ্যমে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। মঙ্গল দীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অতিথিরা উৎসবের সূচনা করেন। সংস্থার শিক্ষিকা এবং শিল্পীরা অতিথিদের মানপত্র এবং উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান। অতিথিরা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিল্পাঞ্জলির পুতুল নাট্যচর্চার এবং ৩৮ বছরের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

শিল্পাঞ্জলির ভরতনাট্যম এবং কত্থক বিভাগের ছাত্রীরা মনোমুগ্ধকর নৃত্যনাট্য উপস্থাপন করেন। আমন্ত্রিত মূক নাটক "উত্তরা রা" পরিবেশন করেন আগরপাড়ার সোমা মাইম থিয়েটার। আমন্ত্রিত নৃত্যনাট্য "রাধা কাহিনী" পরিবেশিত হয় বসিরহাটের অনয় ডান্স ট্রুপের পক্ষ থেকে। ঐতিহ্যবাহী দণ্ড পুতুল নাচ উপস্থাপন করেন প্রদীপ সরদার।

শিল্পাঞ্জলি প্রযোজিত সুতোপুতুল নাটক "অথঃ পাদুকা কথা" পরিবেশন করেন সংস্থার পুতুল নাট্য বিভাগের শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "জুতা আবিষ্কার"-এর ভিত্তিতে এই পুতুল নাটকটি রচনা করেছেন শঙ্খব্রত বিশ্বাস। নাটকের পরিচালনা করেন সোমা মজুমদার এবং প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন দীপালি বিশ্বাস। পুতুল সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমনাথ সিনহা, তাপস কর্মকার, তানিয়া সরকার, রাহুল অধিকারী, অমিত দাম, সুনন্দা বিশ্বাস, রোহিত সাহা এবং সোমা মজুমদার।

উপস্থিত দর্শকদের উপস্থিতি প্রেক্ষাগৃহকে পূর্ণ করে তোলে। সংস্থার সম্পাদক মলয় বিশ্বাস অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে রং সংস্কৃতি উৎসব ২০২৫-এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

(www.theoffnews.com puppet show Gobordanga)


সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

খাটুরা শিল্পাঞ্জলি'র ব্যবস্থাপনায় প্রীতিলতা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বালক বিভাগ ) অনুষ্ঠিত হলো পুতুল  নাট্য বিষয়ে সেমিনার ও পুতুল নাট্য কলার প্রদর্শন। সেমিনারের বিষয় ছিল 'শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পুতুলনাট্য কলার ব্যবহার ও গুরুত্ব।' অতিথি  হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশীষ চক্রবর্তী প্রধান শিক্ষক প্রীতিলতা বয়েজ, অশোক পাল প্রধান শিক্ষক ইছাপুর হাই স্কুল, দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় প্রধান শিক্ষক খাটুরা বয়েজ স্কুল, অভিক ভট্টাচার্য শিক্ষক গবেষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সুশান্ত পাল শিক্ষক খাটুরা বয়েজ স্কুল। শিল্পাঞ্জলির শিল্পী কণিকা দাস মঙ্গলগীতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। সঙ্গতে ছিলেন মুকুল দাস। শিল্পাঞ্জলির পক্ষ থেকে সম্মানীয় অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। মঙ্গলদীপ প্রজ্বলন  করেন অতিথিবৃন্দ। শিল্পাঞ্জলীর শিল্পী সোমা মজুমদারের সঞ্চালনায় মূল আলোচনা পর্ব শুরু হয়। প্রত্যেক বক্তার কথাতেই উঠে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যক্রমকে আরও আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় করতে তুলতে পুতুল শিল্পকলার  ইতিবাচক ভূমিকার কথা। দৃশ্য শ্রাব্য ব্যবস্থাপনার সাথে পুতুলের মত আকর্ষণীয় বিষয় কঠিন, জটিল পাঠক্রমকে কত সহজভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরা সম্ভব পুতুল শিল্পকলার মাধ্যমে এই বিষয়ে সোমা মজুমদারের বক্তব্যকে সকলে স্বাগত জানান। আলোচনা পর্বে শেষে শিল্পাঞ্জলীর পুতুল শিল্পকলার শিল্পী সোমা মজুমদার, তানিয়া দাস, তাপস কর্মকার, শরণ্যা বিশ্বাস, রাহুল অধিকারী প্রমূখ বিভিন্ন পুতুলের প্রদর্শনী করে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখান। শিল্পাঞ্জলির অভিভাবিকা দিপালী বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে সমস্ত বিষয়টি পরিচালিত হয়। শিল্পাঞ্জলি সম্পাদক মলয় বিশ্বাসের ভাষণে সমগ্র দিনের অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।

(www.theoffnews.com puppet show Shilpanjali)

 

দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

পথেই আলাপিনী সমিতির বসন্ত উৎসব উদযাপন।একদিকে বেদনা বিধুর। বেদনা বিধুর এই কারণে ২০২১ সাল থেকে তারা গৃহহীন। কবি পত্নী স্মৃতি বিজড়িত মৃনালিনীর নতুন ঘর থেকে নির্মম ও অন্যায় ভাবে তদানীন্তন বিশ্বভারতী প্রশাসনিক নির্দেশে বিতাড়িত হন। আরেক দিকে আশার কথা। ফুল, পাতা মনে জাগায় সেই আশা। ১৯১৬ সালে কবি জ্যেষ্ঠ দ্বীজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই আলাপিনী মহিলা সমিতির প্রতিষ্ঠা করেন। 

আলাপিনী মহিলা সমিতির সদস্যা শর্মিলা রায় জানান আলাপিনী মহিলা সমিতির পূর্বাপর ইতিহাস। কিভাবে মনোরমা দেবী, কিরণবালা সেন প্রমুখ মিসেস গ্ৰীনের কাছে ধাত্রীবিদ্যা শিক্ষা লাভ করে গ্ৰামে গ্ৰামে প্রসূতি মায়েদের সেবা শুশ্রুষা করতেন। ১৯৫৩ সালে আনন্দ পাঠশালার আবির্ভাব আলাপিনী সমিতির হাত ধরে বললে অতিশোয়ক্তি হবে না। তাদের দেখাশোনাও করতেন সদস্যারা। 

আগে শান্তিনিকেতনে  আনন্দপাঠশালার সামনে নাচ, গান ও পাঠের মধ‍্য দিয়ে আলাপিনী সমিতির বর্ষামঙ্গল, বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠানের মধ‍্য দিয়ে প্রকৃতিকে আহ্বান জানাতো। এখন সেই কাজ ধারাবাহিক ভাবে করে থাকে আলাপিনী সমিতি। 

এক সদস্যা বলেন, মূল বিষয় হলো, আমরা কোনও অধিবেশন বন্ধ করি না। প্রতিবারই এই আশা নিয়ে থাকি, এবার আমরা আমাদের ঘরটা ফিরে পাব। এবারও স্থায়ী উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ সদ্য দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর কাছেও আমাদের আশা থাকবে। আলাপিনী সমিতি কোনও দিন কারও কোনও ক্ষতি করেনি, করেও না। বরং অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। 

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর আলাপিনী মহিলা সমিতির সভাগৃহ বন্ধ করে দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেরণা ও দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষ অধিক পুরাতন একটা প্রতিষ্ঠান, যার সাময়িক পত্রিকা ‘শ্রেয়সী’ প্রকাশের বয়স শতবর্ষ অধিক, তার প্রবীণ  সদস্যাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে বিশ্বভারতীর গেটের সামনে। ঐতিহ্যবাহী খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরেই চলতো তাঁদের মাসিক দুইবার অধিবেশনের কাজ। ১৯৫৬ সালে বিশ্বভারতীর উপাচার্য তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ছিলেন এই সমিতির সদস্যা। শুধু তাই নয়, কবিপত্নী মৃণালিনী ও নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের মা অমিতা সেনের মত বিশিষ্টজনেরা বিভিন্ন সময়ে এই সমিতির সদস্য পদ অলংকৃত করেছেন। ১৯১৬ সালে জন্মলাভ করা এই সমিতি বন্ধ করে দেওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছেন সমিতির বরিষ্ঠ সদস্যারা। আজ তাঁরা গৃহহীন।

(www.theoffnews.com Shantiniketan dol utsav Alapini Samiti)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

করোনাকাল থেকে রবীন্দ্র আশ্রম ছিল অবরুদ্ধ, অপ্রবেশ্য। এবার থেকে পর্যটকরা আশ্রম ক্যাম্পাসে ঘুরতে পারবেন। নতুন উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ শান্তিনিকেতনে কাজে যোগ দিয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন অচলায়তনের বিরুদ্ধে। প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলে সেই অচলায়তন পরিপূর্ণতা পায়। কার্যত এক দূর্গের রূপ পায়। নতুন উপাচার্য এসে সেই অচলায়তন ভেঙে দিলেন বলে মনে করছেন প্রবীন আশ্রমিকরা। সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুপ্রিয় ঠাকুরের মত প্রবীন আশ্রমিকরা স্বাগত জানান। সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্তমান উপাচার্য এবং আমি একই এগ্রিকালচারাল কলেজের ছাত্র। তিনি আমার থেকে দশ বছরের জুনিয়র। খুব ভালো লাগছে, তিনি এই কথা বলেছেন। পর্যটনকে এই হেরিটেজ সাইটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পাঁচিল দিয়ে অবরুদ্ধ করা সহজ। কিন্তু রবীন্দ্র ভাবনার উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন। ছাত্রদের যেমন এখানে রবীন্দ্র স্টাডিজ পড়তে হয়। কিন্তু যারা এখানে বাইরে থেকে পড়াতে আসেন, তাদেরকে পড়তে হয় না। একথা প্রাক্তন উপাচার্য সুজিত বসুকে বলেছিলাম। সব থেকে যেটা দরকার উপযুক্ত পরিকাঠামো। পর্যটকদের জন্য পার্কিং ব্যবস্থা, বাথরুম। কোথায় পার্কিং হবে, কোথায় হবে না তার নোটিশ দরকার। নোংরা হবে বলে, কাউকে ঢুকতে দেব না, তালা মেরে দেব, এটা সহজ কথা। হেরিটেজ সাইট মানুষকে দেখতে দিতে হবে। ৬ বছর পর পর্যটকদের জন্য খুলে গেল বিশ্বভারতীর সমস্ত এলাকা। তাতে বিভিন্ন মহলে খুশির হাওয়া। 

শুক্রবার শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটক পাপিয়া সাঁতরা এবং বৈশাখী সর্বজ্ঞ বলেন, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। আরও আগে হলে ভালো হতো। আমরা সব কিছু ঘুরে দেখতে চাই। 

২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এই 'হেরিটেজ' তকমা রক্ষা করতে অতি সতর্ক বিশ্বভারতী এতদিন পর্যটক থেকে সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল। এবার সবার জন্য আশ্রমের দরজা উন্মুক্ত হলো। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি যথাযথ থাকবে।

শুক্রবার "শান্তিনিকেতন আ ইউনেসকো ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট, ট্যুরিজম" বিষয়ে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাপানের ভারপ্রাপ্ত কনসুল জেনারেল আসিদা কাসশুনরি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মীর আব্দুল সফিক সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্টজন। এদিনও স্থায়ী উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, একটি পরিকল্পনা করে হেরিটেজ সাইটের সঙ্গে ট্যুরিজম লিংক আপ করা হবে। অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। তবে রবীন্দ্র ভাবনা তাঁর আদর্শ এবং স্থান ঐতিহ্যকে মানুষের কাছে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে আশ্রম উন্মুক্ত করা হবে। গত পরশু জয়েন করে আমি জানিয়ে দিয়েছি। অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বা অতীতের মতো যে তিনি চলবেন না, তাঁর প্রথম সিদ্ধান্তে তিনি তা বুঝিয়ে দিলেন। স্বাভাবিক ভাবে বিশ্বভারতী তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে। 

উল্লেখ্য,  উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স আশ্রমের হৃদয়ঘর। এখানে আছে শ্যামলী, কোনার্ক, পুনশ্চ, উদীচি এবং উদয়ন। এই কমপ্লেক্সে উদয়ন এবং কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ তৈরী গুহাগৃহ আছে। তিরিশের দশকে তৈরী এই বাড়িগুলির প্রতিটির আলাদা বিশেষত্ব আছে। পর্যটক দেখবে, জানবে কেমনভাবে প্রকৃতির কোলে উন্মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা দান হতো।

(www.theoffnews.com Viswa Bharati University Shantiniketan)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

"নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল, বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল..." 

বুধবার সকালে সকলে যখন আবীরের রঙে মেতে উঠেছে, শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ির জঙ্গলে তিল ধারণের ঠাঁই নাই, তখন, শান্তিনিকেতনের অদূরে প্রকৃতিকে ভালোবেসে "অন্যরকম" বসন্ত উৎসব ও বর্ষ বরণ পালনের সাক্ষী থাকলো মানুষ।

বসন্ত পূর্ণিমার এই দিনে, সকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথের গান আর মাদলের তালে, বোলপুরের মুলুকে স্বাধীন ক্যাম্পাসে, নেচে উঠলো গোটা এলাকা। সামিল হলেন গ্রামীণ আদিবাসী থেকে কলকাতার নাগরিক জীবনে অভ্যস্থ সকলে।

সৌজন্যে, শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং Positive বার্তার যৌথ উদ্যোগে, স্বাধীন ট্রাস্ট, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিডিয়া ফোরাম, অল বেঙ্গল প্রাইভেট নার্সিং হোমস এন্ড হসপিটালস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় আয়োজিত বাহা উৎসব (ফুলের উৎসব) ও বসন্ত বরণ এর মাধ্যমে তাদের বর্ষবরণ উৎসব।

ঋতুরাজ বসন্ত তার রূপের ডালি উজাড় করে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে। রঙে, রসে, গন্ধে ভরে ওঠে - সেজে ওঠে এই প্রকৃতি। বসন্ত পূর্ণিমার অবকাশে সারা দেশ মেতে ওঠে বসন্ত বন্দনায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে থাকে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান। যদিও শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়। সেভাবেই নিজেদের পরম্পরা মেনে বসন্ত বন্দনা করার রীতি রয়েছে আদিবাসী সমাজেও। যার নাম - বাহা পরব বা ফুলের উৎসব।

আদিবাসী পরম্পরা অনুসারে এই বাহা পরবে তারা শাল ফুল নতুন শালপাতায় রেখে নিবেদন করে তাদের দেবতার কাছে। প্রকৃতির কাছে ঋণ স্বীকার করে তারা। এই বাহা পরবের পরেই প্রকৃতির নতুন ফুল, ফল এবং পাতাকে নিজেদের জীবনে গ্রহণ করে থাকে আদিবাসী সমাজ।

এই উৎসব শুধু রঙের ও সৌন্দর্যের নয়; এটি প্রকৃতির সঙ্গে আদিবাসীদের নিবিড় যোগের প্রতীক। বাহা উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে তারা যেমন প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সেভাবেই তারা আদিবাসী সমাজের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাহা উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আদিবাসী সমাজ যেন তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত না হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রথীন কিস্কু জানান, "নতুন শাল ফুল ও শাল পাতা এবং জল দিয়ে আমরা এই বাহা পরব উদযাপিত করি। এই উৎসবের পরেই আমরা প্রকৃতির নতুন ফুল ফল পাতা নিজের জীবনে গ্রহণ করি। এই উৎসবে আমরা প্রকৃতির কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার করি। আমরা সেটাই সর্বজনীনভাবে উদযাপন করার উদ্যোগে সকলে এক সাথে আজ আনন্দে মেতে উঠেছি।”

বাহা উৎসব উপলক্ষ্যে আদিবাসী সমাজের ধর্মীয় প্রতিনিধি সহ বহু বিশিষ্টজনকে সম্মাননা জানানো হয়। এইদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অধ্যাপক ডাঃ সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডিন ডাঃ অয়ন গোস্বামী, বিশ্ব বাংলা কেবল নেটওয়ার্কের সভাপতি তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিডিয়া ফোরামের আহবায়ক শঙ্কর মণ্ডল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কানন হাঁসদা সহ আর অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাপতি মলয় পীট বলেন, "আমরা আদিবাসীদের এই বাহা উৎসবের মাধ্যমে সর্ব ধর্মের মেলবন্ধন করে সামাজিক উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছি। সেই সঙ্গে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব ঘিড়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তার থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে উৎসবের আমেজ ভাগ করে নিতে চাইছি।"

বাহা উৎসব (ফুলের উৎসব) ও বসন্ত বরণ এর মাধ্যমে বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষ্যে সারা দিন ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করা হয়।

(www.theoffnews.com Baha utsav Shantiniketan)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

মায়ের মরা মুখ দেখে, যে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়, তার মতো অভাগাজন কে বা আছে!

সব কিছু ঠিক ঠাক চলছিল। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে, পরীক্ষা ছাড়া আর কোনও কিছু তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। জীবনের এতবড়ো পরীক্ষা, ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাস তার জন্য বোধ হয় অপেক্ষায় ছিল। রূপঙ্কর ভাদুড়ি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোমবার ছিল দর্শনের পরীক্ষা। বিনুরিয়া নীরদ বরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল সে। ‌পরীক্ষা কেন্দ্র বোলপুরের বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়। মৃতার নাম অঞ্জু ভাদুরি (৪৫)।  নিত্যদিনের মতো সকালে উঠে ঘরের কাজ সারেন বীরভূমের বোলপুর সংলগ্ন রূপপুর গ্ৰামের গৃহবধূ। একমাত্র সন্তান পরীক্ষা দেবে। তাই রান্না করছিলেন। হঠাৎ তাঁর বুকে ব্যাথা ওঠে। মাটিতে শুয়ে পড়েন তিনি। তাঁর মাথায় জল ঢালা হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। 

বাবা বিপদতারণ ভাদুড়ি একজন প্রান্তিক চাষি। তিনি জানান, কোনও অসুখ ছিল না। হঠাৎ সব কী হয়ে গেল। পরীক্ষার্থীর জ্যেঠু মধুসূদন ভাদুড়ি বলেন, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সব কিছু ঘটলো। ছেলেটি তো মাটিতেই মায়ের কাছে শুয়ে পড়ে। পরীক্ষা দেবে না বলছিল। তারপর স্কুলের মাস্টারমশাইরা এসে তাকে বোঝানোর পর সে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়। মায়ের মৃতদেহ পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল অনেকক্ষণ। প্রায় দুই ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে রূপঙ্কর বাড়ি ফিরে মায়ের শেষকৃত্যের কাজ সম্পন্ন করে। মাকে শেষ বিদায় জানায়। 

বিনুরিয়া নীরদ বরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা দাস রায় বলেন, এমন মর্মন্তুদ ঘটনা যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ঘটনাটা জানার পরই দুই জন সহ শিক্ষক স্কুলের তরফে ছাত্রটির বাড়ি যান। তাঁরাই তাকে বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজি করান। সে পরীক্ষা দিয়েছে। আমি হলে পারতাম না। তার সাহসের তুলনা হয় না। আমি তাকে কুর্ণিশ জানাই। তার পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে আমরা অপেক্ষায় ছিলাম এবং তার সঙ্গে তার বাড়িও যায় শিক্ষকেরা। 

পরীক্ষা কেন্দ্র বোলপুরের বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তথা সেন্টার ইন চার্জ শুভ্রা ঘোষ বলেন, ছেলে পরীক্ষা দেবে। তারজন্য মা ভাত রান্না করছেন। এমন সুস্থ স্বাভাবিক মা এভাবে অসময়ে হঠাৎ চলে গেলেন। সেই দু্ঃখ নিয়ে দুই ঘন্টা পরীক্ষা দিয়েছে সে। আমরা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছিলাম। সে রাজি হয়নি। সবার সাথে পরীক্ষা দিয়েছে। এবং ভালো পরীক্ষা দিয়েছে। 

 উল্লেখ্য, সামনে এখনও অনেকগুলো পরীক্ষা আছে। পরীক্ষার্থীর বাবাও ঘটনার আচম্বিতে কার্যত দিশেহারা। একমাত্র ছেলে মাতৃহারা। তিনি বলেন, ছেলে লিখবে কী করে? ওর মা যে আজই চলে গেল। এই মাতৃশোকের কোনও সান্ত্বনা, বাবার কাছেও নেই।

(www.theoffnews.com mother death examination)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

প্রকৃতির নিয়মই শূন্য স্থান পূরণ করা। প্রতি বছর শান্তিনিকেতনে বসন্ত বরণের মতো প্রকৃতির উৎসবের দিকে চেয়ে থাকে সর্বজনসাধারণ। এক,  বিশ্বভারতী এবং দুই,  সোনাঝুরি হাটে মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণ থাকে। এবার নিয়মের বেড়াজালে দুটোতেই সাধারণ মানুষ বঞ্চিত। কিন্তু তা বলে প্রকৃতি রিক্ত থাকবে? বোধকরি প্রকৃতির এমন অভিরুচি নয়।

এই দুটো উৎসবকে এক আঙ্গিকে হৃদয়ে গ্ৰহণ করে, শান্তিনিকেতনের অদূরে শান্তিনিকেতন ইন্সটিটিউট অফ টেকনলোজি আয়োজন করতে চলেছে বসন্ত সমাগম। আহ্বান উন্মুক্ত সকলের জন্য। 

উল্লখ্য, আদিবাসীরা শালগাছকে বলে সারজম দারি। আর সেই গাছের ফুলকে বলে সারজম বাহা। শাল গাছে ফুল ধরলে শুরু হয় আদিবাসীদের বাহা পরব। দোলের মত রঙের খেলা নয়, জল দিয়ে আর শালফুল দিয়ে এই পরব। জল দিয়ে পা ধুয়ে দেওয়া ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে শালের ফুল দিয়ে শুরু এই বাহা উৎসব। এই সময় বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দিনে শুরু হয় বাহা পরব। ঋতু বন্দনার মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের বর্ষ বরণ। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক পজেটিভ বার্তা। সহযোগিতায় ওয়েস্ট বেঙ্গল মিডিয়া ফোরাম ও অল বেঙ্গল নার্সিং হোম এ্যাণ্ড হসপিটাল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন। আগামী ১৪ মার্চ ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হবে এই অনুষ্ঠান। অংশগ্রহণ করবে ১০টি আদিবাসী নৃত্য দল। ফুল, জল প্রকৃতির রঙ শুধু গায়ে নয়, মনকে রাঙিয়ে নেওয়া। শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়ারাও রঙের বসন্ত বরণে নৃত্য গীতে ভরিয়ে তুলবে-- "রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে--

তোমার আপন রাগে, তোমার গোপন রাগে-।" আদিবাসী সম্প্রদায়, বাঙালি সকলের সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠবে তার পুরাতন ঐতিহ্যে, বলে জানান প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক মলয় পীট।

(www.theoffnews.com Baha festival Shantiniketan Birbhum)


google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0