google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0

গুরুত্বপূর্ণ খবর

google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0


 দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

মুছে গেলো অবন ঠাকুরের বাড়ি। স্মৃতি হিসেবে শুধু থেকে গেলো এলাকার নাম "অবন পল্লী।" শান্তিনিকেতনে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হল প্রখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি। কে বা কারা ভেঙে ফেললো গোটাটাই রহস্য। বোলপুর পুরসভা বলতে পারছে না। একরকম নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বাড়িটি৷ বাড়িটি ভাঙা হতেই শুরু হয়েছিল হই-চই। তার পরেই বোলপুর পুরসভার তরফে কাজ বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ সেই তালা এখনও ঝুলছে বাইরের গেটে। অথচ ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি আর রইল না। এই নিয়ে ক্ষোভ, আক্ষেপ সকলের৷

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য ছিলেন৷ তাঁর ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে একটি বাড়ি করেছিলেন৷ সেই বাড়িতে বেশ কিছুদিন ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর নামানুসারেই শান্তিনিকেতনের ওই জায়গার নাম হয় 'অবনপল্লী'। সেই ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিবিজড়িত 'আবাস' নামের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হল। এই প্রসঙ্গে বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, "আমরা তো সেই সময় কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম৷ তারপর ভাঙা হয়েছে শুনলাম৷ খোঁজ নিয়ে দেখব, কারা করছে।"

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য ছিলেন৷ তাঁর ছেলে অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বাড়ি করেছিলেন৷ সেই বাড়িতে বেশ কিছুদিন ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। 

 বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্য ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৪১ সালে কবির প্রয়াণের পর ১৯৪২ সালে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য হয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  

প্রবীণ আশ্রমিকরা ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক৷ জমি ব্যবসায়ীদের কাছে জমির দাম অনেক বেশি অবনীন্দ্রনাথের বাড়ির চেয়ে৷ নতুন কিছু নয়৷ বিশ্বভারতীতে আনন্দ পাঠশালার উল্টো দিকে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর আবাসও ধূলিসাৎ করা হয়েছে একটা সময়৷

জানা গেছে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজো ভাই গিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁর ছেলে গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্ত্রী সৌদামিনী ঠাকুরের ছোট ছেলে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাঁর যোগ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে, কথোপকথন, শিল্পচর্চা প্রভৃতি নিয়ে বহু লেখনী, ইতিহাস রয়েছে। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখকও ছিলেন। চিত্রকলার মধ্য দিয়ে কাহিনী বর্ণিত শকুন্তলা, রাজকাহিনী, ক্ষীরের পুতুল, ভারত শিল্প, নালক প্রভৃতি কালজয়ী বইয়ের স্রষ্টা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

(www.theoffnews.com Abanindranath Tagore residence destroyed)

দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম: 

অনুব্রতদের কখন অক্সিজেন যায়, আর কখন‌ যায় না, এটা চিকিৎসক নয়, দল ঠিক করে দেয়। অনস্বীকার্য যে, অনুব্রত মণ্ডল একজন পুলিশ আধিকারিক অর্থাৎ থানার বড়ো বাবুকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ভাষায় কথা বলেছেন। কিন্তু এর আগে যে উনি বলেননি, এমনটা তো কাউকে বলতে শুনিনি। আর এটা যদি তার প্রথম অপরাধ হয়, দল তার বিরুদ্ধে চটজলদি ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন? 

বিরোধীরা বলছে, ক্ষমা চাইলেই হলো? গণমাধ্যম বলছে, অনুব্রত দিদির ভাই, কোনও ব্যবস্থায় নেবে না পুলিশ। ধীরে রাধে ধীরে! সাত মণ তেল ও পুড়বে, রাধাও নাচবে? কেউ ভাবতে পেরেছিলেন, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করবে? ২০১৪ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর বোলপুর থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে অনুব্রত অনুগামীদের মারধরের ঘটনা ঘটেনি? পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিল? 

একটু ভেবে দেখুন, পুলিশ বলছে কে অনুব্রত ও আইসির ফোনালাপের অডিও ভাইরাল করলো তদন্ত করে দেখবে। কিন্তু ওই দুজনের অডিও ক্লিপস প্রকাশ কে করলো? অনুব্রত? নিশ্চয়ই না। আইসি? এতো কদর্য ভাষায় কথা, নিজের স্ত্রীকে নিয়ে? উচ্চ কর্তারা কী অনুব্রতর ফোন ট্যাপ করে? না, অনুব্রতকে উচিত শিক্ষা দিতে যত অসম্মানজনক হোক এই অডিও ফাঁস? সবটাই অনুমেয়। ছাব্বিশে পুলিশকে আরও কাছে টানতে, রাজনৈতিক বার্তা? স্বর্গের সিঁড়ি ভেঙে চোদ্দো তলায় কী জানা যাবে? 

অনুব্রত মনে পড়ে? শিবপুরে বিরোধীদের জমি বিরোধী আন্দোলনে সটান ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিএসপি কাশীনাথ মিশ্রকে বলে ছিলেন, 'কটা বাজে? ২ ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু খালি না হলে আমি ঢুকে যাব ৷ সব চাড়িয়ে দেব।' পুলিশকে প্রকাশ্যে এই নিদানেও তীব্র বিতর্ক তৈরি হয় ৷ এর পিছনে কোনও নোংরা কথা বার্তা হয়নি মনে করেন? 

২০১২ সালে নানুরের ওসিকে হুমকির পর ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর অনুব্রত মণ্ডলকে রাজ্য গ্রামন্নোয়ন পর্ষদের সভাপতি করা হয় ৷ সেই থেকে লালবাতি ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি৷ ২০১৪ লোকসভা, ২০১৬ বিধানসভা, ২০১৯ লোকসভা, ২০২১  বিধানসভা নির্বাচনে অনুব্রত ম্যাজিকে বীরভূমে ভালো ফল করে তৃণমূল । এই নির্বাচনগুলির প্রচারে গিয়ে কখনও গুড়-বাতাসা, নকুলদানা, কখনও পাচনের বাড়ি, কখনও চড়াম-চড়াম, কখনও শুঁটিয়ে লাল করে দেব, কখনও খেলা হবে বলে সংবাদ শিরোনামে থেকেছেন তিনি৷ নির্বাচন এলেই কমিশনের তাঁর নামে জমা পড়ে একাধিক অভিযোগ। যার জেরে অনুব্রতকে ৩ বার নজরবন্দিও করে নির্বাচন কমিশন৷ ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সভা থেকে 'পুলিশের উপর বোম মারুন, আমি বলছি বোম মারতে, বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিন '- এ ধরনের কথা বলেছেন অনুব্রত। আর তা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য৷ এই মন্তব্যের পরেই ওই রাতে খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ৷ যে মামলায় পরে অব্যাহতি পেলেও একসময় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তখন অনুব্রতকে চার ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ আসেনি। লাল বাতি অঞ্চলের একটা ধারণা আছে, একবার নথ ভাঙতে পারলেই...

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আর যায় করুন, তার একটা কথা মনে পড়ে গেল। অনুব্রত একটু খেয়াল করতে পারতেন- শাসনের মজিদ মাস্টারকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মজিদদের মতো লোককে দিয়ে মানুষ খুন করিয়ে শেষে ছুড়ে ফেলাই সিপিএমের রেওয়াজ!’’ তাহলে কী অনুব্রত জমানার শেষের শুরু? সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করার পর ২০০৩ সাল থেকে জেলা সভাপতি ছিলেন অনুব্রত। এমনকি যখন গরু পাচার ও কয়লা পাচার মামলায় জেলে ছিলেন, তখনও যে কোনও বৈঠকে তার চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। নিজের জেলার বাইরেও অনুব্রত মডেল কাজে লাগাতো দল। অনুব্রতর ছবিও কাজে লেগেছিল ২০২৪ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে। চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরার পর অনুব্রত বুঝতে পারলেন ময়ুরাক্ষী নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। তার গড় আর নেই। অনুব্রত নিজেই বলছেন, বোলপুর আইসি তাঁর অনুসারীদের এফআইআর নিচ্ছে না। এসব কারণেই তার অনুগামীরা ঘর ফিরতে গেলেই মার খাচ্ছে। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে দিয়ে আইসিকে বলতে হচ্ছে, আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করুন। এসবের বিরুদ্ধে দল এখনও পর্যন্ত নিশ্চুপ। রাজনীতিতে না বলা কথা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাকিটা ক্লাইম্যাক্স!

(www.theoffnews.com Anubrata Mondal audio clip phone TMC)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

এক টুকরো অবসর বিনোদন ও সেলফি জোন শান্তি নিকেতনে। শুধু তাই নয়, টিয়া পাখীদের খুব প্রিয় খাবার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। সেই সূর্যমুখী ফুলের চাষের জন্য ভেবেছেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সুপ্রিয় কুমার সাধু। কাক ভোরে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি আসে সেই বাগানে সূর্যমুখী ফুলের বীজের লোভে। 

সূর্যমুখীর বীজ এক অর্থকরী তৈল্য শষ্য। তা থেকে তৈরি হয় উচ্চমানের খাওয়ার তেল, যা বিশেষ করে হৃদরোগীদের জন্য উপকারী। ফলে বাজারে এর চাহিদাও বেশ ভালো। অথচ সে পথে পা মাড়াননি সুপ্রিয়বাবু। তিনি ভেবেছেন, টিয়া পাখীদের জন্য, মানুষকে দুদণ্ড স্বস্তি দেওয়ার জন্য। ওখানে বসে মনের খোরাক পেয়ে কেউ দু'কলি নজরুল গীতি গুনগুনিয়ে গাইতে পারেন, সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে/দলগুলি মোর রেঙে ওঠে তোমার হাসির কিরণ মেখে।'

সুপ্রিয়বাবু ১৪ কাঠা করে জায়গায় তিনটি পর্যায়ে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। একটি প্লটের ফুল শুকোতে আরম্ভ করলে, পর পর অন্যগুলোতে ফুল ফুটতে শুরু করে। এর ফলে ফুল বন্ধ হয় না।  জানা গেছে, এই চাষে বিশেষ খরচ বা পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না, তবে মাটি প্রস্তুতিতে একটু যত্ন দরকার। জমি ভালো ভাবে চাষ করে আগাছামুক্ত করতে হয়, সারিতে বপন করতে হয় বীজ। প্রতি হেক্টরে লাগে ৮-১০ কেজি বীজ। কিন্তু সেদিকে আপাতত আগ্রহ নেই বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা সুপ্রিয় কুমার সাধুর। তিনি অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তিনি ব্যাবসা করার জন্য এই চাষ করেননি। বরং তাঁর তৃপ্তি তাঁর বাগানে টিয়া পাখি আসে। পর্যটকরা আসে। সেলফি জোন হিসাবে ব্যবহার করে। এটুকুই! তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন অর্থকরী ফসল হিসেবে তিনি এই বাগান কাজে লাগাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সেটা করতে গেলে টিয়াদের আঁটকাতে বাগান নেট দিয়ে ঘিরতে হবে। প্রতিদিন ভোরে প্রচুর টিয়া আসে সূর্যমুখী বীজ খেতে। আপাতত আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। তাছাড়া পাখি ও মানুষের ভালো লাগছে, মানুষ আনন্দ পাচ্ছে। এতেই আমার তৃপ্তি। তিনি জানান, এদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন এই বাগানটি। শুধু পর্যটক নয় এর পাশাপাশি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিত এই বাগানে এসে ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন। সুপ্রিয়বাবু জানান,  তিনি তিনটি ভাগে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি ভাগে প্রায় ১৪ কাঠা জমির উপর এই চাষ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে যে চাষ করা হয়েছিল সেই ফুল বর্তমানে ঝরে গিয়েছে। এখন যে বাগানে ফুল ফুটে রয়েছে সেটি দ্বিতীয় ভাগ। অন্যদিকে এই বাগানের ফুল ঝরে পড়লে তৃতীয় ভাগের বাগানে ফুল ফুটে উঠবে।

মূলত সারা বছরই যেন পর্যটকেরা এখানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন এবং ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন সেই কারণেই তিনটি ভাগে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।অন্যদিকে টিয়া পাখিদের খুব পছন্দের খাবার এটি তাই তাদের কথা চিন্তা করে এই চাষ সুপ্রিয় কুমার সাধু । কৃত্তিকা সরকার জানান, এখানে তিনি প্রায় আসেন। কত পাখি কীট পতঙ্গ আসে। মানুষ জন আসে। কেউ আবার বই হাতে নিয়ে আসে। প্রকৃতির কোলে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করে। বই ও পড়ে।

(www.theoffnews.com sunflower parrot)


কৃষ্ণা গুহ রায়, লেখিকা ও সমাজকর্মী, কলকাতা:  

"মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, 

আমি তোমাদেরই লোক।"

সৃজনশীল শিল্পী ও সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের অধিকারী রবীন্দ্রনাথ প্রথম জীবনে সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চায় ছিলেন আত্মনিবেদিত৷ কিন্তু হিংসা জর্জর পৃথিবীতে মানুষের পাশবিক লোভ, সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদ দুর্বল জাতির ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ফ্যাসিবাদী জঙ্গি আক্রমণ শিল্পীকে শিল্পসৃষ্টির জগতে নিশ্চিন্ত ভাবে বাস করতে দেয়নি। তারই ভাবনার প্রতিফলন দেখি 'বিচিত্রায়।'

সেখানে তিনি বলেছেন, "পৃথিবীময় মানব ইতিহাসের প্রারম্ভ কাল থেকে দেখি একদল মানুষ আরেক দলকে নিচে ফেলে তার উপর দাঁড়িয়ে নিজের উন্নতি প্রচার করে। আপন দলের প্রভাবকে প্রতিষ্ঠা করে, অন্যদলের দাসত্বের উপর। এই দাস নির্ভরতার ভিত্তির উপরে। মানুষের ঐশ্বর্য স্থায়ী হতে পারে না। যাদের আমরা অপমানিত করে পায়ের তলায় ফেলি তারাই আমাদের সম্মুখের পথে পদক্ষেপের বাধা।... তারা গুরুভাবে আমাদের নিচের দিকে টেনে রাখে। যাদের আমরা হীন করি, তারা ক্রমশই আমাদের হেয় করে।"

"যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে। পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।"

প্রথম মহাযুদ্ধের সাম্রাজ্যবাদী তাণ্ডবের বীভৎসতা রবীন্দ্রনাথের বিবেকী চিত্তকে শান্তি স্বর্গে বাস করতে দেয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গেই ১৯১৪ সালে একটি প্রবন্ধে এশিয়া ও আফ্রিকাই যে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির প্রভুত্বের লক্ষ্য এই অভিমত ব্যক্ত করতে তিনি দ্বিধা করেননি। 

১৯১৬ সালে সংগ্রামী কবি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যুদ্ধবিরোধী বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা আমেরিকায় 'Out Look' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ফ্যাসিবাদী যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা কবির হৃদয়কে ব্যথিত, বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। 

সেই মর্ম পীড়ারই প্রকাশ দেখা যায় 'কালান্তরে।' 

"মহাযুদ্ধ এসে অকস্মাৎ পাশ্চাত্য ইতিহাসের একটা পর্দা তুলে দিলে। যেন কোনও মাতালের আব্রু গেল ঘুচে। এত মিথ্যা এত বীভৎস হিংস্রতা নিবিড় হয়ে বহু পূর্বকার অন্ধ যুগে ক্ষণকালের জন্য হয়তো মাঝে মাঝে উৎপাত করেছে। কিন্তু এমন ভীষন উদগ্র মূর্তিতে আপনাকে প্রকাশ করেনি।... চোখের সামনে দেখলুম জালিয়ান ওয়ালাবাগের বিভীষিকা৷ যে য়ুরোপ একদিন তৎকালীন তুর্কিকে অমানুষ বলে গঞ্জনা দিয়েছে। তারই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রকাশ পেল ফ্যাসিজম এর নির্বিচার নিদারুনতা।" 

একদিন জেনেছিলুম আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা য়ুরোপের একটা শ্রেষ্ঠ সাধনা ৷ আজ দেখছি য়ুরোপে এবং আমেরিকায় সেই স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ প্রতিদিন প্রবল হয়ে উঠছে। 

কবিকণ্ঠ উচ্চারিত হল, "হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী। নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব।" 

তবু এ কথা বলতে হয় যারা আজ দুঃখ পাচ্ছে, প্রাণ বিসর্জন করছে তারাই আবার সৃষ্টি করছে। এই ছিন্নবিচ্ছিন্ন অপমানিত জাতিরাই নতুন যুগকে রচনা করছে। 

তাই কবির অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে আসে, "উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই, ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।"

বিবেকের তাড়নায় রবীন্দ্রনাথ অনুভব করেছিলেন, মানুষের হিংসা লোভ যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দুর্বলের উপর সবলের নির্বিবেক অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদের বাণী ফলিত করে তুলতে হবে। বৈষম্য পীড়িত মানবসমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে মানব সাম্য ও সমাজতন্ত্রের উদার আদর্শ। 

তাই তিনি লিখলেন, "য়ুরোপে এক রাষ্ট্র জাতির মধ্যে অন্যভেদ যদি বা না থাকে! শ্রেণীভেদ আছে।... মানুষ যেখানেই মানুষকে পীড়িত করবে সেখানেই তাঁর সমগ্র মনুষ্যত্ব আহত হবেই, সেই আঘাত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।" 

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন যে, যুদ্ধের উন্মত্ততার অবসানই মানব চিত্তের সদর্থক দিক। অর্থাৎ শান্তি, প্রীতি এবং সাম্যবোধের দিক আত্মপ্রকাশ করবেই। মানুষের নৈতিক ও আত্মিক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটবেই। আসলে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি ছিলেন আশাবাদী। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিশ্বশান্তি, ঐক্য, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব। 

এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবেই রবীন্দ্রনাথ রুশ বিপ্লব সংগঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সেদেশের বিপ্লবীদের অভিনন্দন জানিয়েছে। 

যুদ্ধোত্তর কালে জেনেভায় একটি বক্তৃতায় মানবপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ  যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এশিয়া ও আফ্রিকায় ইউরোপীয় কোন কোন জাতির মানবতাবিরোধী নির্মম অত্যাচারের কথা বর্ণনা করেন।

নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খায় মুসোলিনি ১৯৩৫ সালে আবিসিনিয়া আক্রমণ করেন। রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সরব। সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার লেখনি ধারালো হয়ে ওঠে। বেরিয়ে আসে তার কবিজীবনের অন্যতম অবিস্মরনীয় সৃষ্টি "আফ্রিকা"৷ 

"উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে

স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে

নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,

তার সেই অধৈর্যে ঘন ঘন

মাথা নাড়ার দিনে রুদ্র সমুদ্রের বাহু

প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে

ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে আফ্রিকা। "

অতঃপর স্পেনই হোক, চীনেই হোক সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিস্ট দস্যুদের দানবীয় অত্যাচারের কাহিনী কবি যখনই জানতে পেরেছেন তখনই দারুন মর্ম পীড়ায় পীড়িত হয়েছেন। তার উত্তরকালের কোনও কোনও কবিতায় তার সংগ্রামী চেতনা যে ঝলকিত দ্যুতি লাভ করেছে তা অজানা নয়। সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার বাণী তার রোমান্টিক সৌন্দর্যবাদী কবি জীবনে নতুন সুরের সংযোজন করেছে। "শতাব্দী সূর্য আজি রক্ত মেঘ মাঝে অস্ত গেল।"

নাৎসী বাহিনীর ঘৃন্য মানবতাবিরোধী বর্বরতার বিরুদ্ধে বহু স্থানে লেখনি ধারণ করেছেন মানবপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ। 

জাপানি কবি নোশুচির কাছে প্রেরিত পত্রে রবীন্দ্রনাথ ফ্যাসিবাদকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ কবি অমিয় চক্রবর্তীকে চিঠিতে লিখছেন, "মানব ইতিহাসে ফ্যাসিজমের নাৎসিজমের কলঙ্ক প্রলেপ আর সহ্য হয় না। সবচেয়ে বেদনা পাই চীনের জন্য, কেন না সাম্রাজিকদের অফুরন্ত অর্থ আছে, সামর্থ্য আছে —আর সহায় শূণ্য চীন লড়ছে প্রায় শূন্য হাতে। কেবল তার নির্ভীক বীর্যে ভর করে।" 

১৯৪১ সালের জুন মাসে হিটলারের সেনাবাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। তখন রবীন্দ্রনাথ খুবই অসুস্থ৷ যুদ্ধের খবরে কবি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে বলেন যে, "খুবই চিন্তার বিষয়, তবে আমার আশা, সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত হবে না।"

"নাই নাই ভয় হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার।"

"এমন সময় দেখা গেল সমস্ত য়ুরোপে বর্বরতা কিরকম নখদন্ত বিকাশ করে, বিভীষিকা বিস্তার করতে উদ্যত।...আজ মানবতার অপমানে দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বাতাস কলুষিত করে দিয়েছে।"

"নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস

শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস।" 

ভগ্নহৃদয় কবি লিখলেন, "আজ দ্বারের দিকে যাত্রা করেছি। পিছনের ঘাটে কি দেখে এলুম, কি রেখে এলুম, ইতিহাসের কি অকিঞ্চিৎকর উচ্ছিষ্ট সভ্যতাভিমানের পরিকীর্ণ ভগ্নস্তূপ। কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত। রক্ষা করবো। আশা করব মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়ত আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে।"

"ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হোক জয়।"

(www.theoffnews.com Rabindranagar Tagore)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

বাঁশি সকলের হৃদয়ে বাজে, সকল হৃদয়ে বিরাজে। তার সুর ধরতে জানতে হয়। বর্ষবরণের এক অভিনব সন্ধ্যায় মিলন বিরহ প্রেম অনাগত দিনে আরও সুখকর বার্তা বয়ে আনুক এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ সংস্কৃতি সন্ধ্যা উপভোগ করলো বড়শাল গ্রাম। শনিবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় বড়শাল দক্ষিণা কালী তলা নাটমন্দিরে গীতাঞ্জলি শিক্ষায়তনের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় গীতিনাট্য "মৃদুল মধুর বংশি বাজে " রাতুল হৃদয়ে বয়ে আনলো বাৎসল্য রস, অন্তিমে মাথুর বিরহরস। অনুষ্ঠানের মূলে সুর বেঁধে দেয় ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে অর্জুন কৃষ্ণ সংবাদে শ্রী গীতার স্তোত্র। যা শেষ পর্যন্ত ছিল অটুট গ্রন্থিল অনিন্দ্য সুন্দর। যন্ত্র অনুষঙ্গ সহচর্যে গীত সঙ্গীত, নৃত্য বিহঙ্গে প্রেম বিরহ, কর্মযোগ অধ্যাত্মিকতার বুননে এক অপূর্ব গীতিনাট্য উপহার দিলো গীতাঞ্জলি শিক্ষায়তন ও তার কলাকুশলীরা। গীতাঞ্জলি শিক্ষায়তনের কর্ণধার প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায় ও রজত মুখোপাধ্যায় জানান, "ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব, গোঠ পর্ব, রাস, কংস বধের আগে বৃন্দাবন ত্যাগ বাৎসল্য, মাথুর বিরহ রস এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিবেশন করতে পেরে আমরা ধন্য। আমাদের সকলের চলার পথ সুমসৃণ হোক এই টুকুই প্রার্থনা। অনুষ্ঠানে মোট চব্বিশটি সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনায় সমগ্র নাটিকা সার্থক হয়ে ওঠে। গ্রামের  বাসিন্দারা ছাড়াও অনেক অতিথি এসেছিলেন শহর থেকে। তাঁরা জানান, বিরতি বিহীন সঙ্গীত নৃত্যের মূর্চ্ছনায় আবেগের ঝড় তুলেছে সঙ্গীত শিল্পী থেকে নৃত্য শিল্পীরা। কবিতার সহজপাঠের কলাকুশলীদের আবৃত্তি পাঠ ও তার কর্ণধার তথা অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়।

(www.theoffnews.com Birbhum cultural programme)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

ধর্মনিরেপেক্ষতা? উঁহু! কোনও মহারাজা দেননি। আফ্রিকা থেকে সিপলিফটেড আমাদের জন্য পাঠানো তোফা ধর্মনিরেপেক্ষতা নয়। যুগ যুগ ধরে  দেশের মাটি এই ধর্মনিরেপেক্ষতা ধারণ করেছে, পোষণ করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে যতই ফতোয়া আসুক, অন্তত রাতে যদি সবাই লুকিয়ে চুরিয়েও এই ধর্মনিরেপেক্ষতার জিরাফকে দেখতাম, কেমন হতো? 

পদাতিক কবির কাব্য নিয়ে বোধহয় আমাদের জীবন চলে না। জীবন চলে অন্য খাতে। তাই আমরা ধর্মেও নেই, জিরাফেও নেই।

য ধৃতি স ধর্ম। আজকে ধর্ম ধারণ করে সাম্রাজ্যবাদ। হয় তুমি আমার ধর্মের, না হলে তুমি বিধর্মী, আমার শত্রু। প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মাচারীদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দর সেই "ইউনিভার্সাল একসেপ্ট্যান্স, টলারেন্স" চেতনা বোধ অদৃশ্য। কারও বেশি, কারও কম, বা কারও সেটা আছে, এই টুকুই তফাৎ বা মিল। অন্যকে অস্বীকার করার এতো তীব্রতা, মনুষ্য মাত্রই সম্ভব। যাক, এগুলো আমরা সবাই জানি।

আমার যেটা জানি, কিন্তু বুঝি না বা বুঝি কিন্তু জানতে চাই না কিম্বা বুঝতে চাই না- সেটা বলা যাক।

যে কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে একদল আছে তুলনামূলক কম বা বেশি বা আদৌ নেই, তারা ভাঙচুর, লুঠপাট ও খুন জখমে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের মধ্যে বা অন্যের মধ্যে সেগুলোতে সরাসরি অংশগ্রহণ করে বীরত্ব প্রকাশ করে। আরেকদল আছে, তারা দূরে থেকে কুযুক্তি বা অযৌক্তিক যুক্তি দেখিয়ে সেই অপরাধ গুলোকে আড়াল করার চেষ্টা করে। সেটা কিভাবে করে?

১) ভিকটিম কার্ড। ২) বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে। ৩) সম্প্রদায় আইডেন্টিটি ঢেকে বলে, ধর্ম বলবেন না, বলুন মানুষ করেছে। ৪) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে। ৫) অন্য রাজ্যের, অন্য দেশের সুদূর অতীতের কোনও ঘটনা উদ্ধৃত করে সাম্প্রতিক অন্যায়কে জাস্টিফাই করে। ৬) সবই গুজব মিথ্যা বলে ধামাচাপা দিয়ে। ৭) বিভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি করে। সেটা তাদের সম্প্রদায় কতো ভালো তার দূর দূর ঘটনা দেখিয়ে। বা ফলস ন্যারেটিভ বানিয়ে অপপ্রচার করে। একটা ভালো ঘটনা দেখিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভে কোনও লাভ হলে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু যখন যে রোগ তার উপসর্গ অবজ্ঞা করে, কোনসময় তার শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল বা অন্য কোথাও কোনও ব্যক্তি সুস্থ আছে সেই আলোচনায় রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রোগ নিরাময় হতে পারে না। অর্থাৎ যে রোগ ধরা পড়েছে, সেটা রোগ। তার নিরাময়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধর্মকে ভিত্তি করে কোনও সম্প্রদায় একজোট হলে, স্বাধিকার। আর অন্য কোনও সম্প্রদায় একজোট হলে সাম্প্রদায়িক, এটা বেশি দিন চলতে দিয়ে দেখুন, আখেরে কী লাভ হয়? ৮) সম্প্রদায় ভিত্তিক ন্যারেটিভে সফট টার্গেট কারা? উত্তর একটাই। যারা ঐক্য বদ্ধ নয়। এখন প্রশ্ন, ঐক্যবদ্ধ না হতে দেওয়া কাদের কৌশল?

ক) ধর্মভিত্তিক রাজনীতি:-১) একটি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল যারা হিন্দুধর্ম, তার রীতিনীতির সমালোচক। সেক্ষেত্রে ধর্ম "আফিম" মতের তারা প্রবর্তক। তারা হিন্দু ধর্মে কুসংস্কার খোঁজে। আবার ইসলাম,  খ্রীষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মে তাদের অবাধ প্রেম। ২) অন্য আরেকটি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল দেখায় তারা হিন্দু ধর্ম প্রেমী। তবে সেটা সেই রাজনৈতিক দল দ্বারা স্বীকৃত বা পালিত হতে হবে। বাদবাকি সাম্প্রদায়িক ও দাঙ্গাবাজ। সেই দল রাম নবমীতে মুসলিমদের দিয়ে হিন্দুদের পানীয় খাওয়াবে। ফটো শেসন হবে। ক্যাপশন থাকবে- "ভালো মুসলিম হিন্দুদের ঘৃণা করে না। ভালো হিন্দু মুসলিমদের ঘৃণা করে না।" অর্থাৎ যেটুকু হয় ব্যতিক্রম। না হলে আরও বেশি হতো। থাকতে পারতো না। ইত্যাদি। কেউ বলবে, শিক্ষা নেই, বেকারত্ব তাই এসব হচ্ছে। অর্থাৎ বেকারত্বের জন্য হিন্দুরাই দায়ী? হিন্দু দেবদেবী দায়ী?  তাহলে বেকারত্বের কথা আসছে কেন? স্বজাতি ও স্বধর্মের প্রতি এই ধার্তরাষ্ট প্রেম যত দেখা যাবে, তত প্রশস্ত হবে ধর্মের বিস্তৃতি। ৩) আরেক আপাত নির্দল দেখাবে তারা অরাজনৈতিক। তারা বলবেন, একসাথে বড়ো হলাম, কোনও দিন হিন্দু বা মুসলিম কি জানলাম না। এখন জানছি। হিন্দু মুসলিম করবেন না। বলুন মানুষ। বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা সব কিছু ছেড়ে প্রাণ টুকু নিয়ে আসতে পেরেছিল, তাদের দুই একজনকে বলতে শুনেছি, "পরিচিতরা রাতে চুরি করতে এসেছে। বাড়ির সবাইকে সাবধান করে বলেছি, "মানুষ" এসেছে রে। সাবধানে থাকিস। সাহস করে চোর বলতে পারিনি। তাহলে দল বেঁধে এসে চোর বলার অপরাধে সব লুঠ করে নিয়ে যাবে।" এদেরই কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের জিকিরে আজ ইলিশের সইতুতো সম্পর্কে বলবে, "সব মানুষ সমান না। আমি ধর্ম মানি না।" নিজের টাকে মানি না বলা সহজ। অন্যেরটাকে সমীহ না করলে কল্লা যাবে যে। ৪)  আরেক আপাত উদারনৈতিক বলবে, আমি নামায পড়ি না। সব হিন্দুদের অনুষ্ঠানে যায়। তারা কিন্তু অনেকটা এক রাজনৈতিক দলের মতো। সারা বছর নিন্দা করবে। কিন্তু আইন পাশের সময় ভোটাভুটিতে জয়েন না করে, তাদেরই পাশ করিয়ে দেবে। কিছু ভালো মানুষ দেখবে এই উগ্র লোক আমাদের সম্প্রদায়ের তো ক্ষতি করছে না। যাগগে এসব ভেবে লাভ নেই। তারপর? যেখানে হিন্দু নেই! তারা খুব সুখে আছে তো? সুখে থাকতে পারলেই ভালো। ৫) আরেক দল আছে যাদের বদনাম, হিন্দুত্বের ঠিকাদার বলে। যখন পুলিশ কিছুই করতে পারলো না। রতনপুরে মা শীতলার মূর্তি ভাঙলো, বাড়ি ঘর পুড়লো, দোকান লুঠ হলো, হিন্দুদের ঘর ছেড়ে পালাতে হলো, দুই মৃর্তির কারিগর   হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসকে কুপিয়ে খুন করা হলো, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হিরন্ময় নীরবতার মধ্যে, তখন সেই ধর্মের ঠিকাদার দলের কয়েকজন আদালতে গিয়ে সেন্ট্রাল ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট অর্ডার নিয়ে এলো। না হলে হয়তো এই ওয়াকফ কাণ্ডে আরও হিন্দুদের বেঘোরে প্রাণ যেত। বলুন তো

ওয়াকফ বিলের সঙ্গে দূর দূর পর্যন্ত এই অনভিপ্রেত ঘটনার কোনও সম্পর্ক আছে? যদি কোনও "জিরাফ" আমাকে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক দেখাতে পারে, আমি তাকে সালাম জানাবো। বিশ্বাস করতে হবে বেকারত্বর জ্বালায় এসব করতে হয়েছে? ভাতের জন্য এসব করেছে? কই টার্গেট তো ভুল হয়নি। টার্গেট ভুল হয়নি পাকিস্তান আদায়ে, কাশ্মীর দখলে টার্গেট ভুল হয়নি। বাংলাদেশে যেমন টার্গেট ভুল হয় না। ভবিষ্যতে প্যালেস্টাইনে ইজরাইল আক্রমণ করলে এখানে হিন্দুদের ভুগতে হবে না, এমন আশঙ্কা অনেকের দূরাশা হলেই মঙ্গল। ছেচল্লিশে দাঙ্গার সময় বলা হয়েছিল, এখানকার বাঙালি মুসলিমের দোষ ছিল না, পশ্চিমা মুসলিমরা উস্কে ছিল। উস্কালে, নিজের ঘরে তো কেউ আগুন দেবে না। ওয়াকফ তো বাহানা হয়ে গেল। ছেচল্লিশে একই বৃন্তের দুটো কুসুমের বিনা প্ররোচনায় দাঙ্গা আগেও অনেকে দেখেছে। ইংরেজি ২৫ সালে আমরা দেখলাম।

(www.theoffnews.com riots)


দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

অল ইণ্ডিয়া রাঙ্ক ওয়ান পেল ডিফেন্স একাডেমীতে বোলপুরের ইমন ঘোষ। নিজস্ব অফিসিয়াল ট্যুইটারে তার উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "ভীষণ খুশি এবং গর্বিত এটা জেনে যে আমাদের বীরভূম জেলার ছেলে ইমন ঘোষ ডিফেন্স একাডেমি ২০২৪ যেটা ইউপিএসসি কন্ডাক্ট করে এখানে সর্বোত্তম স্থান অর্জন করেছে। ফলাফল সদ্যই প্রকাশিত হয়েছে এবং এই কিশোর একজন বোলপুর নিবাসী ইন্ডিয়ান আর্মির অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদারের পুত্র, এই গৌরব আমাদের সকলের জন্য সে নিয়ে এসেছে।"

উল্লেখ্য, অতি সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই তালিকাতে কোনও পরীক্ষার্থী এই সর্বোচ্চ তালিকায় স্থান পায়নি। ইমন জানিয়েছে, সে প্রথম দশের মধ্যে রাঙ্ক করবে ভেবেছিলো। ভাবেনি, রাঙ্ক ওয়ান হবে। ইমনের মা গার্গী ঘোষ একজন গৃহবধূ। তিনি জানান, বদলির চাকরির কারণে বিভিন্ন জায়গায় তাকে পড়তে হয়েছে। বরাবর ডিফেন্স একাডেমীতে লক্ষ্য ছিল। এখন পুণেতে আছে। ওকে ছাড়া আমরা এই আনন্দ উপভোগ করতে পারছি না। 

দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র বোলপুর নিবাসী ইমন ঘোষ 'রাষ্ট্রীয় ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ' থেকে অল ইন্ডিয়া পরীক্ষায় প্রথম রাঙ্ক করেছে। এই পরীক্ষা নেয় ইউপিএসসি। আর আইএমসির মতো এক সুযোগ্য মিলিটারি প্রতিষ্ঠানের সফল ছাত্র ক্যাডেট ইমন ঘোষ।   

বীরভূমের বোলপুর নিবাসী ইমন ঘোষ আর্মি পরিবারের ছেলে। তার বাবা হাবিলদার উজ্জ্বল কুমার ইন্ডিয়ান আর্মি থেকে অবসরপ্রাপ্ত। মা গার্গী ঘোষ একজন গৃহবধূ। তার বাবার কর্মসূত্রে বদলির কারণে ইমন বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে, সবশেষে সাইনিক স্কুল কুঞ্জপুরা,হরিয়ানাতে ভর্তি হয় এবং পরবর্তীতে আর আইএমসি, দেরাদুনে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় অষ্টম শ্রেণীতে।

(www.theoffnews.com Birbhum)

 

সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবরডাঙ্গা পৌর টাউন হলে খাঁটুরা শিল্পাঞ্জলি আয়োজিত রং সংস্কৃতি উৎসব ২০২৫ অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানের সূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সন্মাননা প্রদান, পুতুল নাটক, পুতুল নাচ, নৃত্যনাট্য, মূকনাটক এবং আরও নানা আকর্ষণীয় পরিবেশনা।

কনিকা দাসের গাওয়া মঙ্গল গীতি দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পৌর পিতা শঙ্কর দত্ত, শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, সংস্কার ভারতীর প্রান্ত সম্পাদক পদ্মশ্রী গোকুল চন্দ্র দাস, যুব পুরস্কার প্রাপ্ত সোমা দাস এবং গঙ্গারিডি পাপেট থিয়েটারের পরিচালক প্রদীপ সরদার। ঐতিহ্যবাহী বেণী পুতুল নাচের মাধ্যমে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। মঙ্গল দীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অতিথিরা উৎসবের সূচনা করেন। সংস্থার শিক্ষিকা এবং শিল্পীরা অতিথিদের মানপত্র এবং উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান। অতিথিরা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিল্পাঞ্জলির পুতুল নাট্যচর্চার এবং ৩৮ বছরের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

শিল্পাঞ্জলির ভরতনাট্যম এবং কত্থক বিভাগের ছাত্রীরা মনোমুগ্ধকর নৃত্যনাট্য উপস্থাপন করেন। আমন্ত্রিত মূক নাটক "উত্তরা রা" পরিবেশন করেন আগরপাড়ার সোমা মাইম থিয়েটার। আমন্ত্রিত নৃত্যনাট্য "রাধা কাহিনী" পরিবেশিত হয় বসিরহাটের অনয় ডান্স ট্রুপের পক্ষ থেকে। ঐতিহ্যবাহী দণ্ড পুতুল নাচ উপস্থাপন করেন প্রদীপ সরদার।

শিল্পাঞ্জলি প্রযোজিত সুতোপুতুল নাটক "অথঃ পাদুকা কথা" পরিবেশন করেন সংস্থার পুতুল নাট্য বিভাগের শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "জুতা আবিষ্কার"-এর ভিত্তিতে এই পুতুল নাটকটি রচনা করেছেন শঙ্খব্রত বিশ্বাস। নাটকের পরিচালনা করেন সোমা মজুমদার এবং প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন দীপালি বিশ্বাস। পুতুল সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমনাথ সিনহা, তাপস কর্মকার, তানিয়া সরকার, রাহুল অধিকারী, অমিত দাম, সুনন্দা বিশ্বাস, রোহিত সাহা এবং সোমা মজুমদার।

উপস্থিত দর্শকদের উপস্থিতি প্রেক্ষাগৃহকে পূর্ণ করে তোলে। সংস্থার সম্পাদক মলয় বিশ্বাস অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে রং সংস্কৃতি উৎসব ২০২৫-এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

(www.theoffnews.com puppet show Gobordanga)


সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

খাটুরা শিল্পাঞ্জলি'র ব্যবস্থাপনায় প্রীতিলতা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বালক বিভাগ ) অনুষ্ঠিত হলো পুতুল  নাট্য বিষয়ে সেমিনার ও পুতুল নাট্য কলার প্রদর্শন। সেমিনারের বিষয় ছিল 'শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পুতুলনাট্য কলার ব্যবহার ও গুরুত্ব।' অতিথি  হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশীষ চক্রবর্তী প্রধান শিক্ষক প্রীতিলতা বয়েজ, অশোক পাল প্রধান শিক্ষক ইছাপুর হাই স্কুল, দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় প্রধান শিক্ষক খাটুরা বয়েজ স্কুল, অভিক ভট্টাচার্য শিক্ষক গবেষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সুশান্ত পাল শিক্ষক খাটুরা বয়েজ স্কুল। শিল্পাঞ্জলির শিল্পী কণিকা দাস মঙ্গলগীতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। সঙ্গতে ছিলেন মুকুল দাস। শিল্পাঞ্জলির পক্ষ থেকে সম্মানীয় অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। মঙ্গলদীপ প্রজ্বলন  করেন অতিথিবৃন্দ। শিল্পাঞ্জলীর শিল্পী সোমা মজুমদারের সঞ্চালনায় মূল আলোচনা পর্ব শুরু হয়। প্রত্যেক বক্তার কথাতেই উঠে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যক্রমকে আরও আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় করতে তুলতে পুতুল শিল্পকলার  ইতিবাচক ভূমিকার কথা। দৃশ্য শ্রাব্য ব্যবস্থাপনার সাথে পুতুলের মত আকর্ষণীয় বিষয় কঠিন, জটিল পাঠক্রমকে কত সহজভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরা সম্ভব পুতুল শিল্পকলার মাধ্যমে এই বিষয়ে সোমা মজুমদারের বক্তব্যকে সকলে স্বাগত জানান। আলোচনা পর্বে শেষে শিল্পাঞ্জলীর পুতুল শিল্পকলার শিল্পী সোমা মজুমদার, তানিয়া দাস, তাপস কর্মকার, শরণ্যা বিশ্বাস, রাহুল অধিকারী প্রমূখ বিভিন্ন পুতুলের প্রদর্শনী করে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখান। শিল্পাঞ্জলির অভিভাবিকা দিপালী বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে সমস্ত বিষয়টি পরিচালিত হয়। শিল্পাঞ্জলি সম্পাদক মলয় বিশ্বাসের ভাষণে সমগ্র দিনের অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।

(www.theoffnews.com puppet show Shilpanjali)

 

google.com, pub-2412686623726664, DIRECT, f08c47fec0942fa0