আনন্দিতা রায়, লেখিকা ও সঙ্গীত শিল্পী, দুর্গাপুর:

যে কোন দেশের সংগীতের ইতিহাসে স্বদেশ চেতনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সর্বযুগের সর্বজনীন মানব সভ্যতার প্রথম পর্বই হল দেশপ্রেম। পরাধীন দেশে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী কবি-সাহিত্যিকদের নবজাগরণের ইতিহাস দেশপ্রেমের দান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বদেশের প্রতি প্রেম ও শ্রদ্ধানুরাগ বর্ষিত হয় যে গানে তাকে স্বদেশী গান বলা চলে। 

বাংলা ভাষায় লেখা দেশাত্মবোধক গানে প্রধানত তিন জাতীয় সুর আমরা লক্ষ্য করি:-

১) রাগ রাগিনী ভিত্তিক অথবা রাগকে আশ্রয় করে মিশ্র সুর, 

২) লোকসংগীত ভাঙ্গা সুর,

৩) ব্যান্ডের অথবা বিদেশি সুর।

অবিভক্ত বাংলার দেশাত্মবোধক গানের সূচনা ও আত্মবিকাশের প্রাথমিক যুগ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। হিন্দু বাংলা যখন মুসলিম শাসকরা অধিকার করেন তখন স্বাধীনতা হারানোর গ্লানি, যন্ত্রণা পরাধীন বাঙালির মনে কিন্তু জাগেনি। ব্রিটিশ শাসনে এই দেশ নিজেকে পরাধীন ভাবতে শিখেছে, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় মিলেই। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে দেখি রামনিধি গুপ্তকে। তিনি স্বভাব প্রেমিক কাব্যসঙ্গীতকার; স্বদেশ চেতনার কবি নন।  বাংলা গানে আধুনিকতা ও নিজস্বতার ব্যক্তিত্ব নিধুবাবুর গানে আমরা পাই। মাতৃভাষা যে মাতৃদুগ্ধের মতই  মহিমান্বিত তা প্রথম  নিধুবাবুর গানেই অমরত্ব লাভ করেছে।

নানান দেশের নানান ভাষা

বিনে স্বদেশী ভাষা পুরে কি আশা

কতো নদী সরোবর কিবা ফল চাতকীর

ধারা জল বিনে কভু ঘুচে কি তৃষা। 

বাংলাদেশ মাতৃপূজার দেশ। দেশমাতৃকা চিরকালই এদেশে পূজিত হয়েছেন চৈতন্যময়ী প্রেমময়ী হিসাবে। পৌরাণিক দেবদেবীকে মাতৃজ্ঞানে পূজা ও দেশ মায়ের পূজা অবাধে মিলেমিশে একবারে এক হয়ে গেছে। যদিও  মাতৃপূজা ও দেশ বন্দনার মিশেল হিন্দুমেলার আগে ঘটেছিল এমন উদাহরণ পাওয়া যায়নি। রামমোহনই "স্বদেশ" শব্দটি তার ব্রহ্মসংগীত এ সম্ভবত সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছিলেন।

"কি স্বদেশে কি বিদেশে যথায় তথায় থাকি

তোমার রচনা মধ্যে তোমাকে দেখিয়া ডাকি।"

শোনা যায় সিপাহী বিদ্রোহকে উপলক্ষ করে ভারতের বহু স্থানে প্রচুর লোকসংগীত রচিত হয়েছিল যদিও তার কোন প্রমাণ আজ আর নেই। 

স্বদেশ, মাতৃভুমি ও মাতৃভাষার প্রতি অপূর্ব অনুরাগ ঘোষিত  হয় রঙ্গলালের "পদ্মিনী উপাখ্যান", রাজেন্দ্রলাল মিত্রের "বিবিধার্থ সংগ্রহ" ও দেবেন্দ্রনাথের "তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা", বঙ্কিমচন্দ্রের "বঙ্গদর্শন", হিন্দুমেলা, জাতীয় নাট্যশালা স্থাপন, "নীলদর্পণ "এর অনুবাদ প্রকাশিত হওয়া ও অভিনীত হওয়া ইত্যাদি বিবিধ ঘটনার মাধ্যমে। বলা যেতে পারে "হিন্দু মেলা"ই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দেশাত্মবোধক সংগীতের ইতিহাসে, যার প্রভাব সর্বজন স্বীকৃত। হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে বাঙালির মনে স্বদেশের প্রতি অনুরাগ অনুরণিত হল বাংলার সংগীতে। 

গঙ্গাধর চট্টোপাধ্যায় নামে জনৈক গীতিকার বহু গান রচনা ও সুরারোপ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন হিন্দুমেলার একেবারে গোড়ার দিকে। গঙ্গাধর ছিলেন ব্রিটিশ সেবক অথচ স্বদেশ প্রেমী। তাঁর গানেও এর প্রভাব পড়েছিল, তার স্বদেশী সংগীত গুলি ছিল স্বদেশসম্ভ্রমের, ব্রিটিশ বিরোধী নয়। মহারানী ভিক্টোরিয়ার প্রশস্তি গীতির বাংলায় অনুবাদ করেন তিনি।  বলা যেতে পারে বিদেশি জাতীয়তাবাদী সঙ্গীতের বিশ্বসঙ্গীতের দরবারে সমাদর লাভের দিকটি এদেশের গীতিকারদের প্রেরণা যুগিয়েছিল নিজ দেশের জাতীয় গীত রচনায়।

১৮৬৭ সালে রচিত  সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দুমেলাকে উপহার দিলেন:-

"মিলে সব ভারত সন্তান

এক তান মন প্রাণ

গাও ভারতের যশোগান।

ভারত ভূমির তুল্য আছে কোন স্থান

কোন অদ্রি হিমাদ্রি সমান।"

হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরবাড়িতে সঙ্গীতের চর্চা হয় বহুল পরিমাণে। দ্বিজেন্দ্রনাথ স্বর্ণকুমারী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গণেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ একযোগে গান রচনা করতেন স্বদেশ চেতনার।

হিন্দুমেলার নাট্যকার, কবি, পাঁচালী, কবি গান, বাউল সংকীর্তন সবরকম রচনায় পারদর্শী "মধ্যস্থ" পত্রের সম্পাদক কবি মনোমোহন বসু গান বেঁধেছিলেন ভৈরবীতে 

দিনের দিন সবে দিন হয়ে পরাধীন

অন্নাভাবে শীর্ণ চিন্তাজ্বরে জীর্ণ

অপমানে তনু ক্ষীন।

তার রচিত গানগুলির মধ্যে দেশ ভক্তির সাথে সাম্রাজ্যঃ বিরোধিতার সোচ্চার যুক্ত হয়েছে। ইংরেজ শাসনের ভারতবাসীর জীবন কি দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তার গানে সেই ছবি বারবার বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ পেয়েছে। 

"সংগীতের শক্তি অসীম" তা যুগে যুগে প্রমাণিত হয়েছে। জাতীয় ভাবাবেগ বলবান -বলবতী হয় জাতীয় সঙ্গীতে।  

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের আগে হিন্দু মেলা, ভারতীয় জাতীয় মহাসভা স্থাপন, ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা, আনন্দমঠ প্রকাশ ইত্যাদি ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বদেশপ্রেমের যে অবারিত অনুরাগ ও চেতনা প্রতিটি দেশবাসীর মনে সঞ্চারিত হয়েছিল তার ফলশ্রুতিই উক্ত যুগের স্বদেশী গান গুলি। বেশ কিছু গীতিকারদের নাম আমরা পাই যেমন, অবিনাশ চন্দ্র মিত্র, অশ্বিনীকুমার দত্ত, আনন্দ চন্দ্র মিত্র, উপেন্দ্রনাথ দাস, কামিনী রায়, কালীচরণ ঘোষ, কালীচরণ চট্টোপাধ্যায়, কালীপ্রসন্ন কাব্য বিশারদ, কিরণ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, কেদার নাথ ঘোষ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রনাথ, নগেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রশন্ন চন্দ্র বিদ্যারত্ন, বঙ্কিমচন্দ্র, শিবনাথ শাস্ত্রী, সুরেন্দ্র চন্দ্র বসু, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখ কবি।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে উপলক্ষ করে প্রকাশিত গানগুলিতে আমাদের তখনকার স্বদেশ ভাবনা ও জাতীয় উদ্দীপনার ইতিহাস গ্রথিত রয়েছে। এই সঙ্গীতের মূলাধার ছিল রবীন্দ্রনাথের গান। এছাড়া দ্বিজেন্দ্রলাল রায় অতুলপ্রসাদ সেন রজনীকান্ত সেন এর গানগুলি সে সময় সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। লোকসঙ্গীতের সুর -প্রেরণা ও জলদ তালে  রচিত গানগুলি আপামর জনসাধারণের রক্তে মিশে গেছিল, জাগরিত হয়েছিল আত্মমর্যাদাবোধ, দেশপ্রেমের অসীম উদ্দীপনা, পেয়েছে চিরস্থায়ী জনপ্রিয়তা। রাখি বন্ধন উৎসব উপলক্ষে করে অবিভক্ত বাংলার উদ্দীপনার সজীব চিত্র সারা ভারতে জোয়ার জাগিয়েছিল জাতীয়তাবোধের। রবীন্দ্রনাথের "বাংলার মাটি বাংলার জল" গান  তরুণ দল শপথ গ্রহণ করেছিলেন স্বদেশ মন্ত্রে। তারপর তার আগুন ঝরানো কলমে বেরিয়ে এলো একের পর এক কালজয়ী গান। অন্যান্য কবিরাও থেমে থাকেননি। কান্তকবি রজনীকান্ত লিখলেন, "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই", অতুলপ্রসাদ লিখলেন "বল বল বল সবে" বা "উঠ গো ভারত লক্ষ্মী," বহুমুখী প্রতিভাধর দ্বিজেন্দ্রলাল লিখলেন "বঙ্গ আমার জননী আমার", "ভারত আমার ভারত আমার" প্রভৃতি গান এবং ভারতবর্ষের বীরগাথা, ঐতিহ্য নির্ভর নাটক। মুকুন্দ দাসের যাত্রার গান এবং "মাতৃপূজা" ইত্যাদি যাত্রা গ্রামে গ্রামে স্বদেশ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিল সাধারণ মানুষকে। আর ছিল কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিস্রাবি, বীণাঝঙ্কৃত  গান ও কবিতা।

১৮৭৭ সালে সঞ্জীবনী সবার জন্য রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন "এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন" গানটি। এটিই রবীন্দ্রনাথের প্রথম স্বদেশী গান।

তখন থেকে শুরু করে যৌবনের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত বহু জাতীয়ভাবের গান লিখেছেন এগুলির মধ্যে "একই সূত্রে বাঁধিয়াছি" গানটি সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে রবীন্দ্র গবেষক গণ মনে করেন। 

রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ সাল থেকে ১৯৪১সাল পর্যন্ত এই অর্ধশতাব্দী ধরে যা লিখেছিলেন তা যদি আমরা পাঠ করি দেখতে পাব তাঁর রাষ্ট্রনীতিক বোধ--দেশের নানা যুগের রাষ্ট্রনেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তাই দেখি বঙ্গভঙ্গ রোধ আন্দোলনের সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে এই আন্দোলনের থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন। তথাপি সংগ্রাম থেকে বিরত হননি বিপ্লবের মাধ্যম হয়ে ছিল ভিন্ন।" ভারতী "সাধনা" প্রভৃতি পত্রিকার মাধ্যমে তিনি তার সংগ্রামী লেখনি দিয়ে জনমত তৈরী করেছেন। ব্যথিত হয়েছেন দেখে যে স্বদেশী আন্দোলনে সভা-সমিতি করে প্রতিবাদ জানানো এবং ব্রিটিশ রাজের কাছে আবেদন করার দিকে দেশবাসীর যত ঝোঁক ঠিক ততটাই প্রচেষ্টার অভাব নিজেদের এবং দেশের উন্নতি সাধনের দিকে। তাই তদানীন্তন ঐক্যবদ্ধতার আবেগ-উচ্ছ্বাস দেখে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, "আমরা অভিভূত ভাবে এক সচেষ্ট ভাবে এক নহি"। "বাইরের কতকগুলি অপ্রাকৃত অবস্থার ফলে আমরা একতাবদ্ধ হয়েছি এই অবস্থা যখন আর থাকবে না তখনও আমরা একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারি এমন কোন অভ্যন্তরীণ বন্ধন বা ঐক্য চেতনা আমাদের নেই। "তিনি আশঙ্কা করেছিলেন এই তৃতীয় শক্তি যখন আমাদের মধ্যে আর প্রভুত্ব করবে না তখন আমরা নিজেদের মধ্যে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো। ভারতের পরবর্তী কালের ইতিহাসে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং শোকাবহ ভাবে সত্যি প্রমানিত হয়েছে। প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা দূর করবার জন্য দেশবাসীকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাইরের অত্যাচার  যেমন অপমান, তেমনি বৈদেশিক মোহ আঘাত করেছে আমাদের আত্মমর্যাদাবোধে। আমরা আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেছি। ইংরেজরা দয়া করে আমাদের শিক্ষিত করবে অথবা আমাদের উপকার করার জন্য এগিয়ে আসবে এই মনোবৃত্তি তার কাছে অপমানজনক মনে হয়েছে। নিজেরা নিজেদের গলদ বুঝে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ না নিলে বাইরের উপকারের ফল স্থায়ী হয় না। পরবর্তী জীবনে এই নীতি ও শিক্ষা শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মূল কথা আমরা জানি। ‌

স্বাধীনতা কেউ জোর করে খর্ব করতে পারে না তাইতো তাঁকে গাইতে দেখি,

"ও তোর শিকল আমায় বিকল করবে না,

ও তোর মারে আমার মরম মরবে না।"

 তাই মনে হয় স্বাধীনতাকামীর কাজের জায়গাটির সঙ্গে স্বাধীনতাপ্রেমীর চিন্তার কোনো পার্থক্য বোধহয় আর রইল না। 

সাময়িক উত্তেজনার গান অবস্থা বিশেষেই চলে কিন্তু আত্মউদ্দীপক গান চিরকালের সকল অবস্থারই অনুকুল। তবে বেশ কিছু গান যে গুলির সঙ্গে আজকের অবস্থা খাপ খায় না বলে অনেকে মনে করতে পারেন। যেমন "বিধির বাঁধন কাটবে তুমি" বা শুধুমাত্র বঙ্গবন্দনার গান "আমার সোনার বাংলা", "আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে" কিম্বা "বাংলার মাটি বাংলার জল" ইত্যাদি। জাতীয় সংগীত হিসেবে "জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে" গানটির মধ্যে কোন প্রদেশের নাম বাদ পড়েছে বলে একদা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু এ ধরনের বাদানুবাদে গানটির সামগ্রিক ভাবরূপের কোনরকম হানি হয়নি। রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গান আসলে আত্মদ্দীপনারই গান। সে গান চিত্তকে ভয় শূণ্য ও আত্মাকে গ্লানিমুক্ত করে। তাই তার অনেক গানই সর্বকালের সর্বশ্রেণীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতীয় সংগীত। মানসিক দুর্বলতাকে ধিক্কার দিয়ে জ্বড়ত্ব থেকে মুক্তি, আত্মাকে মোহমুক্ত করার বাণী বহন করে, ভয়কে জয় করার সাহস যোগায়, "সংকোচের বিহবলতা", "নিশিদিন ভরসা রাখিস", "নাই নাই ভয়", "আমি ভয় করব না রে", "বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি", "যদি তোর ভাবনা থাকে", "ছি ছি চোখের জলে ভেজাসনে", "আপনি অবশ হলি" প্রভৃতি গানে তা উজ্জল।এই সমস্ত গানে বাণীর উর্দ্ধেও আরো কিছু থাকে যা আমাদের ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে পারিবারিক বৈঠকে, সন্ধ্যা আসরে অথবা নিছক নিজের মনেও উৎসাহ পাওয়া যায় তৃপ্তি আনন্দ পাওয়া যায়।

এধরনের উদ্দীপক রবীন্দ্রসঙ্গীত গুলিকে কোন বিশেষ পর্যায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভবত যায় না। তাই দেখতে পাই গীতবিতান গ্রন্থের পূজা, বিচিত্র পর্যায়ের মধ্যেও বহু গান রয়েছে যেগুলোকে জাতীয় সংকট এর পরিপ্রেক্ষিতে বা স্বদেশ চেতনায় সমানভাবে ব্যবহার করা চলে। যেমন- 

"জাগিতে হবে রে", "বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে", "এই কথাটা ধরে রাখিস", "বিপদে মোরে রক্ষা করো", "প্রচণ্ড গর্জনে আসিল একি দুর্দিন", "আমি মারের সাগর পাড়ি দেবো", "বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি", "ওরে ভীরু তোমার হাতে", "জয় হোক নব অরুণোদয়", "হবে জয় হবে জয়", "আমরা নূতন যৌবনেরই দূত", "ওই ঝঞ্ঝার ঝঙ্কারে", "খরবায়ু বয় বেগে" ইত্যাদি। 

গানের আবেগের সঙ্গে মনের আবেগের তার গুলি সমধ্বনে সুমধুর সুরে ক্ষিপ্র চালে ঝংকৃত হয়ে ওঠে। সমবেত কণ্ঠে অথবা স্বরসঙ্গতির প্রয়োগে গানগুলিকে কত বৈশিষ্ট্যময় করে তোলা যায় সে রাস্তা কবিগুরুই দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই গানের মধ্য দিয়েই আমরা নিজেকে জাগাই সমাজকে জাগাই দেশকে জাগাই।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours