দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:
এক টুকরো অবসর বিনোদন ও সেলফি জোন শান্তি নিকেতনে। শুধু তাই নয়, টিয়া পাখীদের খুব প্রিয় খাবার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। সেই সূর্যমুখী ফুলের চাষের জন্য ভেবেছেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সুপ্রিয় কুমার সাধু। কাক ভোরে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি আসে সেই বাগানে সূর্যমুখী ফুলের বীজের লোভে।
সূর্যমুখীর বীজ এক অর্থকরী তৈল্য শষ্য। তা থেকে তৈরি হয় উচ্চমানের খাওয়ার তেল, যা বিশেষ করে হৃদরোগীদের জন্য উপকারী। ফলে বাজারে এর চাহিদাও বেশ ভালো। অথচ সে পথে পা মাড়াননি সুপ্রিয়বাবু। তিনি ভেবেছেন, টিয়া পাখীদের জন্য, মানুষকে দুদণ্ড স্বস্তি দেওয়ার জন্য। ওখানে বসে মনের খোরাক পেয়ে কেউ দু'কলি নজরুল গীতি গুনগুনিয়ে গাইতে পারেন, সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে/দলগুলি মোর রেঙে ওঠে তোমার হাসির কিরণ মেখে।'
সুপ্রিয়বাবু ১৪ কাঠা করে জায়গায় তিনটি পর্যায়ে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। একটি প্লটের ফুল শুকোতে আরম্ভ করলে, পর পর অন্যগুলোতে ফুল ফুটতে শুরু করে। এর ফলে ফুল বন্ধ হয় না। জানা গেছে, এই চাষে বিশেষ খরচ বা পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না, তবে মাটি প্রস্তুতিতে একটু যত্ন দরকার। জমি ভালো ভাবে চাষ করে আগাছামুক্ত করতে হয়, সারিতে বপন করতে হয় বীজ। প্রতি হেক্টরে লাগে ৮-১০ কেজি বীজ। কিন্তু সেদিকে আপাতত আগ্রহ নেই বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা সুপ্রিয় কুমার সাধুর। তিনি অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তিনি ব্যাবসা করার জন্য এই চাষ করেননি। বরং তাঁর তৃপ্তি তাঁর বাগানে টিয়া পাখি আসে। পর্যটকরা আসে। সেলফি জোন হিসাবে ব্যবহার করে। এটুকুই! তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন অর্থকরী ফসল হিসেবে তিনি এই বাগান কাজে লাগাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সেটা করতে গেলে টিয়াদের আঁটকাতে বাগান নেট দিয়ে ঘিরতে হবে। প্রতিদিন ভোরে প্রচুর টিয়া আসে সূর্যমুখী বীজ খেতে। আপাতত আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। তাছাড়া পাখি ও মানুষের ভালো লাগছে, মানুষ আনন্দ পাচ্ছে। এতেই আমার তৃপ্তি। তিনি জানান, এদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন এই বাগানটি। শুধু পর্যটক নয় এর পাশাপাশি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিত এই বাগানে এসে ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন। সুপ্রিয়বাবু জানান, তিনি তিনটি ভাগে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি ভাগে প্রায় ১৪ কাঠা জমির উপর এই চাষ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে যে চাষ করা হয়েছিল সেই ফুল বর্তমানে ঝরে গিয়েছে। এখন যে বাগানে ফুল ফুটে রয়েছে সেটি দ্বিতীয় ভাগ। অন্যদিকে এই বাগানের ফুল ঝরে পড়লে তৃতীয় ভাগের বাগানে ফুল ফুটে উঠবে।
মূলত সারা বছরই যেন পর্যটকেরা এখানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন এবং ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন সেই কারণেই তিনটি ভাগে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।অন্যদিকে টিয়া পাখিদের খুব পছন্দের খাবার এটি তাই তাদের কথা চিন্তা করে এই চাষ সুপ্রিয় কুমার সাধু । কৃত্তিকা সরকার জানান, এখানে তিনি প্রায় আসেন। কত পাখি কীট পতঙ্গ আসে। মানুষ জন আসে। কেউ আবার বই হাতে নিয়ে আসে। প্রকৃতির কোলে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করে। বই ও পড়ে।
(www.theoffnews.com sunflower parrot)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours