সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

দেশ অনেক। ভাষা, মতামত ভিন্ন। কিন্তু আমাদের পৃথিবী একটাই। এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে দরকার সচেতনতা। আর ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে কনটেন্ট ক্রিয়েটার্সরাই হয়ে উঠতে পারে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির অন্যতম হোতা। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত IAMCR 2025 কনফারেন্সে‌ অংশগ্রহণ করে এমনই মতামত তুলে ধরলেন তন্ময় সামন্ত। বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা তন্ময় সামন্ত বর্তমানে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার। তিনি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত IAMCR 2025 কনফারেন্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলেন। পরিবেশ ন্যায় (Environmental Justice) নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে তিনি কেবল প্রশংসা নয়, বরং বিশ্বের নানা দেশের খ্যাতনামা প্রফেসর ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আন্তরিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে বড় হয়ে ওঠা তন্ময় নিজের আত্মবিশ্বাস ও স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও যোগাযোগ বিষয়ক বৈশ্বিক আলোচনায় নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

১৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের নামী নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় International Association for Media and Communication Research (IAMCR) 2025। এবারের সম্মেলনের মূল থিম ছিল— “Communicating Environmental Justice: Many Voices, One Planet”। সম্মেলনে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ১৫০০ জন গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন কী-নোট বক্তৃতা, থিমেটিক প্যানেল ও রাউন্ডটেবিল আলোচনার মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ ও ন্যায্যতার বার্তা তুলে ধরা হয়।

তন্ময় সামন্ত সম্মেলনে দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রথম পত্র “Digital Greenwashing: Analysing the Role of Content Creators in Sustainability Narratives”, যেখানে তিনি দেখান কিভাবে কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটর পরিবেশবান্ধবতার মুখোশ পরে মূলত ভ্রান্ত বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার কিছুজন কিভাবে পরিবেশ সচেতনতায় অগ্রণীর ভূমিকা পালন করছেন। দ্বিতীয় গবেষণাপত্র “Championing the Fight Against Climate Change: A Thematic Dissection of Selected Indian Films on Environmental Issues”—এই প্রবন্ধে তিনি বিশ্লেষণ করেন ভারতীয় মূলধারার চলচ্চিত্র কীভাবে পরিবেশ সংকট ও জলবায়ু আন্দোলনের বার্তা বহন করে। উভয় প্রবন্ধই আন্তর্জাতিক গবেষকদের মধ্যে গভীর আলোচনার জন্ম দেয় এবং ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বকে বৈশ্বিক অঙ্গনে তুলে ধরে।

নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তন্ময় সামন্ত বলেন, “একটি গ্রামীণ পটভূমি থেকে উঠে এসে এবং বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে আমি যখন আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে নানা দেশের বর্ষীয়ান গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম, তখন নিজেকে অসম্ভব গর্বিত ও অনুপ্রাণিত মনে হচ্ছিল। এই কনফারেন্স প্রমাণ করেছে, চিন্তাশীল গবেষণা ভাষা বা ভৌগোলিক সীমার তোয়াক্কা করে না।"  তিনি আরও বলেন, “IAMCR 2025 শুধুমাত্র একাডেমিক অর্জন নয়, বরং এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক বিনিময়ও ছিল। এই বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা আমার কাছে এক বড় সাফল্য।”

শুধু গবেষণাপত্র উপস্থাপন নয়, তন্ময় অংশ নিয়েছিলেন গ্রিন কমিউনিকেশন এথিক্স, যুব সমাজের জলবায়ু আন্দোলন এবং ডিজিটাল স্টোরিটেলিং নিয়ে নানা আলোচনা সভায়ও। তাঁর উপস্থিতি প্রমাণ করেছিল, ছোট শহর ও আঞ্চলিক শিক্ষার পটভূমি থেকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। সম্মেলনে তিনি যুক্তরাজ্য, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন।

IAMCR 2025 শুধু একটি গবেষণা প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, বৈচিত্র্য এবং জ্ঞানবিনিময়ের এক অনন্য উদাহরণ। তন্ময় সামন্তের জন্য এটি ছিল এক ব্যক্তিগত ও প্রফেশনাল মাইলস্টোন—একটি মুহূর্ত যা বাংলা তথা ভারতের গর্বের।

(www.theoffnews.com Tanmay Samanta)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours