দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

শুধুই কি পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে বা স্কুলছুট রুখতে স্কুলে পড়ুয়াদের জন্মদিন পালনের উদ্যোগ  ব্রাহ্মণখণ্ড বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে? এটাই শুধু ভাবলে বোধহয় ভুল হবে। আমরা যারা স্কুলে যাই বা গেছি। শুধুমাত্র পড়া মুখস্ত দেওয়া আর পড়া গলাধঃকরণের জন্য নয়। স্কুলে যাওয়া মানুষ হওয়ার জন্য। যে মানবিক মূল্যবোধ গুলো আজ তলানিতে, সেগুলির প্রসূতিগার এই স্কুল বা বিদ্যালয়। আজকের দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঘটা করে জন্মদিন পালন হয়। কিন্তু কে খোঁজ রাখে দু:স্থ পরিবারের ছেলে মেয়ের কথা? যারা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কেউ কথা রাখেনি কবিতা পড়েছেন, নিশ্চয়ই জানেন, লস্কর বাড়ির ছেলেমেয়েদের লাঠি লজেন্স চুষে চুষে খাওয়া দেখার বর্ণনা। তাই স্কুলে এই অভিনব উদ্যোগ। যাদের জন্মদিন বাড়িতে পালন করার সামর্থ্য নেই। স্কুল তাদের জন্মদিন পালন করবে। এর থেকে বড় পাওনা আর কি হতে পারে?

প্রতিমাসে যতজন পড়ুয়ার জন্মদিন আছে সকলের জন্মদিন মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে পালন করা হবে তিথি ভোজনের মাধ্যমে। তিথি ভোজন কী? বাংলা ক্যালেন্ডারের কোন একটা তিথিতে একসঙ্গে অনেক পড়ুয়ার জন্মদিন পালন। মিড ডে মিল স্কিমের সঙ্গেই ওই একটা দিন একটু ভাল খাবার খাবে পড়ুয়ারা। জুলাই মাসের এক তিথি ভোজনে মিড ডে মিলের ভাত, ডাল, তরকারির সঙ্গে এদিন জুড়ে গেল জন্মদিনের পায়েস, পাশাপাশি থাকল মাংস কষা, মিষ্টি, চাটনি।

ছেলেমেয়ে মিলিয়ে এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১২০০ জন। তবে নিত্যদিন অনুপস্থিতির সংখ্যাও আছে। এরই মাঝে কিভাবে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা যায় সেই উদ্যোগ নিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত প্রায় ২২ জন পড়ুয়ার জন্মদিন এই জুলাই মাসে। প্রত্যেককে পাশাপাশি বসিয়ে উপহার দেওয়া হল, পায়েস-মিষ্টি খাইয়ে জন্মদিন পালন হল স্কুলেই। ঠিক বাড়ির মতই। সহকারী শিক্ষিকা দীপান্বিতা গাঙ্গুলী জানালেন, মূলত স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই উদ্যোগ। সঙ্গে আছেন তাঁরা সকলেই। শিক্ষিকা হওয়ার আগে তাঁরা তো মা। ছেলেমেয়েদের জন্মদিন স্কুলে পালন হলে এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে।

ব্রাহ্মণখণ্ড বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামকৃষ্ণ রজক জানান, স্কুল থেকে যাতে পড়ুয়ারা মুখ ফিরিয়ে না নেয় এবং নতুন উৎসাহে যাতে স্কুলে আসে, পড়াশোনায় আগ্রহী হয় এটাও একটা ভাবনা। তবে সর্বোপরি সকলের সঙ্গে একাত্মীভূত হওয়া এই মানবিক ভাবনা তাঁর মাথায় আসে। শিক্ষকই তো মানুষ গড়ার কারিগর। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি কামরুল হোদা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।

আর যাদের জন্য এই ভাবনা তারা কী বলছে? সব দেখে শুনে আজ ওদের মুখে চওড়া হাসি। কারও কোনওদিনই জন্মদিন পালন হয়নি, কারও হয়তো কখনও সখনও হয়েছে। তবে বন্ধুদের মাঝে স্কুলে বসে এমন হইহই করে আনন্দ তারা কখনই উপভোগ করেনি। তাইতো অনাবিল নির্মল আনন্দ আজ তাদের চোখে-মুখে উপচে পড়ছে। আবেগে উচ্ছ্বাসে চোখদুটি তাদের জ্বল  জ্বল করছে।  একমাত্র এই আনন্দের ভাগ হয়।

(www.theoffnews.com Birbhum school birthday students)



 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours