দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:
কোন পরীক্ষা বড়ো? ভাবার পরিস্থিতি ছিল না, এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুস্মিতা সাহানির। সদ্য বাবাকে হারিয়ে, জীবনের খেইটা যেন হারিয়ে গিয়েছিল তার। বটবৃক্ষের মতো সুশীতল ছায়াঘন বাবার হাতটা যে তার মাথার উপরে নেই!
চোখের জল মুছতে মুছতে বোলপুর শিক্ষা নিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুস্মিতা সাহানি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করে। বোলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে তার পরীক্ষার সিট পড়ে।
সুস্মিতার একটা আলাদা পরিচয় আছে। সে ভলিবলে রাজ্যস্তরের খেলোয়াড়। দুর্দান্ত ম্যাশার। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে তার জীবনটা যেন স্ম্যাশড হয়ে গেল মনে হয়েছিল সুস্মিতার। বাবার অকাল প্রয়াণের সংবাদ পেয়ে, আর পরীক্ষা দেবে না ভেবেছিল সে। সুস্মিতা কান্না ভেজা গলায় বলে, "খেলার জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গা যেতে হতো। তাই বাবা বলেছিলেন, তুই পাশ করতে পারবি না। আমি বাবাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম আমি ভালোভাবে পাশ করবোই। কিন্তু যার সঙ্গে আমার চ্যালেঞ্জ হয়েছিল, সেই বাবাই তো নেই।"
প্রতিবেশী চৈতালি দেবনাথ সাহা এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাস সুস্মিতাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা বুঝতে পারছিলাম না সুস্মিতাকে কী করে বাড়ি থেকে বের করবো। আমরা সবাই কাউন্সেলিং করে নিয়ে এসেছি। কালকে রাত্রে বাবার শেষকৃত্য হয়েছে। আজ বুধবার ইংরেজি পরীক্ষা। বাংলা পরীক্ষা ভালো দিয়েছিল সুস্মিতা। বুধবার ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। এই অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়া কঠিন। তবে ও ভালোভাবেই পাশ করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে। আমরা সবাই ওর পাশে আছি।
প্রতিবেশী চৈতালি দেবনাথ সাহা বলেন, সুস্মিতার বাড়ি থেকে কারও পক্ষে সুস্মিতার সঙ্গে আসা সম্ভব ছিল না। তাই আমি এসেছি।
জানা গেছে, সুস্মিতার বাড়ি বোলপুরের মকরমপুরে। বাবা পেশায় গাড়ি চালক। মা মাছ বিক্রি করেন। বাংলা পরীক্ষার দিন তার বাবা মহাদেব সাহানি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বোলপুরের মকরমপুরে ড্রেনে পড়ে যান। মাথায় আঘাত লাগার পর ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরেন। তারপর মস্তিস্ক রক্ত ক্ষরণে স্ট্রোক হয়। বোলপুর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
সুস্মিতার ইংরেজি পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। সুস্মিতা বলে, "বাবা চেয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিকটা যেন প্রথম বিভাগে পাস করি। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতেই এসেছিলাম পরীক্ষা দিতে," এই বলে ফের কান্নায় ভেঙে পড়ে সুস্মিতা। বোলপুর শিক্ষা নিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাস জানান, এই ঘটনার খবর পেতেই তাঁরা পৌঁছে ছিলেন সুস্মিতার বাড়িতে। নানাভাবে বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজি করিয়েছেন। এদিন প্রতিবেশী চৈতালি দেবনাথ সাহানী সুস্মিতাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসেন। চৈতালিদেবী জানালেন, বাড়িতে কারও অবস্থা এমন নেই যে মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। সামান্য খাইয়ে তিনিই তাই সুস্মিতাকে নিয়ে এসেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।
(www.theoffnews.com examination)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours