সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
(ছবি সৌজন্যে নাসা)
আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা একটি অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার করেছেন। নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান থেকে তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যে বুধের ভূত্বকের নীচে হীরার একটি ১৫-মাইল-পুরু স্তর থাকতে পারে।
সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধের ভূপৃষ্ঠে গ্রাফাইটের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলির উপস্থিতি এতদিন বিজ্ঞানীদের অনুমান করতে সাহায্য করেছে যে গ্রহটিতে একসময় কার্বন সমৃদ্ধ ম্যাগমা বা গলানো পাথরের মহাসমুদ্র ছিল। এই মহাসাগর থেকে গ্রাফাইটের খন্ড খন্ড অঞ্চলগুলি বুধের ভূপৃষ্ঠকে কালো করে রেখেছে। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক আবিষ্কার বুধ সংক্রান্ত বেশ কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা করতে পারবে। কারণ বুধের অস্বাভাবিক অন্ধকার ভূপৃষ্ঠের কারণে বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। বুধের একটি ঘন অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক স্তর বা কোর রয়েছে এবং আগ্নেয়গিরি থেকে ম্যাগমার উদগীরণ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।
“নেচার কমিউনিকেশনস্”-এ প্রকাশিত এই নতুন গবেষণার ফলাফল আমাদের সৌরজগতে গ্রহের গঠন এবং বিবর্তন বোঝার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করছেন যে বুধের আবরণটি গ্রাফাইট দিয়ে গঠিত নাও হতে পারে যেমনটি আগে ধারণা করা হয়েছিল, বরং হীরে দিয়ে গঠিত যা কার্বনের আরও মূল্যবান রূপ। বুধের আবরণ এবং কোরের মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত উচ্চ-চাপ এই হীরের স্তরের গঠনের জন্য দায়ী।
এই সম্ভাবনাটি অনুসন্ধান করার জন্য, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ল্যাবরেটরিগুলিতে বুধের অভ্যন্তরীণ অবস্থাগুলির পুননির্মাণ করেছিলেন। একটি বিশাল আয়তনের চাপ দেওয়ার যন্ত্রের সাহায্যে সিন্থেটিক সিলিকেটের উপর সাত গিগাপাস্কেলের বেশি চাপ প্রয়োগ করে তাঁরা গ্রহের গভীরে চরম পরিবেশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিন্তু সার্থক মডেল তৈরি করেছিলেন।
গবেষক দলটির বিশ্বাস যে হীরার স্তরটি দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হতে পারে - ১) একটি কার্বন-সমৃদ্ধ ম্যাগমা মহাসাগরের স্ফটিককরণ এবং ২) বুধের প্রাথমিকভাবে তরল কোরের অগ্রগতিশীল স্ফটিককরণ।
এই আবিষ্কারটি ব্যাখ্যা করতে পারে কেন বুধের প্রধান আগ্নেয়গিরির কর্মকান্ড প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে তুলনামূলকভাবে দ্রুত শেষ হয়েছিল। একটি হীরার স্তর দ্রুত তাপ অপসারণকে সহজতর করতে পারে, যার ফলে সময়ের আগেই আগ্নেয়গিরির অবসান হয়।
গবেষক দলটি ম্যান্টেল-কোর সীমানায় একটি হীরের স্তরের তাপীয় প্রভাবগুলি নিয়ে আরও অধ্যয়ন করার পরিকল্পনা করেছে। তারা বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের উন্নতির জন্য ২০২৬ সালে প্রত্যাশিত বেপিকলম্বো মিশন থেকে নতুন তথ্য আশা করে।
যদিও বুধে হীরের খনির উপস্থিতি ভীষণ রোমাঞ্চকর, কিন্তু ওই গ্রহের চরম তাপমাত্রা এবং যে গভীরতায় তাদের অস্তিত্ব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয় তাতে হীরের খনির মজুর দিয়ে এই হীরে বুধের মাটি খুঁড়ে তুলে নিয়ে আসা বর্তমানে অসম্ভব।
(www.theoffnews.com Mercury)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours