সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

লুইস ক্যারলের "এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড"-এর চেশায়ার বেড়ালের কথা তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে ক্রমে ক্রমে অদৃশ্য হয়ে যেত কিন্তু তার মিচকে হাসিটা রয়ে যেত? সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আরও একটি কল্পনাকে সত্যি করেছেন, তবে বেড়াল নয়, তাঁরা বেড়ালের প্রিয় খাদ্য ইঁদুরকে খানিকক্ষণের জন্য অদৃশ্য করে দিয়েছেন। এতে ইঁদুর বেড়ালের হাত (বা মুখ) থেকে বাঁচতে পারবে কিনা জানি না কিন্তু এই ভোজবাজি মানুষের চিকিৎসায় যে ব্যাপক উন্নতি নিয়ে আসতে চলেছে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।

সম্প্রতি (৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) ‘সায়ান্স’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা প্যাকেটজাত জনপ্রিয় মুখরোচক জলখাবার ‘ডোরিটোস’-এ পাওয়া একটি খাবারের রং ব্যবহার করে জীবন্ত ইঁদুরের চামড়াকে স্বচ্ছ করার একটি সম্ভাব্য যুগান্তকারী উপায় খুঁজে পেয়েছেন। অপটিক্যাল ইমেজিংয়ের এই অগ্রগতি টিস্যুর স্বচ্ছতা বাড়িয়ে জৈবিক গবেষণায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। টারট্রাজিন নীল এবং অতিবেগুনী আলো শোষণ করে, দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে ত্বকের স্বচ্ছতা বাড়ায়। এই পদ্ধতিতে চাক্ষুষ স্বচ্ছতা বাড়াতে উচ্চ শোষণকারী অণু ব্যবহার করা হয় যেগুলি টিস্যুতে আলোর রশ্মিকে ছড়িয়ে পড়া এবং শোষিত হওয়া থেকে আটকায়। গবেষকদের মতে এই অনন্য আবিষ্কার জৈবিক গবেষণার ক্ষেত্রে শরীরের ভেতরে চোখে দেখার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন করতে পারে।

গবেষণাটি ডালাসের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক জিহাও ওউ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ওউ ব্যাখ্যা করেছেন যে চামড়ার ভেতর প্রাকৃতিক ভাবে ছড়িয়ে যাওয়া মাধ্যম জল এবং টারট্রাজিনের (একটি উজ্জ্বল হলুদ-কমলা রঙ যা খাদ্য সামগ্রী, প্রসাধনী এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যগুলিতে পাওয়া যায়) একটি দ্রবণ জীবিত ইঁদুরের ত্বকে প্রয়োগ করে তাঁরা একটি অস্থায়ী স্বচ্ছতা পেতে সফল হয়েছেন।

"আমরা চামড়ায় হলুদ রঞ্জককে প্রয়োগ করেছি, যা বেশিরভাগ আলো শোষণ করে, বিশেষ করে নীল এবং অতিবেগুনী রেঞ্জে, যা সাধারণত আলোকে আটকে দেয়," ওউ বলেছেন। "আলাদা আলাদা ভাবে দুটোই বেশিরভাগ আলোকে আটকে দেয়, কিন্তু একসঙ্গে এই জুটি আমাদের ইঁদুরের ত্বককে স্বচ্ছ করতে সক্ষম করেছে।" তিনি প্রক্রিয়াটিকে একটি ফেসিয়াল ক্রিম বা মাস্কের সাথে তুলনা করেছেন, উল্লেখ করেছেন যে রঞ্জক অণুগুলি ত্বকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মিনিটের মধ্যে চামড়া স্বচ্ছ হতে শুরু করে। ইওউ এবং তার দল চিকিৎসা গবেষণা এবং রোগ নির্ণয়ে এই প্রযুক্তির জন্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা দেখেন। ওউ বলেছেন, "বর্তমানে আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ছবির সাহায্যে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো খুব খরচসাপেক্ষ এবং সবার হাতের নাগালে নেই। আমাদের পদ্ধতিটি সস্তা এবং সহজ বিকল্প হতে পারে। এতে আমাদের শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়াগুলির আরও গভীরে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, ফলে এখন যেভাবে জীববিজ্ঞানে চোখে দেখে গবেষণা করা হয় তার আমূল পরিবর্তন ঘটবে”।

চেশায়ার বেড়ালের হাসির অস্যার্থ হলো জ্ঞান ও পরামর্শ। এই অনন্য আবিষ্কারটিও ভবিষ্যতে চিকিৎসক ও জীববিজ্ঞানীদের জ্ঞানের ভাণ্ডার বাড়াতে প্রয়োজনীয় পথপ্রদর্শক হবে।

(www.theoffnews.com)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours