সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
জুলজিক্যাল সার্ভে (জেডএসআই) এবং ওড়িশা বন বিভাগ ওড়িশা উপকূলে হর্সশ্যু ক্র্যাব বা রাজকাঁকড়াকে ট্যাগ বা লেবেলিং করার জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেছে। উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পাওয়া এই কাঁকড়াগুলিকে রক্ষা করতে ভারত এই প্রথম এমন উদ্যোগ নিয়েছে।
রাজকাঁকড়া পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম এবং মানুষের ওষুধ শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের রক্ত চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত পণ্যের নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে ব্যবহার করা হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
বর্তমানে পৃথিবীতে মাত্র চারটি রাজকাঁকড়ার প্রজাতি বর্তমান, তার মধ্যে ভারতে পাওয়া যায় দুটি - ট্যাকিপলিয়াস গিগাস যা ওড়িশা উপকূলে পাওয়া যায় এবং কার্সিনোস্কোরপিয়াস রোটুন্ডিকাউডা যা পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভে পাওয়া যায়। উভয় প্রজাতিই ভারতের ১৯৭২-এর বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনের বলে সুরক্ষিত।
রাজকাঁকড়া অনেক প্রাণঘাতী বিপদের সম্মুখীন হয়, বিশেষ করে ক্ষতিকারক মাছ ধরার রেওয়াজ এবং অবৈধ চোরাচালান থেকে, যার কারণে তাদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। তাদের রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
ট্যাগিং প্রোগ্রামে তাদের জনসংখ্যা এবং তারা কোথায় থাকে সে সম্পর্কে আরও জানতে রাজকাঁকড়ার সঙ্গে ছোট ট্যাগ সংযুক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত, ৭০টি কাঁকড়াকে ট্যাগ করা হয়েছে এবং আগামী তিন বছরে আরও শতাধিক কাঁকড়াকে ট্যাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বালাসোরের ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এই সংরক্ষণ প্রকল্পে সহায়তা করছেন। তাঁরা ক্ষতিকারক মাছ ধরার অভ্যাস কমানোর উপায় খুঁজছেন, যেমন মারণ জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, যা রাজকাঁকড়াকে ধ্বংস করে দেয়। দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের জন্য বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা একটি ‘প্রজাতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’র উন্নয়নের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এই পরিকল্পনা ভারতে হর্সশ্যু ক্র্যাব বা রাজকাঁকড়ার বেঁচে থাকা এবং সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
হর্সশু কাঁকড়া সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য
রাজকাঁকড়া কাঁকড়ার চেয়ে মাকড়সার বেশি কাছাকাছি।
রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত আছে কারণ এতে হিমোসায়ানিন নামক একটি বিশেষ পদার্থ রয়েছে যা অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে।
রাজকাঁকড়া প্রায় ৪৫ কোটি বছরেরও বেশি সময় পৃথিবীতে টিকে আছে এবং পাঁচটি গণবিলুপ্তি থেকে বেঁচে গেছে।
তাদের চোয়াল নেই; তারা তাদের খাবার চিবনোর জন্য বিশেষ উপাঙ্গ ব্যবহার করে।
তাদের চোখ অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে পায়।
তারা নষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুনরুৎপাদন করতে পারে।
রাজকাঁকড়ার রক্ত ব্যাকটেরিয়ার জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পরীক্ষা করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আধুনিক ওষুধের জন্য এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের সংরক্ষণের ইতিহাস খুব উৎসাহব্যাঞ্জক না হলেও এবার অন্তত আশা করা যায় যে ভারতবর্ষ থেকে রাজকাঁকড়া চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবার আগে অন্তত একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
(www.theoffnews.com Horseshoe crab tag Orissa tag)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours