দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:
বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসব হবে ১১ মার্চ মঙ্গলবার। এবারও গতবারের মতো সাবেকি প্রথায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বসন্ত উৎসব। বিশ্বভারতী আয়োজিত বসন্ত উৎসব নিয়ে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন, বিশ্বভারতীর ফিনান্স অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) অমিত হাজরা, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার, শান্তিনিকেতন কর্মী মন্ডলীর যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস রায়, সদস্য ভ্রমর ভাণ্ডারী সহ অন্যান্যরা। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বোলপুরের অ্যাডিশনাল এসপি রাণা মুখোপাধ্যায় ও বোলপুর দমকল বিভাগের ওসি সৌরভ মন্ডল। বসন্ত উৎসব যাতে সুষ্ঠু ও সফলভাবে আয়োজন করা যায় সেজন্যই এদিনের এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল বলে বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন জানান, বিশ্বভারতী নিজস্ব ঘরানায় বসন্ত উৎসব পালন করবে সেখানে যাতে করে কোনও বহিরাগতরা প্রবেশ না করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সবাই ঐতিহ্য মতো পোশাক পরবে। বোলপুরের অ্যাডিশনাল এসপি রাণা মুখোপাধ্যায় জানান, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ ও ১১ মার্চ দুদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। রঙের ব্যবহার হবে না। ওয়াচ টাওয়ার, ক্যাম্প হবে। আমরা সচিত্র পরিচয় পত্রের জন্য ব্যবস্থা করতে বলেছি। গৌর প্রাঙ্গনের অনুষ্ঠানে সম্ভবত প্রাক্তনীদের প্রবেশ থাকছে না।
জানা গেছে, একমাত্র বিশ্বভারতীর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্তরাই অংশ গ্ৰহণ করতে পারবে। উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, গৌর প্রাঙ্গন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, এখানে কয়েক ঘন্টার অনুষ্ঠানে পাঁচ লক্ষ জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। পৌষ মেলা হয় মেলার মাঠে। সেখানে ৬ দিন ধরে মেলা হয়েছে। তাই জনসমাগমের সংখ্যা ভাগ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী সাধারণত দোলের দিন বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে না। আশ্রমে বসন্ত উৎসবের সাথে যুক্ত নয় কোনও ধর্মীয় অনুষঙ্গ। তাছাড়া 'হেরিটেজ' তকমা রক্ষার্থে এবারও বিশ্বভারতী বেশি সতর্ক। ১১ মার্চ পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, আশ্রমিকদের নিয়ে বসন্তোৎসব করবে বিশ্বভারতী। সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ বহাল থাকছে।
২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এই 'হেরিটেজ' তকমা রক্ষা করতে এবার সতর্ক বিশ্বভারতী। স্বাভাবিক ভাবে দোল পূর্ণিমার দিন হচ্ছে না বসন্তোৎসব। দোল পূর্ণিমা ১৪ মার্চ৷ তার কয়েক দিন আগে ১১ মার্চ বসন্তোৎসব পালন করবে বিশ্বভারতী। কারন একটাই, ১৪ মার্চ শান্তিনিকেতনে পর্যটকদের ভিড় থিক থিক করে৷ তাই ওই দিন বসন্তোৎসব করলে বহিরাগতরা আশ্রমে প্রবেশ করতে পারে৷
অতীতে বিশ্বভারতীতে বসন্তোৎসব হতো আশ্রম মাঠে৷ আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কয়েক ঘন্টা লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হত৷ উৎসবের সূচনার পরেই বহিরাগতদের তাণ্ডবের সাক্ষ্মী বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, আশ্রমিক, শান্তিনিকেতনবাসী সকলেই৷ এই আশ্রম মাঠ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চৈতি বাড়ি, গৌরপ্রাঙ্গণ, ঘন্টা তলা, কালো বাড়ি, রামকিঙ্কর বেইজের মূল্যবান ভাস্কর্য প্রভৃতি। তাতেও আবির ছুঁড়ে দেওয়া হতে পারে৷ এছাড়া অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে , বসন্তোৎসব শেষে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসজুড়ে মিলত মদের রাশি রাশি বোতল, প্ল্যাস্টিক প্রভৃতি। এমনকি, বহিরাগতদের হেনস্থার শিকারও হতে হয়েছে বিশ্বভারতীর বহু ছাত্রীকে। এই বিশ্বভারতী বর্তমানে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। এই হেরিটেজ তকমা রক্ষার্থে আর বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার দিয়ে বসন্তোৎসব করতে চায় না বিশ্বভারতী। তাই এবারও বিশ্বভারতীর বসন্তোৎসবে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবেন না৷
রবীন্দ্রসংগীত ও নৃত্যের মধ্যদিয়ে পড়ুয়ারা উদযাপন করবে বসন্তোৎসব। প্রসঙ্গত, শেষবার ২০১৯ সালে আশ্রম মাঠে হয়েছিল বসন্তোৎসব। ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উৎসব। ২০২১ সাল থেকে তৎকালীন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বসন্তোৎসবে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন৷ এমনকি, ভিড় এড়াতে দোলপূর্ণিমার দিন বসন্তোৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
(www.theoffnews Basanta Utsav Shantiniketan Visva Bharati)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours