দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:
মৌলবাদের দৌলতে বাংলাদেশের লোকশিল্পী রাহুল আনন্দের প্রিয় জলের গানের বাড়িটি আর নেই। নেই রাহুল আনন্দের সন্তান-সম ত্রিশ হাজার বাদ্যযন্ত্র। এবার সেই মৌলবাদের ছায়া বীরভূমের নলহাটি ২ ব্লকের কুমার ষাণ্ডা গ্ৰামে। কুমার ষাণ্ডা গ্ৰামের একটি পৌরাণিক বিশিষ্টতা আছে। বহু পুস্তকে বর্ণিত আছে যে, এই কুমার ষাণ্ডা গ্ৰামে বনবাস পর্বে বারা গ্ৰামে মহাভারতের পঞ্চ পাণ্ডবরা আশ্রয় নেয়। আর এই কুমার ষাণ্ডার পথ ধরে তাদের নিষ্ক্রমন হয়। সেখানে আজও স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমন স্মৃতি বিজড়িত জায়গা থেকে উঠে এলো এমন মৌলবাদী ফতোয়া। বাদ্যযন্ত্রে ফতোয়া নিয়ে অবশ্য নেই কোনও স্পষ্টিকরণ।
সেটা হতে পারে একতারা, হারমোনিয়াম বা ঢাক ঢোল ইত্যাদি। কুমার ষাণ্ডা গ্ৰামের এক মাদ্রাসায় বসে ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের বৈঠক। সেখানে স্থির হয় বিয়ে হোক কিংবা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান, গ্রামে কোনরকম বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না। নিষিদ্ধ মদ, গাঁজা সহ যে কোনও মাদক দ্রব্য। মদ, গাঁজা সহ যে কোনও মাদক দ্রব্যর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ভালো দৃষ্টান্ত। কিন্তু এর সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রে নিষেধাজ্ঞায় সবাই বাংলাদেশের মৌলবাদের ভূত দেখছেন। তাও যদি ডিজে বা মাইক্রোফোন জনিত শব্দ দূষণের কথা বলা হতো, তার একটা যুক্তি পাওয়া যেত। কিন্তু শনিবার এমনই অদ্ভুত ফতোয়া জারি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ সীমান্তে বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের কুমার ষান্ডা গ্রামে।
এদিন কুমার ষান্ডা গ্রামের মাদ্রাসায় বৈঠকে বসেন গ্রামের গণ্যমান্যরা। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গ্রামে বিয়ে, খতনা, কিংবা যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। কেউ বাজালে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। সেই সঙ্গে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে। অর্থাৎ তাকে মসজিদে যেতে দেওয়া হবে না। তার জানাজায় কেউ যাবে না। সেই সঙ্গে গ্রামে মদ প্রবেশ করা যাবে না। গণ্যমান্যদের এই ফতোয়া অবশ্য মেনে নিয়েছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, “গ্রামে বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না। মদ খেয়ে মাতলামি, জুয়া খেলা সব বন্ধ। গ্রামের মুরুব্বিদের এই সিদ্ধান্ত সকলে মেনে নিয়েছি।”
এনিয়ে নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের বিডিও রজত রঞ্জন দাস বলেন “আমার কাছে এরকম কোনও অভিযোগ জমা পরেনি। আমি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।” রামপুরহাট মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, "এরকম ভাবে কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না বলে নির্দেশ দিতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।" এদিকে বীরভূমে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো নিয়ে অনেকেই মৌলবাদের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে।
ন-পাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রিপন শেখ বলেন, “আমার কাছে এরকম কোনও খবর নেই। ওই গ্রামে আমাদের সাংসদ শতাব্দী রায়ের কার্যক্রম রয়েছে। গ্রামবাসীরা যদি এরকম কোনও সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমাদের মেনে নিতে হবে।”
(www.theoffnews.com Kumarshanda village madrasah)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours