সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:
একদা রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতা একটি কথা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছিলেন, 'ইউজফুল ইডিয়েটস' বা উপযোগী বোকা। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ তথা পদ্মশ্রী স্বপন দাশগুপ্ত সেই লেনিনকে স্মরণ করে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসের উদ্দেশ্যে গতকাল উচ্চারণ করলেন, 'উনি হলেন ইয়ুজফুল ইডিয়েটস!'
গতকাল কলকাতার যাদুঘর লাগোয়া আশুতোষ বার্থ সেন্টিনারি প্রেক্ষাগৃহে একটি আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। 'বাংলাদেশের সংঙ্কট' শীর্ষক আলোচনাটির আয়োজক ছিল 'খোলা হাওয়া' নামক একটি সংগঠক। সভা পরিচালনা করেন বিজেপির যুব নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা। বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বপনবাবু ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের প্রিন্সিপাল পঙ্কজ রায় এবং মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজের অধিকর্তা স্বরূপপ্রসাদ ঘোষ প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় বীনা সিক্রি বলেন, 'বাংলাদেশে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পিছন থেকে ছুড়ি মেরেছে ওপার বাংলার তিনটি সমন্বয়ের গোষ্ঠী। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের দোসর রাজাকারেরা, মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন সহ মুসলিম লীগ এবং বিএনপি একযোগে এই ছাত্র আন্দোলনকে নিজেদের কব্জায় তালুবন্দি করে। পরিণতি হলো শেখ হাসিনা সরকারের পতন। বর্তমানে ইউনুস প্রশাসনের তো কোনও আইনি বৈধতাই নেই। ভারত সরকার চুপ করে বসে নেই। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের দেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির উপর তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে। তাছাড়া শেখ হাসিনাকে এদেশে আশ্রয় দিয়ে ভারত তার নিজস্ব অবস্থানের কথা সারা দুনিয়ার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে।'
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ জানান, 'যুদ্ধ হাতের মোয়া নয় যে যখন চাইবে তখন প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে যাবে ভারত। বাংলাদেশ ভারতের চিকেন নেক সম্পর্কে অনেক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। ভারত সামরিক শক্তিতে পৃথিবীর চতুর্থ স্থানে। তাই আমাদের দেশের সংযম দেখানোর দায়িত্বটা অনেক বেশি। তাছাড়া বাংলাদেশ আমাদের শত্রু দেশ নয়। এখানকার অতি সক্রিয় ভারত বিরোধী মৌলবাদীরা ভারতের চিহ্নিত শত্রু। মুজিবর রহমানের পরবর্তী সময়ের যে সমস্ত সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে একমাত্র শেখ হাসিনার প্রশাসন ভারত সীমান্তে উত্তেজনা অনেক বেশি পরিমাণে হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই ভারতের দুর্বলতা তো শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি স্বাভাবিক কারণেই বজায় থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবু আমরা চাইবো, বাংলাদেশে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা শান্তিপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।'
স্বপনবাবুর কথা প্রসঙ্গে স্বরূপপ্রসাদবাবু মন্তব্য করেন, আমরা যদি ১৯৭১ সালকে একটা সূচক ধরি তাহলে ২০২৫ সালে এসে দেখতে পাবো বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের সংখ্যা তিন গুণ হ্রাস পেয়েছে। উল্টোদিকে ভারতে এই সময়কালের মধ্যে সংখ্যালঘুদের অবস্থান দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যান বলে দেয় কোন দেশে সংখ্যালঘুরা অধিক সুরক্ষিত। বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু মৌলবাদীদের লাগাতার অত্যাচারে সেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রায় শুন্য হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানো তাগিদের সময় এসে গেছে। বাংলাদেশ যে ভাষায় কথা বলবে ভারতের উচিৎ সেই ভাষাতেই উত্তর দেবার।'
সবশেষের বক্তা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী আলোচনা প্রসঙ্গে কিউ আক্ষেপ করেন, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সমগ্র বিশ্বের দরবারে এক নতুন দৃষ্টান্তের আইকনে পরিণত হয়েছিল। অথচ ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের আমলে সেই অর্থনৈতিক বিকাশ আজ শশ্মানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের জায়গায় বিশ্বাসটাই বিলুপ্তির পথে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের বহু ভারতবন্ধু মুসলিম প্রাণের ভয়ে এদেশে লুকিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভারত সরকারের কাছে আবেদন, যাঁরা ভারতবন্ধু অথচ প্রাণহানির আশঙ্কায় এদেশে আসছেন তাঁদের যেন আশ্রয় দেওয়া হয় মানবিক কারণে। সেখানে শুধু ধর্মটা বিবেচ্য হওয়া উচিৎ নয়। তবে একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের এখনই দেশছাড়া করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও শুভেন্দুবাবু মত প্রকাশ করেন।
(www.theoffnews.com seminar)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours