দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

রাত পেরোলেই মকর স্নান। কেন্দুলির কদমখণ্ডির ঘাটে মকর স্নান উপলক্ষ্যে জয়দেব মেলার উদ্বোধন করলেন পশ্চিমবঙ্গ গ্ৰামীন উন্নয়ন পর্ষদ সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অসিত মাল, সিউড়ী বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী, জয়দেব মেলা কমিটি সভাপতি তথা জেলাশাসক বিধান রায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প, বস্ত্র ও কারাগার মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা প্রমুখ। হাতে একতারা নিয়ে জেলাশাসক বিধান রায় বাউল গান "ওপারেতে বর্ধমান। এপারেতে বীরভূম "গেয়ে আসর মাতালেন। প্রায় আড়াইশো আখড়া অজয় নদের পাড়ে। বিকেল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যদিয়ে জয়দেব কেন্দুলি মেলার উদ্বোধন করলেন অনুব্রত মণ্ডল। বরেণ‍্য লোক সঙ্গীত শিল্পী লক্ষণ দাস বাউল প্রমুখ। মেলায় থাকছে পর্যাপ্ত পুলিশি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিপর্যয় মোকাবেলা টিম, স্বাস্থ্য বিভাগের পুরো টিম। কদম খণ্ডির স্নানের ঘাটে যাতে কেউ ডুবে না যায় সেদিকে নজর রাখতে থাকছে সিভিল ডিফেন্স। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, মুখ‍্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো মেলায় যাতে কোনও মানুষের অসুবিধা না হয় সেটা দেখার জন‍্য তৎপর জেলা প্রশাসন। সাধু সন্ত আউল, বাউল, কীর্তনীয়া ও সাধারণ মানুষ মেলায় আসেন। মেলায় পানীয় জল, আলো ও ২১৪টি স্থায়ী শৌচালয়, ৬টি স্নানের ঘাট। ভালোই হবে। সকাল ৯টা বেজে ০৩ মিনিট থেকে সকাল ১০ বেজে ৪৮ মিনিট পর্যন্ত হবে মকরস্নান। 

উল্লেখ্য, লোভাতুর মানুষের আগ্রহ – ‘জয় দেব – পদ্মাবতীর প্রেমের পদ্ম অজয় নদে ভেসে আসবে’ এবং তারা সেটি দেখে ধন্য হবে। এই আশায় বহু পূন্যার্থী আসেন জয়দেব মেলায়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিদ্যাপতি ও রাজা শিব সিংহের স্ত্রী লছমি দেবীর লৌকিক প্রেমের কাহিনী। জয়দেব – কেন্দুলির কবি জয়দেব কবি জয়দেব পদ্মাবতীর কাহিনী ছড়িয়ে আছে জয়দেব – কেন্দু বিল্বের মাটির প্রতিটি ধূলি কনায়। তাই কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক পূন্যার্থী মকর সংক্রান্তির পূন্য লগ্নে স্নান করতে আসেন অজয় নদে। এবারও সেই উপলক্ষে জয়দেবে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন সাধু সন্তরা। তবে প্রতিবারের মতো এবারও আউল বাউলের মেলা নামে সমধিক পরিচিত এই মেলা কীর্তনীয়াদের কাছে কোণঠাসা। সরকারী তৎপরতায় ম্যাসেঞ্জার থেকে প্রচূর জল ছাড়া হয় আগত পূন্যার্থীদের স্নানের জন্য।  

প্রচুর কীর্তনের আখড়া এবার মেলায়। এই মেলা কলার কাঁদির জন্য বিখ্যাত। অনেক কলার কাঁদি বিক্রিও হয় এদিন। জয়দেব মেলার মূল আকর্ষন জয়দেবের জন্মভিটায় অবস্থিত রাধা বিনোদ মন্দির। প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়,  জয়দেবের যুগোল কিশোর মুখোপাধ্যায় বর্ধমানের রাজা কৃষ্ণ রাম রাজের সভাকবি ছিলেন। তাঁর অনুরোধে কবি জয়দেবের জন্ম ভিটায় বর্ধমানের মহারাণী ব্রজ কিশোরী ১৮৬৩ সালে রাধা বিনোদ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কবি জয়দেব এই মন্দিরে রাধা মাধবের মূর্তি স্থাপন করেন। সেটি আজও পূজিত হয়। যে আসনে বসে কবি মোক্ষ লাভ করেন, সেটি আজও যত্ন সহকারে রাখা আছে। এই মাটিতে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে যুগোল কিশোর মুখোপাধ্যায়ের পরিবার রাধা বল্লভ নামে আরেকটি মন্দির স্থাপন করেন। গীত গোবিন্দের রচয়িতা জয়দেব দ্বাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলার রাজা লক্ষণ সেনের সভা কবি ছিলেন। তখন জয়দেব – কেন্দুলি সেন পাহাড়ি পরগণার অন্তর্গত ছিল। এই মেলার মূল আকর্ষন বাউল কীর্তন ছাড়াও রাধা বিনোদ মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার উৎকীর্ণ শিল্প। যার মধ্যে ফুটে উঠেছে রামায়ণের কাহিনী।

(www.theoffnews.com Kenduli makarsnan fair Joydeb)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours