সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

 একদা একটি গ্রামে দুটি ছেলে বাস করত যারা ছিল ন্যাংটো বেলার বন্ধু। কালক্রমে তাদের মধ্যে একজন গ্রাম ছেড়ে চলে যায় আর কালে কালে একজন সাধু হয়ে ওঠে কিন্তু অন্য বন্ধু বড় হয়ে চোর হয়, এখানে ওখানে চুরি করে জীবিকানির্বাহ করতে থাকে।  

একদিন হঠাৎ ওই সাধু তার গ্রামে ফিরে আসে। সেটা অবশ্য তখন আর আগের গ্রাম নেই, শহর হয়ে গেছে। সেখানকার লোকেদের জন্য সাধুবাবার একটা বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। অন্য সব লোকেদের পাশাপাশি তার শৈশবের বন্ধুও সাধুর বক্তৃতা শুনতে আসে। 

সাধুবাবা তার বন্ধুকে এক নজরেই চিনে ফেলে তাকে কাছে ডেকে নিজের কাছে বসায়।

বক্তৃতা শুরু হয়। প্রত্যেকেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনে। বক্তৃতা যখন সমাপ্ত হয় করতালিতে সভাস্থল মুখর হয়ে ওঠে।  

করতালি থামার পর সাধু মহারাজ নিবেদন করেন, “এই গ্রাম আমার জন্মভূমি। এখানে আমি একটি আরোগ্য নিকেতনের পত্তন করতে চাই যাতে দশ লক্ষ টাকা খরচ হবে আর আমার আশা যে আজকেই এই প্যান্ডেল থেকে আমি সেই অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হবো। আপনাদের কাছে একটি টুকরি আসবে, দয়া করে আপনাদের যতটা সম্ভব ততটা টাকা ওটাতে রাখুন”।  

সাধুবাবার সেই বন্ধুও দান করার জন্য তার পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে ফেলল।

জনতা মুক্ত হস্তে দান করতে শুরু করল। দু লাখ, পাঁচ লাখ, দশ লাখ টাকা উঠে গেল কিন্তু তখনও ঝুড়িটা লোকের কাছে কাছে ঘুরতে থাকল।

সন্ন্যাসীর বন্ধু ভাবল – এরমধ্যেই এত টাকা যখন উঠে গেল তখন আমার এই সামান্য টাকার আর কী প্রয়োজন আছে। সে ভাবল পাঁচ হাজারই যথেষ্ট।

শীঘ্রই ঝুড়িতে পনেরো লাখ টাকা জমা পড়ে গেল। সেটা দেখে পাঁচ হাজারের বদলে বন্ধু এবারে দানের পরিমাণ পাঁচ হাজার থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করে দিল।  

কিছুক্ষণের মধ্যেই কুড়ি লাখ টাকা সংগ্রহ হয়ে গেল আর ঠিক তখনই, আচমকা, লোডশেডিং হয়ে গেল।

টুকরিটা যখন বন্ধুর কাছে এলো, সে ভাবল যে দানের লক্ষ্যের দ্বিগুণ টাকা যখন উঠেই গেছে তখন এক হাজার টাকাই বা দিই কেন? সে তৎক্ষণাৎ টাকাটা ফের তার পকেটে চালান করে দিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সভার সমাপ্তি হল আর বেশিরভাগ শ্রোতা প্যান্ডেল থেকে চলে গেল।

বন্ধুও উঠে পড়ে সাধুজীর সঙ্গে চলতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে বন্ধু সাধুবাবার জনপ্রিয়তা আর মঙ্গলকর কাজের জন্য প্রশংসা করতে থাকল। সে বলল, “কী অপরূপ তোমার বক্তৃতা! মানুষের ওপর কী বিস্ময়কর তোমার প্রভাব! তুমি দশ লক্ষ চাইলে আর কুড়ি লক্ষ টাকা উঠে গেল!”

গুরুজী খানিকক্ষণ চুপ করে শুনলেন, তারপর বললেন, “আমি বুঝতে পারছি না এটা আমার জিজ্ঞেস করা উচিৎ কি না কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে তুমি কত টাকা দান করেছ?”

বন্ধু উত্তর দিল, “এক কানা কড়িও নয়”।

সন্ন্যাসী বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “তাহলে আর আমার বক্তৃতা তোমার ওপরে কী প্রভাব সৃষ্টি করতে পারল? আমার একমাত্র বন্ধুকেই আমি একটা ভাল কাজের জন্য দান করাতে অনুপ্রাণিত করতে পারলাম না”।

বন্ধু বলল, “মোটেই তা নয়। যখন কারেন্ট চলে গেল তখন হাত নিসপিস করছিল ঝুড়িটা থেকে কিছু মাল ঝেড়ে দিতে কিন্তু আমি পারলাম না। এটা তোমার প্রবচনের কারণেই একমাত্র সম্ভব হল।"

মূল কথা: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে নরকবাস

(www.theoffnews.com story)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours