সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

জিরাট শহরে অভয় তার বাবা-মার সঙ্গে থাকে আর কিন্তু দাদু-ঠাকুমা থাকে বহুদূরে নবদ্বীপ শহরে। গরমের ছুটিতে অভয়ের বাবা-মা তাকে প্রতি বছর নিয়ম করে দাদু-ঠাকুমার কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ১৫-২০ দিন থাকে তারপরে তারা ফিরে আসে। অভয় ওখানে থাকতে ভীষণ ভালবাসে।

এই ধারা বজায় আছে বহু বছর ধরে।

সময় যায়, অভয় বড় হয়। একদিন কিশোর অভয় বাবা-মাকে আবদার করে বলে, “আমি এখন বড় হয়ে গেছি, আমি একাই দাদুদের কাছে যেতে পারব। এবার থেকে আমাকে একা ছেড়ে দাও।”

বাবা-মা তো প্রথমে কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না কিন্তু অভয় যখন জেদ ধরেই রইল, তারা বাধ্য হয়ে মেনে নিল। কিন্তু তারা বিপদের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে রইল। সেইজন্য, একা সফর করতে হলে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ সে সব তারা তাকে পাখিপড়া করে শেখাতে লাগল। 

অবশেষে সেই দিন চলেই এলো যেদিন অভয় একা একা দাদুর বাড়ি যাবে।

অভয়কে বিদায় জানাতে তার বাবা-মা তার সঙ্গে ইস্টেশানে এলো। অভয় যখন ট্রেনের কামরায় নিজের সিটে আরাম করে বসল তখনই তারা বাবা-মা ট্রেনের কামরা থেকে নিচে নেমে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষা করতে লাগল।

প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে করতে অভয়ের বাবা ট্রেনের কামরার জানালার পাশে গিয়ে অভয়ের সঙ্গে কথা বলতে লাগল। কথা বলতে বলতে তার বাবা জানালা দিয়ে হাত গলিয়ে তার হাতে একটা লেফাফা দিয়ে বলল, “বাছা, কোনও কারণে যদি তুমি শঙ্কিত বা আতঙ্কিত বোধ করো তাহলে এটা খুলে পড়বে। এটা তোমার মনে আবার সাহস ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।”

অভয় খামটি যত্ন করে তার পকেটে রেখে দিল আর বাবা-মাকে বিদায় জানাল। ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা শোনা গেল।

অভয় হাসতে হাসতে বাবাকে বলল, “আমার সব মনে আছে। একদম দুশ্চিন্তা করো না।”

ট্রেন ছাড়ার সবুজ সিগনাল হয়ে গেল।

যে ইস্টেশনেই ট্রেন দাঁড়ায়, লোক ওঠানামা করে। অভয় চুপচাপ সবকিছু দেখে। সে দেখে প্রত্যেকের সঙ্গে কেউ না কেউ আছে, তার নিজেকে খুব একা মনে হতে থাকে।

একটা ইস্টেশনে একজন বিশাল চেহারার লোক কামরায় ওঠে। জীবনে এই প্রথম একা সফর করা অভয় লোকটাকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। চোখ বুজে ঘুমোবার চেষ্টা করে কিন্তু লোকটার কথা মনে হতেই তার বুক দুড়দুড় করে ওঠে।

তখন আচমকা তার বাবার চিঠিটার কথা মনে পড়ে যায়। সে তার পকেটে হাত দিয়ে খামটা বের করে খুলে চিঠিটা পড়ে।

বাবা তাতে লিখেছেন – “ভয় পেও না। আমি তোমার সঙ্গেই আছি, পাশের কামরাতেই।”

চিঠিটা পড়েই অভয়ের মুখ জ্বল জ্বল করে ওঠে আর সব ভয় ভীতি নিমেষে দূর হয়ে যায়।

শিক্ষাঃ আমাদের জীবনই এইরকমই। ভগবান যখন আমাদের এই ধরাধামে পাঠিয়েছেন তখনই তিনি আমাদেরকে চিঠি দিয়ে দিয়েছেন যেটাতে লেখা আছে – “দুঃখিত বা ভীত হয়ো না। আমি সর্বদা, সর্বসময় তোমার সঙ্গে আছি। আমি তোমার যাত্রাপথের সারা সময় তোমার সঙ্গে থাকব। আমাকে মন থেকে ডাক, আমি নিমেষে হাজির হবো।”

সুতরাং, দুশ্চিন্তা করবেন না। আতঙ্কিত হবেন না। হতাশ হবে না। ভগবানে বিশ্বাস রাখুন। প্রতি পলে। আমাদের যাত্রাপথে তিনি সদাসর্বদা আমাদের সঙ্গেই আছেন। অন্তিম নিঃশ্বাসটুকু পর্যন্ত। শুধুমাত্র এইভাবটি অন্তরে ধরে রাখার চেষ্টা করে চলুন। বাকী সবকিছু ভগবানের হাতে ছেড়ে দিন যাঁর সম্মতি ছাড়া এই চরাচরে একটি পাতাও নড়ে না।

(www.theoffnews.com God bless you)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours