সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

রবি আর কবি নামে দুটো ভীষণ দুষ্টু ছেলে ক্লাস ফাইভে পড়তো আর দুজনে একসঙ্গেই স্কুলে যেত।

একদিন, রবি কবিকে বলল, “ভাইরে, আমার মাথায় একটা মতলব এসেছে… দেখবি আমাদের আর কালকে ক্লাস করতে হবে না।”

কবি ভীষণ আগ্রহে বলে উঠল, “আমাকে বল না…মতলবটা কী?” 

রবি একদিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো, “ওই দিকে দেখ, তিনটে ছাগল চরছে, দেখতে পাচ্ছিস?”

কবি অবাক হয়ে বলল, “তার সঙ্গে স্কুলের কী সম্পর্ক?”

রবি বলল, “আজকে ইস্কুলে যখন ছুটি হবে, তখন আমরা সবার শেষে ইস্কুল থেকে বেরবো আর বাড়ি চলে আসার আগে এই ছাগলগুলোকে ধরে ইস্কুলের ভেতরে ছেড়ে দিয়ে যাব…আর কাল ইস্কুল খোলার পরে সবাই তাদের খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট করবে আর আমাদের পড়াশোনা ডকে উঠবে।”

কবি বলল, “ওই ধাড়ি ধাড়ি ছাগলগুলোকে খোঁজা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়… আছে মাত্র তিনটে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওগুলোকে সবাই পেয়ে যাবে আর আমাদেরও আবার পড়া শুরু করতে হবে…”

রবি মুচকি হেসে বলে, “অত সহজে ওদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তুই শুধু দেখে যা আমি কী করি…”

এরপরে দুই বন্ধুই ইস্কুল শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে রইলো। সবাই ইস্কুল থেকে চলে যাওয়ার পর তারা ছাগল তিনটেকে ধরলো আর তাদেরকে ক্লাসরুমের ভেতরে নিয়ে এলো।

সেগুলোকে ভেতরে নিয়ে আসার পর রবি বলল, “এবার, আমি এদের গায়ে নম্বর দিয়ে দেব,” আর সে তাদের গায়ে নম্বর লিখতে শুরু করল। 

প্রথম ছাগলটার গায়ে লিখল – ১ নম্বর

দ্বিতীয় ছাগলটার গায়ে লিখল – ২ নম্বর

তৃতীয় ছাগলটার গায়ে লিখল – ৪ নম্বর

কবি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এটা কী করলি? ৩ নম্বর ছাগলের গায়ে ৪ নম্বর লিখে দিলি কেন?”

হাসতে হাসতে রবি বলল, “আরে ওটাই তো আমার ফন্দি… কাল খেলা জমে যাবে দেখবি… সারাদিন ধরে সবাই তিন নম্বর ছাগলটাকে খুঁজবে কিন্তু সেটা কোনদিনই খুঁজে পাওয়া যাবে না…।”

পরের দিন দুই বন্ধু ইস্কুলে যথারীতি হাজির হল। খানিকক্ষণের মধ্যেই একটা ক্লাসরুমে ছাগলের ব্যা ব্যা ডাকে সবার পড়াশুনো মাথায় উঠল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা ইস্কুলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। সকলে মিলে ছাগল খুঁজতে শুরু করলো আর তিনটে ছাগল খুঁজে বের করতে পারলো…। 

কিন্তু তারপরেও মাস্টার আর ছাত্ররা খুঁজতেই থাকলো কেন না তারা তিন নম্বর ছাগলটা খুঁজে পায়নি।

তিন নম্বর ছাগলটাকে খুঁজে পেতে চেষ্টার কসুর করা নয়া হলেও ওই ছাগলটাকে কোনও দিনই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি…! এখনও সকলে উদ্বিগ্ন কিন্তু রবি আর কবির খুশি আর ধরে না, কারণ স্রেফ বুদ্ধির জোরে তারা একটা গোটা ছাগলকে গায়েব করে দিয়েছে।   

গল্পটা পড়ার পর হয়তো এটা ফালতু বলে মনে হতে পারে কিন্তু এটার অন্তর্নিহিত বার্তা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। 

কিছু না কিছু নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তা করার কোনও দরকার আছে কি? আমাদের জীবনে যা কিছু আছে তাই আমাদের জীবনকে সুখী আর সম্পূর্ণ করতে যথেষ্ট। 

কিন্তু তাও আমরা কিছু না কিছুর সন্ধান করে বেড়াই আর সেটা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়… হতেই পারে যে আমরা যে সোনার হরিণের সন্ধান করে বেড়াচ্ছি তা হয়তো ওই তিন নম্বর ছাগল বা শ্রোডিঙ্গারের বেড়ালের মতো, বাস্তবে যার কোনও অস্তিত্বই নেই।

(www.theoffnews.com happiness)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours