সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
একেই বলে, নিজের বলবৎ করা আইন নিজেই অমান্য করে।
হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। অনেকটা বাঘের ঘরে ঘোগের বাসার মতো অবস্থা যাকে বলে। এ'প্রসঙ্গে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে আলোচনার আতস কাঁচের নিচে অবশ্যই টেনে আনা যায় সিজিএসটি বা 'সেন্ট্রাল গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স'কে।
দেশের আইন অনুসারে ২৬৯ এসটি ধারা অনুযায়ী একদিনে ভারতীয় মুদ্রায় নগদে দুই লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন করা যায় না। অন্যথায় সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি লেনদেন হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে। অনন্ত কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় সুপারিশেই এমনতর আইন দেশব্যাপী লাগু করা হয়েছে। অথচ জিএসটি (গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স)'র রেভিনিউ আদায়ের একটি অতি বিশেষ ক্ষেত্রে এই নিয়মকে মানেই না কেন্দ্রীয় অর্থ দফতরের সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সিজিএসটি। প্রয়োজন পড়লে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ২৬৯ এসটি ধারা উপেক্ষা করে একদিনে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়।
বিষয়টা এরকম, জিএসটি সংক্রান্ত রেভিনিউ সঠিক মাত্রায় আদায়ের জন্য সদা জাগ্রত সারা দেশের সিজিএসটি'র সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। যাতে কেউ বা কোনও সংস্থা জিএসটি ফাঁকি না দিতে পারে তার জন্য নানা সময়ে বিভিন্ন জায়গায় সিজিএসটি আধিকারিকেরা নিয়মিত অভিযানও চালিয়ে থাকেন। এমনকি ক্ষমাযোগ্য রকমারি আকর্ষণীয় নিয়মানুযায়ী স্কীমও লাগু করা হয়েছে রেভিনিউ আদায়পর্ব সম্পূর্ন পর্যায়ে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে। তবু এতো কিছু প্রচেষ্টার পড়েও জিএসটি ফাঁকি দেবার প্রবণতা সারা দেশেও এখনও উল্লেখযোগ্য হারে বিদ্যমান থেকে গেছে।
এ'বিষয়ে কলকাতা জোনের চিফ কমিশনার (সিজিএসটি) শ্রাবণ কুমার বলেন, "জিএসটি ফাঁকি রুখতে আমাদের হামেশাই বিভিন্ন গোপন সোর্সের উপর নির্ভর করতে হয়। আমরা শেষ তিন মাসের মধ্যে আটশো কোটি টাকার ফাঁকি দেওয়া জিএসটির রেভিনিউ আদায় করেছি। এই কান্ডে এখনও পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।" সোর্সদের কি কোনও উপহার দেওয়া হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, না আমরা কখনই প্রকাশ্যে কোনও সফল সোর্সকে প্রকাশ্যে উপহার প্রদান করি না। এ'ব্যাপারে সোর্সের ব্যক্তি সুরক্ষার কথা পর্যালোচনা করে পুরো বিষয়ে চুড়ান্ত গোপনীয়তা আমরা মেনে চলি। বিনিময়ে আমরা সোর্সকে নগদ টাকা হাতে হাতে প্রদান করি পুরস্কার হিসেবে। সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক লেনদেন ও ডিজিটাল পেমেন্ট আমরা এড়িয়ে চলি। সোর্সের সুরক্ষার স্বার্থে। এমনও উদাহরণ আছে একদিনে একত্রে নগদে আমরা কোটি টাকার উপরে পুরস্কৃত করেছি কোনও কোনও সোর্সকে। মোট আদায়কৃত রেভেনিউয়ের দশ শতাংশ থেকে কুড়ি শতাংশ অর্থ আমরা নগদে পুরস্কার হিসেবে ধার্য করি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একইসঙ্গে তিনি এও বলেন, "কেউ গোপনে অভিযোগ করলেই আমরা নগদ পুরস্কার দিই না। অভিযোগটা যথার্থ ও প্রমাণ সাপেক্ষ কিনা সেটা যাচাই করতে হয়। আবার এমনও দেখা গেছে কেউ জিএসটি রেভিনিউ প্রদান করার আগে নগদে কমিশন পুরস্কার প্রাপ্তির লোভে ড্যামি সোর্স দাঁড় করিয়ে দেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। সেক্ষেত্রে আমরা ড্যামি সোর্স পুরোপুরি এড়িয়ে চলি। তাছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠানকে আমরা সোর্স হিসেবে নগদ পুরস্কার দিই না। সোর্স আমাদের কাছে পুরোটাই ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়।"
প্রায় একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল কলকাতা নর্থের অ্যাডিশনাল কমিশনার (সিজিএসটি) প্রকাশ বোরগোহেনের কন্ঠে। তাঁর বক্তব্য, "যথার্থ সোর্সকে আমরা নূন্যতম দশ শতাংশ নগদ অর্থ পুরস্কার দিয়ে থাকি। সর্বোচ্চ কুড়ি শতাংশ দেওয়া হয়। নালিশের মান, প্রামাণ্য নথি ও রেভিনিউ আদায়ের আর্থিক সংখ্যার ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদানের শতাংশের পরিমাণ নির্ভর করে। আবার আগের থেকে চলমান কোনও তদন্তের উপর পুরস্কার কাউকে দেওয়া হয় না। জিএসটি ফাঁকি সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নতুন অভিযোগকেই স্রেফ পুরস্কারের আওতায় আনা হয়।" গোপনীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কোনও সোর্স আমাদের দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট আধিকারিকই সোর্স সম্পর্কে সংযোগ রক্ষা করেন। এখানে অন্য কোনও আধিকারিকের ভূমিকা একদম থাকে না। সোর্সের নাম ও ঠিকানা রেকর্ড করারও রীতি নেই দফতরে। দু'টি বিশেষ ফর্মে নালিশের বিস্তারিত নথিভুক্ত করা থাকে। আর সোর্সের একমাত্র ফিঙ্গার প্রিন্ট ওই ফর্মে নেওয়া হয়। একটি ফর্ম গচ্ছিত রাখা হয় সোর্সের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী আধিকারিকের কাছে। অন্যটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় নয়াদিল্লির সদর দফতরের সিজিএসটি কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েটের কাছে। আসলে সোর্সের পরিচয় সম্পর্কে আমরা সর্বোচ্চ স্তরে গোপনীয়তা বজায় রাখি।"
গত বৃহস্পতিবার একটি আলোচনা চক্রে এহেন গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ আলোচিত হয়। মারচেন্টস চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি'র কলকাতা স্থিত নিজস্ব ভবণে '২০২৪ সালে জিএসটির ক্ষমাযোগ্য আইন' শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
(www.theoffnews.com GST CGST Chember Of Commerce)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours