সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
প্রত্নতাত্ত্বিকরা যখন সৌদি আরবের মরুভূমিতে উটের জীবন্ত-আকারের খোদাই করা প্রাচীন ভাস্কর্য আবিষ্কার করেছিলেন তখন তাঁদের মনের মধ্যে 'হাসিখুসি'র 'উট চলেছে মুখটি তুলে’ ছড়াটি গুনগুনিয়ে উঠেছিল কিনা জানা নেই তবে, তাঁদেরও নিশ্চিত করে জানা নেই এগুলো কে এবং কখন তৈরি করেছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা সৌদি আরবের নাফুদ মরুভূমির দক্ষিণ সীমান্তে বালি ওপর উঠে থাকা একটি পাথরের গায়ে এক পাল উটের খোদাই ছবি লক্ষ্য করেছেন। “আর্কিয়োলজিক্যাল রিসার্চ ইন এশিয়া” জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে এই বিস্ময়কর খোদাই ছবিটিতে এক ডজন প্রমাণ আকারের বন্য উটকে দেখা যাচ্ছে যেটি এখন বিলুপ্তপ্রায় একটি প্রজাতি যা হাজার হাজার বছর আগে আরব উপদ্বীপের মরুভূমিতে বিচরণ করতো কিন্তু কখনও বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়নি। যদিও সাহাউট নামের প্রত্নস্থলটি কোনও না কোনও সময়ে অন্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা পরিদর্শন করছিলেন কিন্তু পাথরের ওপর উটের খোদাইটি লক্ষ্য করা হল এই প্রথমবার।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ জিওএনথ্রোপলজির একজন পোস্টডক্টরাল গবেষক মারিয়া গুয়াগনিন, লাইভ সায়েন্সকে জানিয়েছেন - "আমরা অন্য একটি গবেষণাপত্র থেকে সাইটটি সম্বন্ধে জানতে পারলেও প্যানেলটি খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল কারণ এটির অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল না, আর মরুভূমি কিছু সহজ জায়গা নয়।" কিন্তু বালিয়াড়িতে ওই পাথরটিকে খুঁজে পাওয়াই একমাত্র সমস্যা ছিল না। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত উটের খোদাই ছবির ওপর বারবার নতুন খোদাই ছবির আবির্ভাব হয়ে কোন আঁচড়গুলি কোন সংস্কৃতির এবং কখন তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে নতুন রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ভীমবেটকার গুহাচিত্রগুলির মত এই পাথরটিতেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ ভিন্ন ভিন্ন শৈলীতে পুরনোর ওপর নতুন খোদাই করে পাথরটিকে ভরিয়ে দিয়েছে যেগুলির থেকে ছবিগুলি আলাদা করা বা তাদের সময়কাল নির্ণয় করা খুব কঠিন। গুয়াগনিন এও বলেছেন যে খোদাইগুলির বেশিরভাগই যেহেতু ফাটলের মধ্যে করা হয়েছিল তাই সেগুলোর ভেতরে ঢুকে রেডিওকার্বন ডেটিং করতে যাওয়া অত্যন্ত দুরূহ।
যাইহোক, পাথরটির কাছাকাছি দুটো পরিখা আর দুটো উনুনের রেডিওকার্বন ডেটিং করে মোটামুটি আঁচ পাওয়া গেছে যে সাহাউট প্রত্নস্থলটি প্লাইস্টোসিন যুগ (২৬ লক্ষ বছর থেকে ১১,৭০০ বছর আগে) থেকে মধ্য হলোসিন যুগ (৭০০০ থেকে ৫০০০ বছর আগে) পর্যন্ত এখানে প্রায়শই মানুষের বসবাস ছিল।
গুয়াগনিন জানিয়েছেন - “এই প্রত্নস্থলের তাৎপর্য বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। কাছাকাছি কোনও জলের প্রাকৃতিক উৎস নেই, তাই এমন কিছু ছিল যা প্রাচীন যুগে মানুষকে এখানে আকৃষ্ট করেছিল। সম্ভবত তাদের লম্বা সফরের রাস্তায় এটা একটা বিশ্রামের ভালো জায়গা ছিল। কিন্তু যুগের পরে যুগ কেন এটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সে বিষয়ে আমরা এই মুহূর্তে একেবারেই নিশ্চিত নই”।
সৌদি আরবে সাহাউটই একমাত্র প্রত্নস্থল নয় যেখানে উটের খোদাই পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে পশ্চিম সৌদি মরুভূমির আল-জউফ প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২০০০ বছরের পুরনো প্রমাণ আকারের উটের দলের একটি খোদাই শিল্পকর্ম আবিষ্কার করেছিলেন।
“উট কি কাঁটা বেছে খায়?” - লালমোহনবাবুর এই আইকনিক অথচ বেসিক প্রশ্ন নিয়ে হয়তো গবেষকদের মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু প্রমাণ সাইজের এই খোদাই করা উটের পাল নিয়ে তাদের গবেষণায় যেতে হবে বহু দূর! বহু দূর!
(www.theoffnews.com camel archaeology Soudi Arabia Nafud Desert)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours