সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

১৪,০০০ বছর আগে শিকারীদের একটি দল একটি হরিণের শিঙের ওপর এই ছোট্ট খোদাই কর্মটি করেছিল যাতে প্রায় জীবন্ত একটি বাইসনের প্রতিমূর্তিকে পাশ ফিরে তার গায়ের ওপর পোকার কামড়ের জায়গা চাটতে দেখা যাচ্ছে।

ফ্রান্সের সেন্ট রেমেজ-এর আব্রি দে লা ম্যাডেলিন বা ম্যাগডালিন শেল্টার নামের একটি গুহার ভেতরে আবিষ্কৃত “পোকার কামড় চাটা বাইসন” নামে খ্যাত এই প্রাগৈতিহাসিক খোদাই মূর্তিটি একটি স্তেপ উইজেন্ট (Bison priscus) বা স্তেপ বাইসনের যা বর্তমানে বিলুপ্ত। ব্র্যাডশ ফাউন্ডেশনের মতে, এটি রেইনডিয়ার বা বল্গা হরিণের শিঙের একটি টুকরো থেকে প্রায় ১৪,০০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল যা আগে শিকারের জন্য বর্শা নিক্ষেপকারী হিসেবে আদিম মানুষেরা ব্যবহার করেছিল। 

মাত্র ১০.৫ সেমি বা প্রায় ৪ ইঞ্চি চওড়া ক্ষুদ্র মূর্তি হওয়া স্বত্বেও এটিতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রচুর সূক্ষ্ম ডিটেইল ফুটিয়ে তুলে এটিকে প্রায় জীবন্ত রূপ দেওয়া হয়েছে, যেমন পশুটির শরীর জুড়ে সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা আলাদা আলাদা লোম এবং এটির মাথা থেকে নির্গত এক জোড়া শিং।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা নিশ্চিত যে এই নিদর্শনটির নির্মাতারা ছিলেন ম্যাগডালেনিয়ান সংস্কৃতির মানুষ। এটি একটি প্যালিওলিথিক সংস্কৃতি, যার অস্তিত্ব ছিল ২৩,০০০ থেকে ১৪,০০০ বছর আগে, ইউরোপের শেষ বরফ যুগে। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের মতে, এই সংস্কৃতির মানুষেরা বিশেষ ভাবে পরিচিত তাদের বিস্তৃত শিল্পকর্মের জন্য, যার মধ্যে আছে কাঠকয়লায় আঁকা গুহা চিত্র এবং পাথর এবং হাড়ের সরঞ্জাম ব্যবহার করে খোদাই শিল্প।

তারা শুধু দক্ষ কারিগরই ছিলেন না, ম্যাগডালেনিয়ান সংস্কৃতির লোকেরা বিগ-গেম শিকারেও পারদর্শী ছিলেন যারা ঘোড়া এবং বাইসন শিকারে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন। গবেষকরা মনে করেন যে যেহেতু খাবারের অভাব না থাকায় ওই সংস্কৃতির সদস্যদের শিল্প সমেত অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করার জন্য যথেষ্ট অবসর সময় ছিল।

এই প্রত্ননিদর্শনটি বর্তমানে ফ্রান্সের লেস আইজিসের প্রাগৈতিহাসিক জাতীয় জাদুঘরে (ন্যাশনাল ম্যুজিয়াম অভ প্রিহিস্ট্রি) রাখা হয়েছে।

(www.theoffnews.com Prehistoric Bison Abri De La Madeleine)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours