প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:

আরজিকর কান্ড একজনের কাজ নয়। 

একাধিক ব্যক্তি পূর্ব পরিকল্পনা করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করেছে। অর্থাৎ সংগঠিত অপরাধ চক্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অপরাধ সংঘটিত হতে পারে না নিশ্চিত বলা যায়। 

অপরাধের প্রথম দিকেই রাজ্য প্রশাসন এই অপরাধকে লোকচক্ষুর অগোচরে রাখার চেষ্টা করেছে। প্রশাসনের এই তৎপরতা সেদিনই প্রমান করেছিল এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে বড় মাথা আছে। 

সেই মাথাকে লুকানোর জন্য সিভিক সঞ্জয় রায়কে হাজির করিয়েছে প্রশাসন। সঞ্জয় অপরাধী এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু কেবলই সঞ্জয় একা অপরাধী এবিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ সেদিনও করেছি আজও করছি। অনেকেই করছেন।

এখন প্রশ্ন সিবিআই কেন প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করল না?

এর উত্তর দুটি-

প্রথমত: সিবিআই যথেষ্ট প্রমান হাতে পায়নি। কারণ ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রমান লোপাট করেছিল। (এ থেকে প্রমান হয় সংঘটিত পূর্ব পরিকল্পিত অপরাধ ও অপরাধীকে লুকিয়ে রাখার জন্য কোনও বিশেষ ব্যক্তির নির্দেশে একাজ প্রশাসন করেছিল)।

দ্বিতীয়ত: এই তদন্তে সিবিআইয়ের সদিচ্ছার অভাব দেখা গেছে। যা রাষ্ট্রের চাপ বলা যেতে পারে। রাষ্ট্র চায় ধর্ষণ। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থার প্রধান শর্ত ধর্ষককে রক্ষা করা। আমাদের দেশে এই পুরুষতান্ত্রিকতার ইতিহাস অতি সুপ্রাচীন। আজও আমাদের রাষ্ট্র চায় পুরুষশাসিত এই সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে। তাছাড়া রাষ্ট্রনেতাদের সাথে এরাজ্যের প্রশাসনের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে।সেই বোঝাপড়ার স্বার্থ রক্ষা করা রাষ্ট্র নেতাদের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ ক্ষমতার অলিন্দে ক্ষীর খাওয়া। তাই তারাও চায় না প্রকৃত সত্য উদঘাটন হোক।)

আদালত সঠিক প্রমাণের অভাবে রায় দিলেন সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। 

এবার দেখুন, আমাদের প্রশাসন এই রায়ের বিরোধিতায় নামল। তারা চাইছে সঞ্জয়ের ফাঁ|সি। 

একদম প্রথম থেকেই তাদের এই চাওয়া। 

কেন? 

তারা জানে একজনকে ফাঁসি দিয়ে দিলেই কেসটা পাকাপাকি ধামাচাপা দেওয়া যাবে। অর্থাৎ প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বাঁচিয়ে দেওয়া যাবে। 

নয়তো কখনও এই অপরাধীদের নাম সঞ্জয় বলে দিতে পারে। কেস রি-ওপেন হতে পারে। 

সেক্ষেত্রে আরজিকর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীরা যাদের ইতিমধ্যে দোষী চিহ্নিত করেছেন, তাদের জয় হবে। 

শাসকের ভয়। 

শাসক কখনও চায় না জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের জয় হোক। 

তাই তো সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে আবার তারা সোচ্চার হয়েছে। 

অদ্ভুত এক ষড়যন্ত্র। 

এসব জেনেও আমরা অনেকেই এখনও শাসকের পক্ষে। কেউ রাজ্য বা কেউ কেন্দ্রের শাসকের পক্ষে। হ্যাঁ এই সত্য। অদ্ভুত খেলা খেলছে রাষ্ট্র শক্তি। 

এইভাবেই অপরাধ ও অপরাধী যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। 

এ বড় দুঃখের ও যন্ত্রণার। 

(www.theoffnews.con RGKar rape verdict government)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours