সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
কথায় আছে, ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার।
কেন, কেন, কেন? আচমকা এমন প্রসঙ্গ কেন আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠলো?
ধীরে বস্ ধীরে। সবুরে মেওয়া ফলে বুঝলেন।
তা যাক, আসলে কি হয়েছে খোলাসা করে একটু বলুন না প্লিজ।
ঠিকই আছে, তবে শুনুন। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। তবে যা বলতে যাচ্ছি তা জানলে, অবিশ্বাসটাই জন্মাবে তাৎক্ষণিক পর্যায়ে, উল্টে অবধারিতভাবে পরামর্শ দেবেন, 'যা বলছেন তা আরও একবার নিশ্চিত হয়ে বলুন।'
আসলে ভারতের আয়কর দফতরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো টিডিএস বা ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স। আর এখানেই একটি চমকে যাওয়ার মতো তথ্য উঠে এসেছে। এই টিডিএস সংক্রান্ত দফতরের নিজস্ব রেকর্ডে ভারতীয় নাগরিকদের প্যান কার্ড সংক্রান্ত কোনও তথ্যই আক্ষরিক অর্থে নথিভুক্ত নেই। এই দফতর নিজের থেকে টিডিএস প্রদানকারী কোনও উপভোক্তার প্যান কার্ডের কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন আদতে নিজস্ব উপায়ে ট্র্যাকিং করতে পারে না। এরকম পরিস্থিতিতে টিডিএস সংক্রান্ত দফতরকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় ভারতীয় আয়কর ভবণের উপর। নিজস্ব হেফাজতে প্যান কার্ড সংক্রান্ত কোনও নথি সরাসরি না থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যাবতীয় আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে খোঁজ নিতে বহু সময়েরও অপচয় ঘটে।
এই অবাক করা সমস্যার কথা প্রকারান্তে মেনে নিলেন কলকাতায় অবস্থিত ইনকাম ট্যাক্স (টিডিএস) কমিশনার রঘুবীর মদনাপ্পা। তিনি বলেন, "এটাই সত্যি যে টিডিএস দফতরে সরাসরি ভারতীয় নাগরিকদের প্যান কার্ডের কোনরকমের কোনও তথ্য নথিভুক্ত করা নেই। কারও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে ট্র্যাকিং করার থাকলে তা আমরা সরাসরি করতে পারি না। এ'বিষয়ে কিছু জানার থাকলে আমাদেরকে আয়কর ভবণের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে হয়। আমাদের প্রয়োজনটা তাদের জানানোর পর পরবর্তী ক্ষেত্রে তারা আমাদের তা জানায়, দুই তরফের লিখিত আদান প্রদানের মাধ্যমে। যা আক্ষরিক অর্থে ডিজিটাল যুগের প্রকৃত পরিপন্থী।" এ'প্রসঙ্গে তাঁর আরও বক্তব্য, "কেন্দ্রীয় আর্থিক মন্ত্রণালয় থেকে প্যান কার্ডের বিষয়বস্তু নিয়ে সরাসরি আয়কর দফতরের বাইরে এখনও পর্যন্ত বিকেন্দ্রীকরণ ঘটানো হয়নি। সুতরাং আমাদেরও অনেক ক্ষেত্রে হাত পা বাঁধা থাকে। ইচ্ছে থাকলেও বহু ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে তাই বিলম্ব হয়। আমরাও যাতে প্যান কার্ডের যাবতীয় তথ্য নিজেদের অফিসের হেফাজতে রেখে প্রয়োজন মাফিক ট্র্যাকিং করতে পারি তার উদ্দেশ্যে আমাদের উপর মহলে দরবার করেছি। এটুকুই বলতে পারি আমরা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সবুজ সংকেত প্রাপ্তির আশায় এখন প্রহর গুনছি।"
উল্লেখ্য, কর্মীদের বেতন, ব্যাঙ্কের সুদ, পেশাদার সেবা, ভাড়া সহ বিভিন্ন পন্য ও সেবার উপর সাধারণতঃ টিডিএস লাগু করা হয়। এটি একটি আয়কর সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। একে ভারতে প্রচলিত কর কর্তন পদ্ধতিও বলা যায়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা এটি প্রতিনিয়ত সংশোধিত হতে থাকে নানান নিত্যনতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায়। টিডিএস কেটে নেওয়ার হার কিভাবে নির্ধারিত হবে তা বিভিন্ন আয়ের রকমারি উৎসের মাত্রার নির্ভর করে। যেমন বেতনের ক্ষেত্রে আয় ও শর্তের উপর নির্ভর করে ১০% থেকে ৩০% অব্দি কেটে নেওয়া হয়। সাধারণ পর্যায়ে ব্যাঙ্কের সুদ ১০% কাটা হয় টিডিএস'এর জন্য। নির্দিষ্ট সীমার উপর ভাড়ার উপর ৫% থেকে ২০% কর্তন করাই সর্বশেষ দস্তুর। আমাদের দেশে আয়কর থেকে যা আয় রাজস্ব কোষাগারে সংগ্রহ করা হয় তার একটা অন্যতম বড় অংশ আসে টিডিএস পদ্ধতির হাত ধরে।
আয়কর ভবণের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষে প্রায় ১০ কোটি ভারতীয় এই টিডিএস পদ্ধতির আওতায় নথিভুক্ত হয়ে রয়েছেন। যার মধ্যে আনুমানিক ৫ কোটি কর্মচারী তাঁদের বেতন থেকে টিডিএস কাটিয়েছেন। ৩ কোটির উপর ব্যবসায়ী ও পেশাদারও এই কর্তনের ছত্রছায়ায় এসেছেন। বিগত আর্থিক বছরে শুধুমাত্র টিডিএস খাতে ৭ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বলেও ভারতীয় আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
যেখানে টিডিএস নিয়ে সারা বছর জুড়ে সমগ্র ভারতে এমন রাজসূয় যজ্ঞ চলমান এজেন্ডা, সেখানে সংশ্লিষ্ট দফতর সম্পর্কে পিছিয়ে চলার অচলায়তন নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও তুঙ্গস্পর্শী। অনেকেরই অভিযোগ, টিডিএস কেটে নেবার পরও বহু করদাতাকেই আয়কর রিটার্ন ফাইল জমা দিতে হয়। নির্দিষ্ট ফর্মের ভিত্তিতে। টিডিএস কর্তনের পরিমানের সঙ্গে সঠিক আয়কর দেওয়ার পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখার উদ্দেশ্যে। অথচ ওই নির্দিষ্ট ফর্ম অনেকটাই একমুখী ও পুরানো ধাঁচের। স্রেফ হ্যাঁ বা না উল্লেখের অবস্থান রয়েছে। উপভোক্তার তরফে কোনও সংশ্লিষ্ট মন্তব্য ওই ফরম্যাটে উল্লেখ করার সংস্থান নেই। এই অভিযোগও যে যথার্থ তাও স্বীকার করেছেন রঘুবীর মদনাপ্পা। তিনি এ'বিষয়ে বলেন, "একদম যথার্থ অভিযোগ। বহু করদাতাকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় হামেশা। বিভিন্ন তথ্য হ্যাঁ বা না'এর উপর দিতে বাধ্য হোন তাঁরা সুনির্দিষ্ট ফর্মের জন্য। তাঁরা যেমন মন্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন বহু পরিস্থিতিতে, তেমন আমরাও তথ্য পূর্ণ ফর্ম ঘেঁটে অনেক সময় আরও বেশি মন্তব্য জানার তাগিদ বুঝতে পারি তার থেকে। সেক্ষেত্রে আমরা আবার ওই করদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধ্য হই লিখিত নানা স্তর পেড়িয়ে। এই জ্বলন্ত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।"
টিডিএস নিয়ে তাই একাংশ করদাতারা প্রকাশ্য ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন, "করদাতাদের টিডিএস সংক্রান্ত কোনও বিচ্যুতি ঘটলে তো আইনানুসারে শাস্তির বিধান তো সুস্পষ্ট। অথচ সংশ্লিষ্ট দফতরের নিয়ম তো ব্রিটিশ বিধির পুরাতনী অস্তিত্বকেও হার মানায়। আসলে টিডিএস'এর অবস্থা হলো, বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো, অবস্থা।"
গত মঙ্গলবার কলকাতার মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি'র নিজস্ব ভবণে আয়োজিত হয়েছিল একটি আলোচনা চক্র। 'টিডিএস এবং সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ' শীর্ষক এই আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন রঘুবীর মদনাপ্পা। এই আলোচনা সভায় তিনি ছিলেন প্রধান বক্তা।
(www.theoffnews.com Merchant Chamber Of Commerce & Industry TDS Seminar)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours