প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:
ভারতের ঐতিহ্য, ভারতের সংস্কৃতি, ভারতের অখন্ডতা রক্ষার জন্য আদি গুরু শঙ্করাচার্য আখড়া তৈরি করেছিলেন। আখড়া সম্পর্কে এখানে কিছু লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি।
আমি লিখছি আমাদের অতীত পরম্পরাকে সাক্ষী রেখে প্রয়াগরাজে এ বছর যে মহাকুম্ভ মেলা হচ্ছে সেই বিষয়ে। ১৪৪ বছর পর এলাহাবাদে এবছর মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কুম্ভমেলার ইতিহাস সুপ্রাচীন। আমাদের দেশে চারটি প্রধান নগরীতে ১২ বছর অন্তর কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। হরিদ্বার, এলাহাবাদ, নাসিক ও উজয়িনী সেই স্থান।
এর মাঝে ৬ বছর অন্তর অন্তর অর্ধ কুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশের সাধু সন্ন্যাসীদের সাথে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষরাও এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন।
মেলা এক কথায় মিলনের উৎসব। তাই কোনও মেলাকেই ছোট করে দেখি না। মেলার সাথে সামাজিক প্রয়োজনের ইতিহাস যেমন জড়িয়ে রয়েছে তেমনি ধর্মের ইতিহাসও জড়িয়ে থাকে। তাই মেলাকে তুচ্ছজ্ঞান করা, তাচ্ছিল্য করা আমি মেনে নিতে পারি না।
বিরোধিতা করতে হবে বলেই বিরোধীতা করলে আসলে নিজের মতাদর্শের পক্ষের মানুষজনকে বা আপনাকে অনুসরণ করেন এমন মানুষদের হারাতে হয়।
আর কবে বুঝবেন?
আমি দেখেছি এদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এই সব মেলায় অংশগ্রহণ করেন। কেউ বেচাকেনার স্বার্থে, কেউ প্রমোদের স্বার্থে, কেউবা ধর্ম ও পুণ্য লাভের স্বার্থে। অনেকেই বলছেন এই মেলায় সরকারি পয়সার অপচয় হচ্ছে। এরা কিন্তু অন্য ধর্মাবলম্বীদের মেলাকে তুচ্ছজ্ঞান করেন না। সেই মেলা নিয়ে একটা কথাও বলেন না।
যারা কুম্ভমেলাকে তাচ্ছিল্য করছেন তারা আসলে হীনমন্যতা থেকেই করছেন বলে মনে করি। অনেকেই নাগা সন্ন্যাসীদের নিয়ে লিখছেন। অবশ্যই তাঁদের লেখার অধিকার রয়েছে। তবে ভুলে যাবেন না ধর্মরক্ষার পাশাপাশি এই নাগা সন্ন্যাসীরা দেশ রক্ষার কাজেও অংশগ্রহণ করেছেন।
অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে পাবেন, নাগা সন্ন্যাসীরা মুসলমান মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ধর্মান্তরিত রুখে দিয়েছিলেন মুঘল আমলে। এরাই আবার ব্রিটিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন।
কামনা বাসনা লোভ মোহ ত্যাগ করে হিমালয়ে বা গহীন অরণ্যে তপস্যা করেন এঁনারা।
আপনি আমি তো মশাই ভোগবাদী।
সব সময় নিজের চিন্তা, পরিবারের চিন্তায় ব্যস্ত।
এনারা সবকিছু ত্যাগ করেছেন। এমনকি বস্ত্রখন্ডও। এই ত্যাগীদের ত্যাগ অস্বীকার করেন কি করে?
আপনি আমি একটা নিমন্ত্রণ বাড়িতে ছেঁড়া জামা বা একটু পুরানো জামা পড়ে যেতেও লজ্জা পাই। এনারা ছাই ভস্ম মেখে বস্ত্র ত্যাগ করে কারুর ক্ষতি না করে, কাউকে ধর্মান্তরিত না করে আপনার প্রিয়র চিন্তায় মগ্ন থাকেন। আপনার ও দেশের দশের মঙ্গল কামনা করেন।
ক্ষতি কি?
আপনার বাড়া ভাতও এঁনারা ছিনিয়ে নিচ্ছেন না তো।
আপনি যুক্তিবাদী, ভোগবাদী, অমুক, তমুক যাই হোন তাতেও এঁনারা কিছু বলেন না। কিন্তু আপনি বলছেন।
তফাৎ এই জায়গায়।
এই জায়গাতেই ওনারা জয়ী।
ত্যাগ, মোহমুক্ত জীবনযাপন, হিংসা কুৎসা বর্জিত জীবন যাপন এক দিন আপনি করে দেখান। একাজ করলেই আপনি নিজের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন। কাজটা কতটা কঠিন কাজটায় কত নিষ্ঠা লাগে।
সবশেষে কুম্ভ মেলার সফলতা কামনা করছি।
(www.theoffnews.com Mahakumbh mela Naga saints)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours