সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

সুকুমার রায় পালোয়ান ষষ্ঠীচরণের খাদ্যতালিকা জানিয়ে দিয়েছেন বলে আমরা সে যুগে পালোয়ানদের খাবার সম্বন্ধে এত বিশদে একটা আন্দাজ পাচ্ছি –

খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ হাতি লোফেন যখন তখন,

দেহের ওজন উনিশটি মণ,শক্ত যেন লোহার গঠন। সকাল বেলার জলপানি তার তিনটি ধামা পেস্তা মেওয়া,

সঙ্গেতে তার চৌদ্দ হাঁড়ি দৈ কি মালাই মুড়্কি দেওয়া।

দুপুর হলে খাবার আসে কাতার দিয়ে ডেক্চি ভরে, 

বরফ দেওয়া উনিশ কুঁজো সরবতে তার তৃষ্ণা হরে।

বিকাল বেলা খায় না কিছু গণ্ডা দশেক মণ্ডা ছাড়া, 

সন্ধ্যা হলে লাগায় তেড়ে দিস্তা দিস্তা লুচির তাড়া।

কিন্তু ডাইনোসররা কী খেয়ে এত বড় হয়েছিল? তখন তো আর এনার্জি ড্রিঙ্ক ছিল না! তারা কীভাবে তাদের চেহারা দিয়ে পৃথিবীতে আধিপত্য অর্জন করেছিল এতদিন সেটা অজানা ছিল। তাদের মলমূত্রের ফসিল নিয়ে নতুন গবেষণাগুলি এতদিনের সেই অজানা রহস্য উদ্ঘাটন করেছে।  

আনুমানিক ২০ কোটি বছর আগে, ট্রায়াসিক এবং জুরাসিক ভূতাত্ত্বিক যুগের মধ্যে পরিবর্তনের সময়, ডাইনোসরগুলি ডাঙার বাস্তুতন্ত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সময়ের মধ্যে, তারা শুধু চেহারাতেই বিরাটাকৃতি হয়নি, তারা অন্যান্য সরীসৃপদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে পৃথিবীর ধরাপৃষ্ঠের বৃহত্তম প্রাণী হয়ে উঠেছিল।

তাদের বিবর্তনের এই বিস্ময়কর পর্যায়টি আরও ভালভাবে বোঝার জন্য, একদল গবেষক কপ্রোলাইট বা জীবাশ্ম মলমূত্রের (যা বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্রোমালাইট নামে পরিচিত) শত শত টুকরো বিশ্লেষণ করেছেন, যার ফলে ডাইনোসরের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায় এবং চারপাশের পরিবেশের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়ার বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁরা জানতে পেরেছেন।

ইউআইটি-এ নরওয়ের আর্কটিক ইউনিভার্সিটি মিউজিয়ামের ডক্টরাল ছাত্র এবং বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী জোয়েল ভিকবার্গ ওয়ার্নস্ট্রোম, পোল্যান্ড, সুইডেন এবং হাঙ্গেরির বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে ট্রায়াসিকের শেষের দিকে এবং জুরাসিক যুগের প্রথম দিকে কে কাকে খেয়েছিল তা বোঝার জন্য ব্রোমালাইটগুলি এক অনন্য, ব্যতিক্রমী পাথুরে প্রমাণ।

ওই গবেষক দল পোল্যান্ডে কয়েক বছর ধরে কাজ করার সময় ৫০০টিরও বেশি ব্রোমালাইট সংগ্রহ করেছে। তারপরে তাঁরা এই জীবাশ্মগুলির ভেতরে স্ক্যান করতে সিঙ্ক্রোট্রন বিকিরণ নামে পরিচিত একটি উন্নত এক্স-রে কৌশল ব্যবহার করেন। স্ক্যানগুলি তাঁদেরকে অত্যন্ত বিস্তারিত ভার্চুয়াল ত্রি-মাত্রিক মডেল তৈরি করতে সাহায্য করেছে, যেগুলিতে গবেষকরা ডাইনোসরদের খাবারের অজীর্ণ উদ্ভিদের টুকরো এবং প্রাণীর অবশেষ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

ওয়ার্নস্ট্রোম জোর দিয়ে বলেছেন যে এই মলমূত্রগুলি এত অবিশ্বাস্য রকম নিখুঁতভাবে  সংরক্ষিত হয়েছিল যে সেই সময়ের খাদ্য শৃঙ্খলে ডাইনোসরদের জায়গা সম্পর্কে অনেক সঠিক তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। হাড় এবং কঙ্কালের ফসিলের চিরাচরিত গবেষণার বদলে, যার থেকে ডাইনোসরের খাবার এবং আচরণ সম্বন্ধে খুব অল্পই জানা সম্ভব, ব্রোমালাইটগুলি সরাসরি এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশগত মিথস্ক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি হল ডাইনোসররা কিভাবে ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্রের উপর আধিপত্য বিস্তারকারী দৈত্য হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে ডাইনোসররা ছিল ক্ষুদ্রকায় প্রাণী যারা পোকামাকড় এবং মাছ খেয়ে জীবনধারণ করত। ওয়ার্নস্ট্রোম ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে পরবর্তীকালে মাংসাশী ডাইনোসররা একটি বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, যার ফলে অন্যান্য পরিবর্তনের পাশাপাশি তারা বিশালাকার প্রাণী হয়ে উঠতে পেরেছিল এবং তারা লম্বা ঘাড় এবং পাখির মতো পা-ওলা বিশাল তৃণভোজী ডাইনোসরদের শিকার করতে সক্ষম হয়েছিল যারা গাছপালার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিল।

এই বিবর্তন পরিবেশগত পরিবর্তনের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিল। গাছপালার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বড় তৃণভোজী ডাইনোসরের আবির্ভাব ঘটে, যেমন লম্বা গলার প্রজাতি এবং অর্নিথিসিয়ান। এই প্রাণীগুলি আবার উল্টোদিকে বৃহত্তর এবং আরও বিশেষ শিকারী প্রাণীর বিবর্তনে ইন্ধন যোগায়।

ব্রোমালাইটের বিশ্লেষণ শুধুমাত্র এই অগ্রগতিকে নিশ্চিত করে না বরং জুরাসিক যুগে এই প্রাণীরা কীভাবে তাদের বাসস্থান এবং খাদ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল, জুরাসিক যুগে নিজেদেরকে স্থলভূমিতে পরাক্রমশালী প্রজাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল সে বিষয়ে নতুন ধারণারও জন্ম দেয়।

এই গবেষণার ফলাফলগুলি দেখায় যে ডাইনোসরের বিবর্তন একটি সরল রৈখিক প্রক্রিয়া ছিল না বরং একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশে ধারাবাহিক অভিযোজনের একটি পরম্পরা ছিল। ছোট শিকারী থেকে শুরু করে যে দৈত্যাকার ডাইনোসরদের আমরা সবাই জানি, তাদের বিবর্তনীয় সাফল্য তাদের খাবারে বৈচিত্র্য আনার সঙ্গে এবং নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল।

(www.theoffnews.com gaint dynasore)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours