সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্যশালী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম বলা হয় কম্বোডিয়াকে। এখানে থাকা আঙ্কোরভাট মন্দিরকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম মন্দির। নব্বইয়ের দশক থেকে সেই কম্বোডিয়া ও আঙ্কোরভাটকে নিয়ে গবেষণা করেছেন পুরাতাত্ত্বিক ড্যামিয়েন ইভান্স। গবেষণা করতে গিয়ে আঙ্কোরভাটের কাছে একের পর এক মধ্যযুগীয় শহরও আবিষ্কার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার এই গবেষক। পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় লেজার স্পেস টেকনোলজির প্রয়োগের অন্যতম পথিকৃৎও বলা হয় তাঁকে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে ব্রেন লিম্ফোমায় আক্রান্ত হয়ে প্যারিসে প্রয়াত হন তিনি।
গবেষকেরা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্পর্কে এত দিনের প্রচলিত ধারণা অনেকটাই বদলে গিয়েছিল ড্যামিয়েন ইভান্সের একের পর এক আবিষ্কারে। আঙ্কোরভাটের অদূরে ৯০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গড়ে ওঠা অনেকগুলি প্রাচীন শহরও আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ইভান্সের গবেষণায় সুপারভাইজ়ার হিসাবে ছিলেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রোলান্ড ফ্লেচার। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফ্লেচার জানিয়েছেন, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সময়ে বৃহত্তর আঙ্কোরভাটের বিস্তৃত মানচিত্র পেশ করেছিলেন ইভান্স। তার পরে ফ্লেচার ও ইভান্সের পরিচালনায় শুরু হয়েছিল ‘গ্রেটার আঙ্কোরভাট প্রজেক্ট’-এর। পরে সেই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিলেন ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফ পটিয়ের। তাঁদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় ওই অঞ্চলের একটি নতুন সামগ্রিক মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল।
ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যালিসন কার্টারের সঙ্গে ড্যামিয়ানের দেখা হয়েছিল ২০০৮ সালে। অ্যালিসন ইভান্সের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘ড্যামিয়ান অসাধারণ লেখক ও সম্পাদকও ছিলেন।"
সিয়েম রিপ-আঙ্কোর নামক স্থানে ‘ওভারিজ রিসার্চ সেন্টার’ তৈরি করেছিল সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর ছিলেন ইভান্স। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইভান্স ওই দায়িত্ব সামলেছেন। এই সময়েই আকাশ থেকে ছবি তোলা ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির ব্যবহার করে আঙ্কোরভাটের মানচিত্র তৈরি হয়েছিল। তার পরে পর ইভান্স প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায় সর্বপ্রথম আকাশ থেকে অত্যাধুনিক লেজার স্ক্যানিং প্রযুক্তি (লিডার) ব্যবহার করেন। এই প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে বৃহত্তর আঙ্কোরের মাটির তলায় অনেক প্রাচীন শহর ও কৃষি বসতির মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
২০১৪ সালে ‘কম্বোডিয়ান আর্কিয়োলজিকাল লিডার ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্প শুরু করার জন্য ‘ইউরোপিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল’ থেকে অনুদান পেয়েছিলেন ইভান্স। সেই সুবাদেই তাঁর কর্মক্ষেত্র ফ্রান্সে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরের বছর তাঁর গবেষক দল একটি হেলিকপ্টারে একটি লেজার রেডার লাগিয়ে কাম্বোডিয়ার বিস্তীর্ণ জঙ্গলাকীর্ণ অংশে সমীক্ষা চালিয়েছিল। আজ পর্যন্ত আকাশপথে যতগুলি পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষার কাজ হয়েছে তার মধ্যে এটিকে বৃহত্তম বলা হয়।
মৃত্যুর আগে লিডার ব্যবহার করে কী ভাবে প্রাচীন শহরগুলির মানচিত্র তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ইভান্স। সে জন্যও ‘একল ফ্রান্সেইস দ্য এক্সত্রেমে ওরিয়েন্ত’ এও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
(www.theoffnews.com Damien Evans Australian Canadian archaeologist Angkor Wat Temple)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours