সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

অগুনতি নগদ অর্থ ঘরে গচ্ছিত রাখতে পারলেও স্বর্ণালঙ্কারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। সোনার গয়না মজুত করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আপনাকে মানতেই হবে। তবে গৃহে রূপোর গহনা ও হিরে মজুতের বিষয়েও নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনামা এখনও পর্যন্ত জারি হয়নি। অনন্ত দেশের আইন মোতাবেক তো এটাই বর্তমান দস্তুর।

সাম্প্রতিক কালে আমাদের রাজ্যে সহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রদেশে হামেশাই আয়কর দফতর ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর (ইডি) হানা দেয় নানাবিধ ব্যক্তিবর্গের বাড়িতে। এমনকি হানাদারেরা অধিকাংশ আবাস থেকে বাজেয়াপ্ত করে থাকেন বিশাল অঙ্কের বেআইনি নগদ অর্থ ও লুকিয়ে রাখা অবৈধ স্বর্ণালঙ্কার। আর এই ছাপা মারার প্রচেষ্টা যত বেশি তরান্বিত হয়েছে তত বেশি করে উৎসুক ছাপোষা নাগরিকদের মনে এখন একটাই জিজ্ঞাসা, কত পরিমাণ সর্বাধিক নগদ অর্থ ও সোনার গয়না তাঁরা নিজেদের ঘরে জমা রাখতে পারবেন আইন সম্মত ভাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে কলকাতার বিশিষ্ট আইনজীবী রমেশ কুমার পাটোদিয়া দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, "একজন ভারতীয় নাগরিক তাঁর নিজস্ব ঘরে যে কোনও বড় অঙ্কের নগদ অর্থ মজুত করে অবশ্যই রাখতে পারেন। তবে নিজের দায়িত্বে তা তাঁকে রাখতে হবে। এটা তো তাঁর নাগরিকত্বের অধিকার। তবে এখানে একটা শর্ত মানতেই হবে। তা হলো আয়ের সঙ্গে ঘরে গচ্ছিত অর্থের সঙ্গতি থাকা অত্যন্ত আবশ্যক। অন্যথায় গৃহে থাকা উক্ত অর্থ বাজেয়াপ্ত হওয়াটাই ভারতীয় আইন।" রমেশবাবু আরও উল্লেখ করেন, আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নগদ অর্থ যেমন যত খুশি গৃহে জমা রাখা সম্ভব, তেমনই সোনার গয়নার ক্ষেত্রে যত মন চাইবে সেই পরিমাণে আবাসে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। ভারত সরকারের এখানে একটা পরিমাণ বেঁধে দিয়েছেন। তা লঙ্ঘন করলে অতিরিক্ত পরিমাণ সোনার গহনা বাজেয়াপ্ত করতে পারে আয়কর দফতর। তাঁর স্পষ্ট মন্তব্য এ'প্রসঙ্গে, একজন বিবাহিত ভারতীয় মহিলা সর্বাধিক পাঁচশো গ্রাম ওজনের সোনার গয়না নিজের ঘরে সঞ্চয় করে রাখতেই পারেন। অবিবাহিত নারী আড়াইশো গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালঙ্কার ঘরে নিজের হেফাজতে অনায়াসেই রাখতে পারবেন। জনপ্রতি পুরুষ নিজের ব্যবহারের জন্য একশো পঁচিশ গ্রাম পর্যন্ত সোনার অলঙ্কার বাড়িতে রাখতে সক্ষম। এই পরিমাণের বেশি ঘরে রাখতে গেলে আয়কর দফতরকে আগাম নির্দিষ্ট কারণ দর্শাতে হবে নিজের থেকে। অন্যদিকে রূপোর ভূষণ ও হিরে ঘরে সর্বাধিক কত পরিমাণ মজুত করা যাবে বিনা বাধায় তা নিয়ে দেশের আইনে আক্ষরিক ভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা এযাবৎ জারি হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কলকাতার অপর নামজাদা আইনজীবী এস এম সুরানা বাণিজ্যে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দেন, ব্যবসায়িক ঠিকানা যেন কোনও ভাবেই নিজের আবাসস্থল না হয়। এতে জটিলতা বাড়বে বইকি কিন্তু তা কমবে না। অনেক ব্যবসায়ী আর্থিক সংকোচনের কথা ভেবে বা যাতায়াতের সহজলভ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে পেশাগত দফতর নিজস্ব বাড়ির ঠিকানাতেই স্থাপন করেন। এটা একটা মস্তবড় ভুল পদক্ষেপ। তিনি বলেন, "ব্যবসার লেনদেন জাত অসঙ্গতি কোনও ভাবে ধরা পড়লে এবং ব্যবসার দফতর বাসস্থান ব্যতিরেকে অন্যত্র থাকলে আয়কর ভবণ থেকে সরাসরি অভিযান চালানো হতে পারে সংশ্লিষ্ট অফিসে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীর ঘরে হানা দেবার সুযোগ কম থাকে। কিন্তু অফিস বাড়ির ঠিকানায় দেখানো থাকলে আয়কর দফতর অফিস ও বাড়ি একযোগে সরাসরি ঢুকে তদন্ত শুরু করতে পারে।"

'আর্থিক বিষয়ক ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক হানাদারী ও বাজেয়াপ্তকরণ এবং তার আইনি সীমাবদ্ধতা' প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে রমেশবাবু আরও জানান, ব্রিটেন ও আমেরিকার থেকে আমাদের দেশে এই সংক্রান্ত আইন অনেক বেশিমাত্রায় সরলীকরণ করা হয়েছে। ইউরোপের ওই দুই দেশের আইনানুসারে, একশো বছরের পুরনো কোনও অবৈধ আর্থিক লেনদেন নিয়েও যে কোনও অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে আইনের আতস কাঁচের তলায় টেনে আনতে সক্ষম তদন্তকারী সংস্থা। সেক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ভারতে মোটামুটি ভাবে বিগত ছয় বছরের হিসেবের খতিয়ান খতিয়ে দেখার দৃষ্টান্তই বেশি মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত। তিনি জানান, সকল ব্যবসায়ীকে সঠিক নিয়ম মেনে আইটি রিটার্ন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দেওয়া উচিৎ। সেই পরিস্থিতিতে এধরণের ঝামেলা সহজেই এড়ানো সম্ভব। আজকাল ডিজিটাল যুগ। প্যান কার্ড ও আধার নম্বর সকল লেনদেনের সঙ্গে প্রায় সংপৃক্ত। ফলে আয়কর ফাঁকি দেওয়া প্রকৃতই দূরূহ। এছাড়াও আয়কর দফতরের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও অনুসন্ধান বিভাগ এখন অত্যন্ত আধুনিক। সুতরাং ওঁদের চোখ এড়ানোর প্রয়াস আর জেগে দিবাস্বপ্ন দেখা সমার্থক ব্যপার। এছাড়া কারোর দ্বারা লুকানো নিয়ম বহির্ভূত অর্থের অধিকার হলো একমাত্র দেশেরই। আর দেশের অর্থ কারও অন্যায় ভাবে ব্যবহার করার এক্তিয়ার নেই এই ভারতে বলে রমেশবাবু মনে করেন।

অন্যদিকে আর্থিক নিয়মের কথা স্মরণ করিয়ে এস এম সুরানা মন্তব্য করেন, "যদি কোনও ভাবে হিসাব বহির্ভূত অর্থ আকস্মিক পর্যায়ে কারও হস্তগত হয়, সেক্ষেত্রে আয়কর দফতর বা ইডি'র হাত থেকে বাঁচার অন্তরায়ও রয়েছে। সেক্ষেত্রে মোট নিয়ম বহির্ভূত গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ আয়কর দফতরকে জানাতে হবে। আর সামগ্রিক অর্থের ২৫% নিজের হেফাজতে রেখে বাকি ৭৫% আয়কর দফতরে জমা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক।"

গত শুক্রবার কলকাতার ভারত চেম্বার অফ কমার্স ও প্রতিষ্ঠানের লেডিস ফোরামের যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয় উক্ত বণিকসভার ভবণে। সেখানেই বক্তব্য রাখেন উপরিউক্ত দুই আইনজীবী সহ উদ্যোক্তাদের তরফে এন জি খৈতান, রেনুকা শাহ, সুজাতা শেঠ প্রমূখ।

(www.theoffnews.com Bharat Chamber Of Commerce Kolkata)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours