সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(রাঢবঙ্গের নদীসমূহ)

এই অঞ্চল জুড়ে পশ্চিম থেকে পুব দিকে বয়ে চলেছে অনেকগুলো নদী। এদের বেশির ভাগই শেষমেষ হুগলি নদীতে গিয়ে মিশেছে। এদের মধ্যে দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, মুণ্ডেশ্বরী, রূপনারায়ণ, কংসাবতী আর সেই সাথে অজয় নদী বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া রয়েছে গন্ধেশ্বরী, কোপাই, কুনুর, কুমারী ইত্যাদি। এগুলো অনেকটাই বৃষ্টিসম্বৃদ্ধ। বাঁকুড়া জেলার বুক চিড়ে যে নদীগুলো বয়ে চলেছে তার মধ্যে প্রায় উত্তর সীমানা বরাবর যে নদীটি রয়েছে সেটি হ’ল দামোদর। জেলার মাঝ বরাবর রয়েছে দ্বারকেশ্বর। এর প্রায় সমান্তরাল ভাবে বয়ে চলেছে শিলাবতী বা শিলাই। শিলাবতী আবার দ্বারকেশ্বরের সাথে যুক্ত। তার দক্ষিণে কংশাবতী। দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, মুণ্ডেশ্বরী রূপনারায়ণের সাথে যুক্ত হয়ে হুগলি নদীতে যুক্ত হয়েছে। আবার কংসাবতী হলদী নদীর সাথে যুক্ত হয়ে হুগলি নদীতে যুক্ত হয়েছে। এগুলো বেশির ভাগই পশ্চিমের পাহাড়ী নদী। বৃষ্টির জলে এরা তেড়ে ফুড়ে ওঠে। গ্রীষ্মে এদের খাতে বালির চর জেগে ওঠে। নদী হয়ে যায় প্রায় শুষ্ক আর সরু। এছাড়াও রয়েছে কিছু শাখা নদী যেমন, গন্ধেশ্বরী, কুখরা, বিরাই ইত্যাদি। 

এ ধরণের নদী সম্বৃদ্ধ অঞ্চলে যে ধরণের বনভূমি তৈরি হয়েছিল সেখানে ছিল শাল, পলাশ, মহুয়া, কেন্দ, কুসুম, গামার জাতীয় বৃক্ষের সমাহার। প্লাইস্টোসিন সময়কালের কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর হদিস পাওয়া গেছে। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ বিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশকে যে জীবাশ্মগুলো পেয়েছিলেন, তা থেকে জানা যায় যে এই জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে ছিল সেই সময়ের হাতি, মহিষ, ঘোড়া বা গাধা জাতীয় প্রাণী, গরু ইত্যাদি। সি১৪ বিশ্লেষণ থেকে পণ্ডিতেরা বলেছেন যে ৪০,০০০ বছরেরও আগে থেকে এই সব অঞ্চলে বিলুপ্ত হস্তী প্রজাতি এবং প্রাচীন গবাদি পশুর মত পশু বাস করত। এমন একটা পরিবেশ যে প্রাচীন মানুষের বসবাস করার পক্ষে সুবিধাজনক হবে সেটা সহজেই বোঝা যায়। তখনকার মানুষের জনবসতি গড়ে উঠেছিল ছোট নদীগুলোর ধার দিয়ে। বনভূমিতে শিকারের উপযুক্ত পশুর অভাবও ছিল না। তাই সেই প্লাইস্টোসিন সময়কাল থেকেই প্রাচীন মানুষের জনবসতি এসব অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। (ক্রমশঃ)

(www.theoffnews.com Bankura River)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours