প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:
একটি মালায় সুতো ও পুঁতি একে অন্যের পরিপূরক। সুতো ছিঁড়লে পুঁতি মূল্যহীন, আবার পুঁতি ভেঙে গেলে বা রঙ চটে গেলে সুতোও মূল্যহীন। অর্থাৎ মালাটিও মূল্যহীন।
পরিবারে আমরা সকলে ঠিক ওই মালাটির মতো। পরিবারের প্রধান পিতা ও মাতা। এঁনারা ঠিক যেন ওই সুতোটি। আমরা অর্থাৎ সন্তান, সন্তান পত্নী, নাতি, নাতনিরা ওই পুঁতি।
সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে। না না।
সংসার সুখী হয় সকলের গুনে। সকলের ব্যবহার, আচার, আচরণ প্রভৃতির মাধ্যমে। সকলের সুস্থতা ও সংসার সুখী হওয়ার অন্যতম শর্ত। সংসারে কেউ একজন অসুস্থ হলে দেখবেন, পুরো পরিবারটি অসুস্থ হয়। সকলেই কেমন দুর্বল হয়ে পড়ি।
আমি ভারতীয় সভ্যতার একান্নবর্তি সংসারের কথা বলছি। বিদেশে এই শৃঙ্খলা নেই। বর্তমান ভারতবর্ষে অবশ্য এই শৃঙ্খলার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
যা অমঙ্গলজনক।
এই সংসার আবার সমাজের ক্ষুদ্রতম ইউনিট। সমাজও ওই মালার মত হলে সমাজ ব্যাধিগ্রস্থ হয় না। শ্রমিক, কৃষক, রাজমিস্ত্রি, ছুতোর মিস্ত্রি, সাফাই কর্মী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি সব মানুষ এক একটি পুঁতি। প্রত্যেকের গুরুত্ব অপরিসীম।
একজন ডাক্তার বা একজন শিক্ষক শ্রদ্ধেয়। তবে তাকে বিশেষ গুরুত্ব আমি দিই না। আমি একজন সবজি বিক্রেতা বা সাফাই কর্মীকে যে গুরত্ব দিই ঠিক ততটাই গুরুত্ব দিতে চাই একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক বা উকিলকে। এই সমাজে আমারও গুরুত্ব একজন পথ শ্রমিকের থেকে কোনও অংশে বেশি নয়।
যদি একজন শিক্ষকের গুরুত্ব একজন সাফাই কর্মীর থেকে বেশি হয়, তাহলে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। যা আজ খুব দ্রুত ঘটছে। একজন ডাক্তারকে যদি আপনি বলে কথা বলি, তাহলে একজন রিকশা শ্রমিককেও আপনি বলেই সম্বোধন করবো। কারন এনাদের কাউকে ছাড়াই কেউ পূর্ন নন।
প্রত্যেকে ওই মালার এক একটা পুঁতি। একটা পুঁতির রঙ চটে গেলে মালাটি যেমন বাতিল হয়, ঠিক তেমনি সমাজের কোনও এক পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিকে অবহেলা করলে সমাজটা পচে যায়।
সমাজটা কলুষিত হয়।
সমাজ কলুষিত হলে রাজ্য, দেশও কলুষিত হয়।
তাই আমাদের কর্তব্য ওই মালার সুতো, প্রত্যেক পুঁতির যত্ন নেওয়া। এবং সম মর্যাদায়।
(www.theoffnews.com chain equality)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours