দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:

মা ঠাকুমার কাছে শেখা সূচিশিল্প আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে মমতাজ বেগমকে। বিশ্বক্ষুদ্র বাজারে প্রায় পঞ্চাশটি স্টলে হাতের কল্কায় সমৃদ্ধ প্রতিটি সম্ভার যেন এক একটি নকসী কাঁথার কাহিনি। কথায় বলে, ব‍্যবসায়িক বুদ্ধি হাওয়া বুঝে চলে। সেই বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তাঁর লোকশিল্প সম্ভারে স্থান করে নিয়েছে রাজ‍্যের সেরা প্রকল্প কন‍্যাশ্রী থেকে সবুজসাথী। রেশমের কাপড়ে ডিজাইন করা নকশাই সুতোর নিপুণ সূচিশিল্পে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন কন‍্যাশ্রীদের, সবুজসাথীদের। সেখানে লেখা রয়েছে প্রকল্পের নামও। এই প্রকল্পগুলো যাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত, রয়েছে তাঁর ছবিও। অর্থাৎ নিঁখুত হস্ত শিল্পে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের পূর্ণ অবয়ব চিত্র।  

সোমবার শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজারের উদ্বোধন হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক বিধান রায়, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন প্রমুখ ব‍িশিষ্টরা। এই বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজারের বাইশ -তেইশ নম্বর স্টলে আছে মমতাজ বেগমের হাতের কাজের জিনিস পত্রের বিপুল সম্ভার। কাঁথা স্টিচ, বুটিক শাড়ি থেকে দোপাট্টা সবই আছে সেখানে। জানা গেছে, শুধুমাত্র নিজের আর্থিক প্রতিষ্ঠা লাভ নয়, বাইশশো মহিলাকে স্বনির্ভর করে তুলতে পেরেছেন মমতাজ বেগম। আর এই কাজে পাশে পেয়েছেন স্বামী আমজাদ মিঞা এবং ছোট ছেলে রবিউল মিঞাকে। 

কার্পাস ও রেশম সুতোয় বোনা কাপড়ের কার্পাস-বোনা অংশে মুগা এবং তসর সিল্কে রিপু ও সাটিন ফোঁড়ে কাশিদার বুটি তোলা এমন অনেক নিপুন সূচি কর্মের সন্ধান রয়েছে এই স্টল গুলোতে। টান করে কাপড় সেঁটে তার ওপর সূচ দিয়ে সোনা-রূপার মতো ঝকঝকে চোখ ধাঁধানো "কারচব" হস্তশিল্প মমতাজ বেগমের আঙুলের ইশারায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। তার নমুনা দেওয়াল সাজানোর জন‍্য বিভিন্ন হ‍্যাঙ্গিং ক্রাফ্টেও। দেওয়াল ক্রাফ্টের কদর শিল্পরসিকদের কাছে বরাবরই আছে। তাঁর এই হস্ত শিল্পর স্বীকৃতিতে মমতাজ বেগম জেলা স্তরে ছয়বার পুরস্কৃত হয়েছেন। দু'দুবার সরকারি খরচে আমেরিকায় প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করেছেন। মমতাজ বেগমের বাড়ি বোলপুরের নতুন পুকুরে সাত নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর বড়ো ছেলে আহমেদ মিঞা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। আঠারো নম্বর ওয়ার্ডে বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজারে তাঁর ওয়ার্কশপ আছে। সেখানেই বাইশশো মহিলা কাজ করেন। তিনি  মাস্টার ট্রেণার হিসেবে বহু মহিলাকে হাতের কাজ শিখিয়ে তাঁদের আয়ের পথ সুগম করে দিয়েছেন। কাপড় ও সুতো শিল্পীদের দেওয়া হয়। মমতাজ বেগমের স্বামী ও ছোট ছেলে কাপড়ের উপর নকশা এঁকে দেন। সেই নকশার উপর শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা। একটি শাড়িতে এমব্রয়ডারি কাজ তুলতে একমাস থেকে তিনমাসও লাগে। প্রতি মহিলা গড়ে মাসিক তিন হাজার টাকা উপার্জন করেন, বলে তিনি জানান। নিজ প্রচেষ্টায় তাঁর মতো একজন মহিলার উত্তরণের কাহিনী গর্ব করার মতো বলে মন্তব্য করেন তাঁর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আভা লোহার।

(www.theoffnews.com Poush Mela Shantiniketan)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours