সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

দক্ষিণ আফ্রিকার লোককথা

[The cloud cisticola or tink-tink cisticola]

(টিঙ্ক-টিঙ্কে পাখিকে অ্যাঙ্গোলা, সোয়াতিনি, লেসোথো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জাম্বিয়াতে দেখতে পাওয়া যায় এবং এর প্রাকৃতিক বাসস্থান হল উপক্রান্তীয় বা গ্রীষ্মমন্ডলীয় শুষ্ক নিম্নভূমি তৃণভূমি।)

পাখিদের সবার মনোগত বাসনা যে ওদের একজন রাজা থাকুক। মানুষদের রাজা আছে, পশুদেরও আছে, তাহলে তাদেরই বা থাকবে না কেন? সবাই এক জায়গায় জড় হল।

একজন  চীৎকার করে বলল, “উটপাখি, কেন না সে সবার থেকে বড়”।

“না, ও উড়তে পারে না।”

“ঈগল, গায়ের জোরের জন্য।”

“না, না, ও খুব কুৎসিত”।

“শকুন, কেন না সে সবার চাইতে ওপরে উড়তে পারে।”

“না, শকুন খুব নোংরা, ওর গায়ে বিশ্রী গন্ধ।”

“ময়ূর, কী সুন্দর দেখতে!”

“ওর পাগুলো যেমন জঘন্য তেমন বিশ্রী তার গলার আওয়াজ।”

“পেঁচা, কারণ ওর নজর খুব তীক্ষ্ণ।”

“হলে কী হবে, আলোতে ও লজ্জা পায়, পেঁচা নয়।”

তারপরে কেউ আর কারোর নাম বলল না। তখন একজন জোরে চীৎকার করে বলল, “যে সব থেকে উঁচুতে উড়তে পারবে সে-ই রাজা হবে।”

তখন শকুন একবারের জন্যও না থেমে টানা তিনদিন ধরে সোজা সূর্যের দিকে উড়ে গেল। তারপরে সে গলা ফাটিয়ে চীৎকার করে বলল, “আমি সর্বোচ্চ, আমি রাজা।”

তার ওপরে সে আওয়াজ পেল, “টি-সি, টি-সি, টি-সি।” দেখল তারও ওপরে টিঙ্ক-টিঙ্কে পাখি উড়ছে। সে শকুনের বিশাল ডানার একটাতে গায়ের জোরে চিপকে ছিল আর সে এতটাই হালকা যে তাকে মালুম পড়ে নি। “টি-সি, টি-সি, টি-সি, আমি সর্বোচ্চ, আমি রাজা,” কিঁচ কিঁচ করে বলল টিঙ্ক-টিঙ্কে।

শকুন আরও একদিন ধরে ওপরে উঠতে লাগল। “আমি সর্বোচ্চ, আমি রাজা।”

“টি-সি, টি-সি, টি-সি, আমি সর্বোচ্চ, আমি রাজা,” তাকে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বলল টিঙ্ক-টিঙ্কে। আবার সে শকুনের ডানার ভেতর থেকে বেরিয়ে তার মাথার ওপরে উড়তে শুরু করেছে।

পঞ্চম দিনেও শকুন আকাশে সোজা উঠতে লাগল। সে আবার চেঁচিয়ে বলল, “আমি সর্বোচ্চ, আমি রাজা।”

পুঁচকে পাখি ঠিক তার ওপরে ডেকে বলল, “টি-সি, টি-সি, টি-সি, আমি সর্বোচ্চ, আমি রাজা।”

শকুন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ফলে সে সোজা পৃথিবীর দিকে উড়ে এলো। অন্য পাখিরা তো রেগে আগুন তেলে বেগুন হয়ে বলল, “টিঙ্ক-টিঙ্কেকে মরতেই হবে কেন না ও শকুনের বড় ডানার ফায়দা নিয়ে ওর ভেতরে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল। সবাই মিলে তার দিকে উড়ে তেড়ে গেল আর সে একটা ইঁদুরের গর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে গেল। এবার তারা ওর নাগাল পাবে কী করে? কোন একজনকে তো পাহারা দিয়ে থাকতেই হবে যে মুহূর্তে সে মাথাটি বার করবে তার টুঁটিটি ক্যাঁক করে চেপে ধরার  জন্য। 

তারা সবাই মিলে ক্যাঁচোর ম্যাচর করে বলে উঠল, “পেঁচাকেই পাহারা দিতে হবে; ওর চোখগুলো সবথেকে বড় বড়; ওর নজর খুব ভাল।”

পেঁচা গর্তের কাছে উড়ে গিয়ে পজিশন নিয়ে দাঁড়াল। সকালের রোদটায় বেশ আরাম লাগছিল ফলে পেঁচার খুব শিগগিরি চোখ বুজে এল আর খানিকক্ষণ পরে তো ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।  

টিঙ্ক-টিঙ্কে গর্ত থেকে উঁকি মেরে দেখল পেঁচার নাক ডাকছে আর সে সটান সোঁওওও করে সোজা পগার পার। কিছুক্ষণ পরেই অন্য পাখিরা সেখানে এসে হাজির হল টিঙ্ক-টিঙ্কে এখনও সেই গর্তে আছে কিনা দেখতে। কিন্তু তারা পরক্ষণেই একটা গাছ থেকে “টি-সি, টি-সি” ডাক শুনতে পেল; ওই যে ক্ষুদে বদমাশটা সেখানে বসে আছে।

ভীষণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে সাদা-কাক রণে ভঙ্গ দিয়ে বলল, “আর আমি একটা কথাও উরুশ্চারণ করব না”। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সাদা-কাক আর কখনও কথা কয়নি। সাত চড়েও ওর রা বের হয় না।

(www.theoffnews.com birds South Africa folk tales)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours