সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
ব্রাজিলের বিচ্ছু? সত্যজিতের ‘সোনার কেল্লা’র যোধপুর সার্কিট হাউসের ওই দৃশ্য কে ভুলতে পারে? প্যারাসাইকোলজির জার্নালে চোখ বোলানোর জন্য সদ্য বালিশে মাথা ঠেকিয়েছিল ফেলুদা। সেই সময়ে বালিশের পাশ থেকে বেরিয়ে এসেছিল কাঁকড়া বিছেটা। না না, ব্রাজ়িলিয় নয়, সাক্ষাৎ ভারতীয়। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাঙালি বিছে। তারপরে তোপসে তাকে দেখতে পেয়ে চীৎকার করে ওঠে - সে এক হুলুস্থূল কান্ড…। বিছানায় কাঁকড়াবিছে যথেষ্ট আতঙ্কের হলেও এই বিছে ফেলুদা বা মন্দার বোসের হাতের তালুতেই মোটামুটি ধরে যেত কিন্তু ডক্টর বিকনেল এবং তাঁর গবেষক টিম অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে ৪০ কোটি বছর আগে সমুদ্রে বসবাসকারী বিশাল বিছেদের ফসিল আবিষ্কার করছেন যেগুলির কোনও কোনওটি ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হত।
তাঁরা অতি সম্প্রতি ‘গন্ডওয়ানা রিসার্চ’ জার্নালে তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছেন যে ইউরিপ্টেরিড নামে পরিচিত এই প্রাচীন প্রাণীগুলি বর্তমান মানুষের থেকে আকারে অনেক বড় ছিল এবং সেই সময়ে তারা সমুদ্রের অন্যতম শিকারী ছিল। ইউরিপ্টেরিড বা সামুদ্রিক বিছে, জলজ আর্থ্রোপডের একটি বিলুপ্ত গোষ্ঠীর অন্তর্গত। কাঁকড়া, লবস্টার এবং মাকড়সার এই প্রাচীন আত্মীয়রা একসময় সমুদ্রকে শাসন করত। জীবাশ্মগুলি সিলুরিয়ান যুগের, যা প্রায় ৪৪ কোটি ৩৮ লক্ষ থেকে ৪১ কোটি ৯২ লক্ষ বছর আগে এবং ডেভোনিয়ান যুগের, অর্থাৎ ৪১ কোটি ৯২ লক্ষ থেকে ৩৫ কোটি ৮৯ লক্ষ বছর আগে। গবেষকরা এই সামুদ্রিক বিছেদের দুটি বর্গের জীবাশ্ম শনাক্ত করেছেন - টেরিগোটাস (Pterygotus) এবং জেকেলপ্টেরাস (Jaekelopterus)। প্রথমটি যখন ৫’৭” পর্যন্ত বড় হতে পারত, দ্বিতীয়টি তখন ৮ ফুটেরও বেশি লম্বা হতে পারত, ভাগ্যিস সে সময়ে তাদের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা কোনও মানুষের ছিল না।
প্রাচীন অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানা জুড়ে পাওয়া এই জীবাশ্মগুলি থেকে বোঝা যায় যে এই সামুদ্রিক বিছেরা হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিশাল দূরত্ব সাঁতার কাটতে পারত। অস্ট্রেলিয়ায় এই জীবাশ্মগুলির আবিষ্কার ক্রমবর্ধমান প্রমাণের তালিকায় যুক্ত হয়ে এটাই প্রমাণ করে যে সামুদ্রিক বিছেরা একসময় পৃথিবীর বহু স্থানে বাস করত। গবেষকদের বিশ্বাস, নিউ সাউথ ওয়েলসের যেখানে জীবাশ্মগুলি পাওয়া গেছে সেখানের শিলার গঠনপ্রকৃতি থেকে দেখা যায় যে এই বিশাল প্রাণীরা একসময় এখানে বাস করত। আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলির বেশিরভাগই এক্সোস্কেলটন বা বিছেদের শক্ত আবরণ।
এদের আকার এবং বিন্যাস সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলেও, বিজ্ঞানীদের এখনও তাদের সম্পর্কে অনেক অজানা প্রশ্ন রয়েছে, বিশেষত কীভাবে তাদের বিলুপ্তি ঘটল। মনে করা হয় যে তাদের বিলুপ্তি প্রায় ৩৯ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগে ঘটেছিল, খুব সম্ভবত পরিবেশ বদলে যাওয়ার কারণে, যেমন সমুদ্রতলের নেমে যাওয়া এবং কার্বনিফেরাস যুগের প্রথম দিকে হিমবাহের গঠনের কারণে। তবে তাদের নিখোঁজের সঠিক কারণ রহস্যই রয়ে গেছে।
(www.theoffnews.com Pterygotus Jaekelopterus)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours