দেবর্ষি মজুমদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, বীরভূম:
দেশে দেশে দশ দিশে
ফেরে শত কত আর্তনাদ।
সনাতনী রহে গৃহহীন ত্যাজি আপন কুলায়,
তবুও ছাড়েনি পিছু
ধর্ম বিসংবাদ।
পাণ্ডবের দ্বাদশ বর্ষ বনবাস ছিল, ছিল এক বৎসর অজ্ঞাতবাস।
এ পাণ্ডব বর্জিত দেশে
স্থায়ী অজ্ঞাত বাস ভবিতব্য তার
বাঙালি সনাতনী জেনেছে সর্বনাশ।
ক্লান্ত শ্রান্ত প্রভূ পার্থ
ধীর চূড়ামণি
বসিলেন ধ্যানে স্থির,
অস্তাচলে গেলা চলি
তপ্ত দিনমনি।
যুদ্ধহীন হয়নি রাত্র
শান্ত শশ্মানের রূপ শাহবাগ,
রঙপুর, চট্টগ্রাম সর্বত্র।
সনাতনী নিন্দা বিদ্বেষ অপবাদ ষড়যন্ত্রে
হবে ফের যুদ্ধ,
রৌরব কৌরব চারিধার রুধির মন্ত্রে।
জাগিয়া সনাতনী রাজপথে কুরুক্ষেত্রময়।
আমি পার্থ, পরিজন দেখি দেহ অবসন্ন, বিশুষ্ক মুখ, কম্পিত দেহ হবার এ সময় নয়।
বাজায়ে ভেরি রণতূর্য মাঝে পাঞ্চজন্য কয়- হে পার্থ! নপুংসকতা করো না আশ্রয়।
তোলো গাণ্ডীব ধনু টঙ্কারে অনিবার্য
হোক তোমার প্রলয়।
পার্থ: হে অরিসূদন! আমি বিনা দোষে বন্দী। তাতে নাই ক্ষোভ। তোমার জন্ম এই কারাগারে। এ কারও থাকে ভাগ্যে, আর কতজন করে লোভ। অতি সাধারণ তারে ভাবে দূর্ভোগ।।
তবুও বলো, হে জগন্নাথ! কোন দোষে আজও সনাতনী ক্ষয়। সত্য, দ্বাপর, কলি, নব্বইয়ে কশ্যপ ধাম,
বঙ্গদেশে ছেচল্লিশ, একাত্তর- চব্বিশে বার বার হয়?
শ্রীকৃষ্ণ: মৃত্যু অবধারিত। শরীর অবিনাশী, নিত্য জন্মরহিত। মানুষ পুরাতন বস্ত্র পরিত্যাগ করে, নতুন বস্ত্র পরে। জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর ধরে। তাই বলি মাভৈ:। শস্ত্র ধরো। ধারণ করো না ভয়।
পার্থ: একা আমি। শত পার্থ পাথেয় আজি যুদ্ধ জিনিবারে। তবু হায়! শতধা বহুধা বুদ্ধি নিরাশ্রয় স্বার্থান্বেষী, জাতপাতে ক্লিষ্ট জ্ঞানপাপী সনাতনী বাঙালি অর্থ চরাচরে।
শ্রীকৃষ্ণ: চতুঃবর্ণ-র আমি স্রষ্টা গুণ কর্ম অনুসারে। কর্তা হলেও, আমি অকর্তা, তাই মানুষ নিজে ক্ষুদ্র খণ্ড করে। তুমি এক হও। একত্র করো আত্মজন যে জন স্বজন, অস্ত্র ধরো, তুমি দুর্বল নও।
পার্থ: কোন অস্ত্র? কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ পরে গাণ্ডীব ব্যর্থ, অব্যর্থ তবে কী বাষ্ণেয়? এ যুদ্ধ নিত্য সঙ্গী, আমারে জানিও।
শ্রীকৃষ্ণ: যেখানে রাষ্ট্র সবলের পক্ষে, সংখ্যায় অতি স্বল্প তোমা সব। দেখ সম্মিলিত নৃশংসতা হানে বাড় বৃদ্ধি স্তুপাকার শুধু যত মৃত শব;
সেখানে গাণ্ডীব নয়, অসি নয়, ঠিক বাঁশিও নয়। অহিংস অস্ত্রে হোউক ঘোষণা- মারিতে নয়, মরিতে দাও বিনা অধিকারে, ধর্ম বিষম কত তুলে ধরো জগৎ মাঝারে। কূটনীতি জেনো সর্ব শ্রেষ্ঠ অস্ত্র, তাই গাণ্ডীব নিস্প্রয়োজন, এ যুগে বিশ্ব জনমত গড়ো উপদ্রুত এলাকা তোমার, প্রতিবাদ হোক বিশ্ব দরবারে। জেনো, সব ক্রিয়ার থেকে প্রতিক্রিয়া দ্বিগুণ ভারে প্রতিষ্ঠিত হবে অধিকার তব সবাকার।
পার্থ: হে মধুসূদন! তুমিই বলেছো রণাঙ্গনে অবিনাশী শরীর হন্তক নহে কভু। শরীরও নিহত না হয়, এতো তোমারই বাণী প্রভূ। তবে হিংস্রকে হত্যা কেন নয়? আজও নিঃশঙ্ক নহি কভু, মহা সংশয়ে আমার হৃদয়।
শ্রীকৃষ্ণ: পার্থ! নিদ্রাজয়ী! এ কথা ধ্রুব সত্য। এখনও সময় হয়নি অনুকূল। রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ আর গৃহযুদ্ধ নহে এক। যুগভেদে প্রয়োগ যে না জানে ধর্ম তার কাছে শুধুই আবেগ। এ যুগে অস্ত্র নিয়ে যারা যুদ্ধ করে, তারা ক্ষণস্থায়ী, শুধু মৃত্যু নয়, সবংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। হয় আজ, নয় তো কাল। মহাকাল গ্রাসে তারা হারাবে সকাল।
পার্থ: তবে মৃত্যু আসুক। ভয় মুক্ত হোক এ চলার পথ। আমি বধ্য হলেও, অরোধ্য রবে জয় রথ। শস্ত্র পারে না আমায় ছেদন করিতে, অগ্নি পারে না দহিতে। সিক্ত নাহি জল ধারে, বায়ু শুষ্ক নাহি পারে।
শ্রীকৃষ্ণ; রাষ্ট্রে গণতন্ত্রে নাহি পাই বিকল্প। তবুও শাসনের লোভে সে আজি মৃতকল্প। তাই রাজধর্ম জলাঞ্জলী দিয়ে দুরাচারী দুর্বিনীত তার প্রশ্রয়ে। তাই কূটনীতি বলে, এখন সময় বিশ্ব জাগাবার। যদি বাঁশি ধরো, ধরো জাগানিয়া, বারংবার।
পার্থ: কেহ কি আসিবে না, ধর্মের গ্লানি এ ধরা তোমার তো নেই অজানা। সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতীদের বিনাশ, হোক তব ধর্ম সংস্থাপনা।
শ্রীকৃষ্ণ: জাগ্রত হবে যবে সেই বোধ সবার, স্বধর্মে নিধন শ্রেয়, পরধর্ম ভয়ংকর। তবে জেনো, ধর্ম নিয়ে অন্ধ বিশ্বাস যেন না হয় ত্রাস। এক ত্রাস ছাড়ি, অন্য যেন নাহি ধরে রাশ।
পার্থ: সনাতনী হিংসা নাহি চাহে। কত যে রক্ত বহে। তারে বাধ্য করে হিংসক ধর্মান্ধ সকল। তাই তো নিপীড়নে আর্ত শুনি ধৈর্য্য হারায় জনার্দন।
শ্রীকৃষ্ণ: দুঃখে অনুদ্বিগ্নমনা হও, সুখে স্পৃহারহিত, সব আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে করো কর্মসাধন।
হে পার্থ! ত্রিলোকে নেই কোনও কর্তব্য আমার, নেই কোনও অপ্রাপ্ত। তবুও তো কর্মরত, করে যাব শোক দুঃখ সুখ সকলই রপ্ত। এও সত্য। যে সকল আর্তে আমায় দেখে, আমি তারে দেখি। বিপন্ন জীবনে কারে বিপন্ন রাখি!
পার্থ: তাহলে কী কর্তব্য আমার? আরও নিঃশেষ হতে হতে শূন্য হওয়ার? গৃহ দহে, ভূমি লুঠ, সম্পদ লুঠ, নারীকেও লয়ে যায়, সনাতনী বঙ্গদেশ আজি ম্লেচ্ছ দেশ।
শ্রীকৃষ্ণ: আমি সমগ্র লোকক্ষয়কারী প্রবৃদ্ধ কাল। আমি দুর্বৃত্ত সংহারকারী। আগেও বলেছি। আবারও এই কুরুক্ষেত্রে বলি, তুমি রণে ভঙ্গ দিলেও, এরা হবে মৃত শব। তাই কালজয়ী যুদ্ধ হবে। তবে তারও আগে হবে কূটনীতি। বুদ্ধি যার বল তার। একাদশ অক্ষৌহনী কৌরব সেনা পড়ে ছিল কম, তব পঞ্চ পাণ্ডবের কাছে। সংখ্যা বড়ো নয়। তার চেয়ে বড়ো কূটনীতি, চলে বিজয়ের পাছে। আমি আসিব, আবার আসিব নিশ্চয়। ধর্মের গ্লানি পাবে না পার। এ দুর্বৃত্ত, পাষণ্ড, ভ্রান্ত পথের পথিক, আমাতেই হবে লয়।
(www.theoffnews.com Bangladesh Mahabharat)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours