সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

(বাংলার আলোচ্য অংশ ও সেখানকার তৎকালীন ভৌগোলিক অবস্থা)

সে সময়ের সমগ্র বাংলা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আলোচনা অনেকটা দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই বর্তমান বাংলার একটা সীমিত অংশ নিয়ে আলোচনা করব। বাংলার যে স্থানগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান মোটামুটি ২৭˚১০ʹ উত্তর থেকে ২১˚৩৮ʹ উত্তর পর্যন্ত এবং ৮৯˚৫০ʹ পূর্ব থেকে ৮৫˚৪৯ʹ পূর্ব পর্যন্ত তার সর্বত্র এক রকম ভূ-প্রকৃতি নয়। আমরা মোটামুটি ২৩˚৩২ʹ উত্তর থেকে ২৩˚৩৮ʹ উত্তর পর্যন্ত আর ৮৭˚০৫ʹ পূর্ব থেকে ৮৭˚৪৬ʹ পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া জেলার মধ্যেই আলোচনা করার চেষ্টা করব। তবে বীরভূম লাগোয়া মেদিনীপুর আর বাঁকুড়া লাগোয়া পুরুলিয়ার কথা প্রসঙ্গক্রমে এসেই যাবে। বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়ার পুব দিকটা হুগলি-দামোদরের পলি আর পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের পরের সমভূমির মিশ্রণ। বাঁকুড়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ভূমিচরিত্র কিছুটা পুরুলিয়ার দক্ষিণ এবং মেদিনীপুরের উত্তর-পশ্চিমাংশের মত। আসলে বঙ্গভূমির পশ্চিম অংশ ক্র্যাটিনীয় স্তর সহ প্রিক্যাম্ব্রিয়ান ঢাল। বাঁকুড়ার উত্তর-পশ্চিমাংশ গ্রানাইট শিলার প্রাথমিক অবস্থা। বাঁকুড়া, বীরভূমের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশেও এই ধরণের শিলা পাওয়া যায়। বাঁকুড়ার দক্ষিণাংশে ও মেদিনীপুরের পশ্চিমাংশের লৌহবালুকাময় বেলেপাথর, কালো কাদার পাথর, বাদামি-সাদা বেলেপাথর সম্ভবত মাইওপ্লিওসিন যুগের। এসবের ক্ষয়প্রাপ্ত আস্তরণের উপর পলিসম্বৃদ্ধ উচ্চভূমি গঠিত হয়েছে। বাঁকুড়ার কিছু অংশ, বীরভূমের পশ্চিমাংশ, বর্ধমানের উত্তর পশ্চিমাংশ আর মেদিনীপুরের পশ্চিমাংশ ল্যাটারাইট পাথরের অ-ক্ষয়প্রাপ্ত ছোটনাগপুর পাহাড়ের পাদদেশের প্রসারিত অংশবিশেষ। বাঁকুড়া জেলার দু’টি পাহাড় হল শুশুনিয়া আর বিহারীনাথ। এদের উচ্চতা যথাক্রমে ৪৪০ মিটার এবং ৪৪৮ মিটার। এই অঞ্চলগুলো রাঢবঙ্গের একটা অংশ। রাঢ়বঙ্গের এই সব অঞ্চলের মধ্য আমাদের মূল আলোচনা থাকবে। তবে জনবসতি তো বিচ্ছিন্ন ভাবে শুধু এই অঞ্চলেই গড়ে ওঠেনি, তাই আশেপাশের অঞ্চলের প্রসঙ্গ এসে যাওয়াই স্বাভাবিক।

রাঢবঙ্গের নাম কোথা থেকে এল? 

আমাদের আলোচনার অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগই রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। তাই এই রাঢ় কথাটির বুৎপত্তিগত দিকটি এখানে উল্লেখ করতে চাই, কারণ তা থেকে আমরা হয়তো এই অঞ্চলের জনজাতি সম্বন্ধে অনুমান করতে পারবো। অনেকে মনে করেন যে ‘রাঢ়’ শব্দটি অস্ট্রিক শব্দ ‘রাড়হা’ বা ‘রাড়হো’ (ráŕhá অথবা ráŕho) থেকে এসেছে। সাঁওতালী ভাষায় ‘লার’ (lar) মানে সুতো আর ‘রাড়’ (rarh) মানে ‘স্বর’। আবার ‘লাড়’ (larh) মানে ‘সাপ’। অস্ট্রিক ভাষায় ‘রাড়হা বা রাড়হো’ –এর অর্থ হ’ল ‘লাল মাটির দেশ’। সাঁওতালরাও অস্ট্রিক জনগোষ্ঠীর এক জনজাতি। আবার কিছু গ্রীক পণ্ডিতের মতে মূল অস্ট্রিক শব্দ লাঢ (Larh) ‘শুকনো জঙ্গল অঞ্চল’ বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হ’ত। তাই মনে হয় রাঢ় শব্দটি এই অস্ট্রিক ‘রাড়হা বা রাড়হো’ থেকে এসেছে। এ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে এই অঞ্চলের আদি জনগোষ্ঠী অস্ট্রিক জনজাতির একটা অংশ ছিল। (ক্রমশঃ)

(www.theoffnews.com Bankura Rarh)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours