প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:
গত পাঁচদিন যাবৎ কলকাতায় রয়েছি।
প্রেম, ঘৃণা, স্বার্থপরতা, আন্তরিকতা, অবহেলা অনেক কিছুই এই শহরে দেখলাম।
এ শহরে দেখলাম হুজুগে বাঙালিকে।
আগেও দেখেছি, আবারও দেখলাম। দেখলাম তিলোত্তমার উপর অমানসিক নির্যাতনে যে মানুষরা রাতের কলকাতা দখল করেছিল, সেই মানুষ যিশুর জন্মদিনে উৎসবে মেতে উঠছেন। লাইন দিয়ে চার্চে যাচ্ছেন, হাসছেন, খাচ্ছেন ইত্যাদি।
দেখলাম সাইন্স সিটি বা নিক্কো পার্কে আড্ডায় বসছেন।
এই মানুষরা কল্পতরু উৎসবে বাগবাজারে, দক্ষিণেশ্বরে বা বেলুড় মঠে লাইন দেবেন এও নিশ্চিত।
অদ্ভুত বৈচিত্র।
অনেকে বলেন, কলকাতার মানুষেরা নাকি হৃদয়হীন।
আমি সহমত পোষণ করি না।
আমি বলছি, আজকের সময়ে কোন শহরে বা গ্রামে সব মানুষের হৃদয় আছে? খুঁজলে অসভ্য বর্বর মানুষ সব গ্রাম ও শহরে অতীতেও ছিল আজও খুঁজে পাবো।
তবে, কলকাতাই বা এর ব্যতিক্রমী হবে কেন?
আমি এই কলকাতায় হৃদয়, প্রেম, সভ্যতা, আন্তরিকতা খুঁজে পেয়েছি, যা আজও বর্তমান। এ শহরের মানুষ আজও অন্যের দুঃখে কাঁদে।
আবার অসভ্যতা, এড়িয়ে চলা, চোখ বুজে না বোঝার ভান করা এ'ও দেখছি, ঠিক। দুই'ই থাকবে। অতীতে ছিল, আজ আছে, ভবিষ্যতে থাকবে। এটাই তো চিরন্তনী সর্ব প্রান্তিক মাটির চির-নিয়ম।
বিদুর, ভীষ্ম, কর্ণ, অর্জুন, একালব্য, কুন্তী ও গান্ধারীর যুগেই তো কংস, ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, দুঃশাসন ছিল।
বুদ্ধদেবের সময়ে এ শহরে উনি বা হেকিম সাহেব তো ছিলেন বা আছেন।
তাহলে?
এ শহরে এবার খুঁজে পেলাম চেনা মানুষের বন্ধুত্বের হাত, কন্ঠ, সাহায্য। দেখলাম বিপদে অচেনা মানুষকে মনুষ্যত্ব বর্জন না করে পাশে দাঁড়াতে। এককথায় এই ইতিবাচক মানুষগুলোই প্রকৃত বন্ধু। এরা বিবেকবান। মনুষ্যত্ববোধ এদের আছে। আমি এঁদের শ্রদ্ধা করি।
আজও তিলোত্তমা বিচার পায়নি। এখনও ধর্মতলায় ধর্ণা মঞ্চ ভর্তি। তবে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর আজও পাইনি-
তিলোত্তমার মা কেন বিচার পেলেন না?
কার নির্দেশে ডাক্তাররা আপোষ করলেন?
কে ডাক্তার বন্ধুদের ভয় দেখালেন?
সেই প্রতিবাদী মানুষগুলি কোথায়? হুজুগ?
একটা সিভিক পুলিশকে বাঁচাতে রাজ্য প্রশাসন ও সিবিআই কেন অন্যায়কারীকে লুকিয়ে রাখল!
আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজব, উত্তর চাইব। কারণ কি?
কারণ একটাই। আমি বিবেক খুঁজে বেড়াই।
আমি বিবেক চেনাই। আমি বিবেকবানকে শ্রদ্ধা করি।
(www.theoffnews.com conscience Tilotamma Kolkata)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours