সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

সুকুমার রায় তো কতদিন আগেই লিখে গেছেন,

“গালফোলা কোলা ব্যাং,

পালতোলা রাঙা ছাতা

মেঠো ব্যাং, গেছো ব্যাং,

ছেঁড়া ছাতা, ভাঙা ছাতা।

সবুজ রং জবড়জং জরির ছাতা সোনা ব্যাং

টোক্কা-আঁটা ফোকলা ছাতা কোঁকড়া মাথা কোনা ব্যাং।

কত ব্যাঙের কত ছাতা!”

ব্যাঙের ছাতার নীচে চুপটি করে বসে আছে কোনও ব্যাঙ - এমনটা কেউ কখনও দেখলেও দেখে থাকতে পারো কিন্তু ব্যাঙের পিঠে ব্যাঙের ছাতা? এটা কস্মিনকালেও কেউ কখনও ভেবেছ বা দেখেছ! পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় গবেষণারত ললিত ভাইটি এবং তাঁর দলবল কিন্তু হালে এই অবিশ্বাস্য অলৌকিক দিব্য দর্শনটি করে ফেলেছেন। ব্যাঙটিকে তাঁরা পাকড়াও করে ল্যাবোরেটরির বীকারে পুরে ফেলতে না পারলেও তাকে যথেছ ক্যামেরাবন্দী করেছেন আর সুবিখ্যাত “রেপটাইলস অ্যান্ড অ্যাম্ফিবিয়ানস” জার্নালে তাঁদের সরেজমিন দর্শনের বিরলতম অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধও প্রকাশ করেছেন।

ওই প্রবন্ধে ‘রাও’স ইন্টারমিডিয়েট গোল্ডেন-ব্যাকড ফ্রগ’ নামে একটি ব্যাঙ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ১৯৩৭ সালে আবিষ্কৃত এই হলুদ রঙা উভচর প্রাণীটির নামকরণ করা হয়েছে তার আবিষ্কর্তার নামে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা বিশেষজ্ঞ লোহিত ভাইটি-র নেতৃত্বে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বৃষ্টিবহুল পাদদেশে উভচর এবং সরীসৃপদের অনুসন্ধানে একটি অভিযান শুরু করেছিলেন। শুরুতে জীববৈচিত্র্য অন্বেষণ তাঁদের লক্ষ্য হলেও তাঁদের দিশা আচমকা পরিবর্তিত হয় যখন তাঁরা এমন একটি আবিষ্কার করেন যেটাতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ভেদাভেদ মুছে দেয়। এই চমকপ্রদ আবিষ্কারটি বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। তাঁরা প্রথমে সেখানের বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের ব্যাঙ এবং অন্যান্য প্রাণীর সন্ধান পেয়েছিলেন। 

‘দ্য ন্যু ইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে তাঁরা রাস্তার কাছে সোনালী পিঠের কয়েকটি ব্যাঙ দেখতে পান আর এরপরই লোহিতের নজর কাড়ে গাছের ডালে বসে থাকা একটি ব্যতিক্রমী ব্যাঙ। তিনি তার পিঠে গজিয়ে ওঠা একটি ছোট্ট মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা বা ছত্রাক আবিষ্কার করলেন যা খুবই অস্বাভাবিক ছিল কারণ মাশরুম সাধারণত প্রাণীদের ওপর জন্মায় না। “রেপটাইলস অ্যান্ড অ্যাম্ফিবিয়ানস” জার্নালে প্রকাশিত হবার পর লোহিতের এই আবিষ্কার খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাইকোলজিস্টস্ বা ছত্রাকবিজ্ঞানীদের মতে ব্যাঙের চামড়ায় যে মাশরুম জন্মানোর জন্য যে ছত্রাকটি দায়ী সেটি নিশ্চয়ই সেখানে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়েছে। এই ঘটনা এটাই দেখায় যে ছত্রাকটি অস্বাভাবিক জায়গায় বেঁচে থাকার জন্য বিবর্তিত হয়েছে যাতে বিভিন্ন পরিবেশের মধ্যে সীমানার বিধিনিষেধ উঠে গেছে এবং এও দেখায় যে জীবন কতটা অভিযোজিত হতে পারে।

প্রতিবেদনটিতে প্রধানত রাও-এর গোল্ডেন-ব্যাকড্ ফ্রগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে গবেষকরা এই ব্যাঙটিকে অন্যান্য অনেকের সঙ্গে রাস্তার পাশে বৃষ্টির জলে ভরা একটি ছোট্ট পুকুরে খুঁজে পান। তাঁরা এও দেখেন যে একটি ব্যাঙ একটি ডালের ওপর উঠে বসে আছে আর তার শরীরের বাঁ দিকে টিউমারের মত একটা কিছু একটা গজিয়েছে। খুঁটিয়ে দেখার পর তাঁরা বুঝতে পারলেন সেটি একটি মাশরুম যা এটির পাশ থেকে বেড়ে উঠেছে। অদ্ভুত ব্যাপার যে ব্যাঙটি বেঁচে ছিল আর দিব্যি চলাফেরা করছিল। 

জীবন্ত প্রাণী সমেত বিভিন্ন পরিবেশে ছত্রাক জন্মাতে পারে। যেমন, মানুষের চামড়ায় ছুলিও এক ধরণের ছত্রাক। কিন্তু সব ছত্রাক থেকে মাশরুম হতে পারে না। কিছু ছত্রাক যেমন ব্যাট্রাকোকাইট্রিয়াম ডেন্ড্রোবাটিডিস বা কাইট্রিড, ক্ষতিকারক হতে পারে এবং ব্যাঙের মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন যে ব্যাঙের পিঠে আবিষ্কৃত ছত্রাক বা মাশরুম রোগ সৃষ্টিকারী নয়, যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

(www.theoffnews.com frog back mushroom)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours