সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
(সৌজন্যে বিহার পর্যটন)
[ASI starts excavation to further unearth remnants of Vikramasila Mahavihara.]
{বিক্রমশীলা মহাবিহারের ধ্বংসস্তূপে অবশেষ খোঁজার জন্য এএসআই ৪২ বছর পরে পুনরায় খনন শুরু করেছে।}
বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল পাল যুগে ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কেন্দ্রের একটি। অন্য দুটি ছিল নালন্দা ও ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়। নালন্দা ও ওদন্তপুরীতে শিক্ষার মান কমে গেছে এমন ভাবনা থেকে রাজা ধর্মপাল ৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে অথবা ৯ম শতাব্দীর প্রথম দিকে বিহারের ভাগলপুর জেলার এন্টিচক গ্রামে বিক্রমশীলা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি যেখানে শতাধিক শিক্ষক এবং সহস্রাধিক ছাত্র ছিল। এখান থেকে শিক্ষালাভ করে অনেক ছাত্র বিশিষ্ট পন্ডিত হয়েছিলেন। যাঁদেরকে প্রায়ই বৌদ্ধ শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ধর্ম প্রচারের জন্য বিদেশী দেশগুলি থেকে আমন্ত্রণ জানানো হত। ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজির আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যাবার আগে এটি প্রায় চার শতাব্দী ধরে সমৃদ্ধ হয়েছিল। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআই বিক্রমশীলা মহাবিহারের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পাওয়ার জন্য ৪২ বছরের ব্যবধানে সাম্প্রতিক কালে পুনরায় খনন শুরু করেছে।
এএসআই পাটনা সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিওলজিস্ট গৌতমী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন - “এর আগে ওই প্রত্নস্থলে ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এএসআই অত্যন্ত সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে খনন করে একটি বিশাল বর্গাকার মঠ উদ্ঘাটিত করেছিল যার কেন্দ্রে একটি ক্রুশাকৃতি স্তূপ, একটি গ্রন্থাগার ভবন এবং মানসসিদ্ধিমূলক বা সমর্পিত (ভোটিভ) স্তূপের গুচ্ছ ছিল। বিক্রমশীলা এক্সক্যাভেশন প্রজেক্টের অধীনে ডা. বি এস ভার্মা ১৯৮২ সালের আগে এখানে খনন করেছিলেন। এখন আমরা ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের খননকার্য শুরু করেছি। এই মুহূর্তে আমরা আগের খননের ট্রেঞ্চগুলো পরিষ্কার করার কাজে লেগে রয়েছি। আমরা ডাঁই করা মাটি সরাচ্ছি আর সেই আনকোরা অংশে পৌঁছাতে চাইছি যেখান থেকে আমরা পদ্ধতি মাফিক খনন শুরু করতে পারি।”
এএসআই পাটনা সার্কেলের সহকারী সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিওলজিস্ট জলজ কুমার তিওয়ারির তত্ত্বাবধানে ভাগলপুর থেকে ৩৮ কিমি দূরে কহ্লগাঁও সাব-ডিভিশনে ওই প্রত্নস্থলে খনন শুরু হয়েছে। শ্রীমতী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন - “আগের খননের সময় উদ্ঘাটিত মঠটি একটি বিশাল বর্গাকার নির্মাণ। কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠের নীচে কয়েকটি ইটের খিলান যুক্ত ভূগর্ভস্থ কক্ষও দেখা যাচ্ছে যেগুলি সম্ভবত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আবদ্ধ ধ্যানকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হত। উপাসনার উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রধান স্তূপটি চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা ইটের একটি কাঠামো যেটি বর্গাকার মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। এই দুই-দাঁড়া স্তূপটি একটি ক্রুশের আকারে নির্মিত এবং মাটি থেকে প্রায় ৪৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত যেটিতে উত্তর দিকের একটি সিঁড়ি দিয়েই ওঠা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন - “কোনও সন্দেহ নেই যে খননের ফলেই ওই প্রত্নস্থলটিকে একদা বিখ্যাত বিক্রমশীলা মহাবিহারের প্রকৃত অবশেষ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এখন, নতুন খনন এই মহাবিহারের দীর্ঘ বৈচিত্র্যময় ইতিহাস সম্পর্কে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করবে। এই স্থানটির খননের ফলে পাথরের ফলকগুলিতে উৎকীর্ণ আরও কিছু গুরুত্ব পূর্ণ শিলালিপি পাওয়া যেতে পারে, যা হয়তো ওই মহাবিহারের ইতিহাস আরও খানিকটা উন্মোচিত করবে।”
(www.theoffnews.com Vikramasila Mahavihara unearth)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours