রণজিৎ গুহ, লেখক ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:
(লেখক একজন গর্বিত প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী)
আমাদের পারস্পরিক সাধারণ সম্ভাষণরীতি বুকের সামনে হাতজোড় করে নমস্কার বলা। এই সম্ভাষণ রীতি বঙ্গ জীবনে কবে থেকে এল? আমাদের দেশের পুর্বাঞ্চলে ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে নত মস্তকে প্রনাম জানাত। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে হাঁটু ছুয়ে শ্রদ্ধা সম্ভাষণ জানান হত। হিন্দু মন্দিরে সাষ্টাঙ্গ বা পঞ্চাঙ্গ প্রণামের চল আছে। তবে এখন দেব দেবীকেও জোড় হাতে নমস্কার করার চলই বেশী। প্রাচীন সাহিত্যে এই নমস্কার পদ্ধতির উল্লেখ আছে কিনা জানি না। মহাভারতে কি আছে? টিভির মহাভারতে আছে। কিন্তু সে তো আর প্রামানিক কিছু নয়। রবীন্দ্র উপন্যাসে অবশ্য পাচ্ছি। ১৯০৭ সালে লেখা 'গোরা' উপন্যাসে সুচরিতা বিনয়কে নমস্কার করছে বিনয় প্রতি নমস্কার করছে। বিনয় পরেশকে নত হয়ে প্রণাম করে সুচরিতাকে নমস্কার করছে। হতে পারে রবীন্দ্রনাথ সংস্কৃত সাহিত্য থেকে রীতিটি জেনেছিলেন। ১৯০১ সালে ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ পাঁচজন ছাত্র নিয়ে মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্বে যে স্কুল খোলেন সেখানকার একটি সমস্যার সমাধানে রবীন্দ্রনাথ এই নমস্কার রীতি চালু করেন। অন্য দুই শিক্ষক ছিলেন জগদানন্দ রায় ও কুঞ্জলাল ঘোষ। সমস্যা দেখা দিল ব্রাহ্মণ ছাত্র অব্রাহ্মণ শিক্ষক কুঞ্জবাবুকে কিভাবে পদ স্পর্শ করে প্রণাম জানাবে? রবীন্দ্রনাথ মনোরঞ্জনবাবুকে লিখিত নির্দেশ দিয়ে এই নমস্কার রীতিটি চালু করতে বলেন। সম্ভবত শান্তিনিকেতন হয়ে এখন 'নমস্কার' বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। আমাদের কারখানায় আমরা ফোনে হ্যালোর পরিবর্তে নমস্কার বলা চালু করেছিলাম। অনেকেরই সেটা এখন অভ্যাস।
কারও কাছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য থাকলে জানালে উপকৃত হব।
দুর্গাপুরেরই ছেলে তমাল রাহা গোয়া থেকে জানিয়েছে, বঙ্কিম বাবু তাঁর পাঠ্যপুস্তক — সহজ রচনাশিক্ষা'তে কেমন করে চিঠি লেখা উচিত সেটা বোঝাতে গিয়ে লিখেছিলেন ... এখন পত্র মুড়িয়া তাহার উপরে শিরোনাম লিখিতে হইবে। যেমন পত্রের পাঠ আছে, তেমনই শিরোনামেরও পাঠ আছে। পূজ্য ব্যক্তি, যাঁহাকে সেবক পাঠ লিখিতে হয়, তাঁহাকে শিরোনামে “পরম পূজনীয়” লিখিতে হয়। নামের পর “শ্রীচরণেষু” বা “শ্রীচরণকমলেষু” কি এইরূপ অন্য কোন সম্মানসূচক পদ লিখিতে হয়। যথা—
“পরম পূজনীয়,
শ্রীযুক্ত বাবু মাধবচন্দ্র ঘোষাল
মাতুল মহাশয় শ্রীচরণকমলেষু।”
নীচে পত্রের ঠিকানা লিখিয়া দিবে, যথা—দেয়, (বা দেনা) মোং বর্ধমান।
পূজ্য ব্যক্তিকে “প্রণাম” করিতে হয়, তুল্য ব্যক্তিকে “নমস্কার” করিতে হয়। এই জন্য তুল্য ব্যক্তিকে যে পত্র লেখা যায়, তাহার পাঠের নাম “নমস্কার” পাঠ। যথা—
“সবিনয় নমস্কারাঃ নিবেদনঞ্চ বিশেষং অথবা বাংলায়—
“বিনয় পূর্বক নমস্কার নিবেদন।” অনেকে সংক্ষেপ করিয়া শুধু লেখেন—
“নমস্কার নিবেদন।”
সুতরাং নমস্কার প্রথা বেশ পুরনো বলেই মনে হয়।
(www.theoffnews.com Namskar)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours