সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
প্রাগৈতিহাসিক শিল্পকর্ম আবিষ্কার যে কোনও সময়েই রোমাঞ্চকর কিন্তু সেই শিল্প যদি বরফ যুগের মানুষের হাতে আঁকা ১৩ কিমি লম্বা ছবি হয় তাহলে সেটা সারাজীবনের আবিষ্কার হয়ে ওঠে।
আমাজন রেইন ফরেস্টের গবেষকরা ম্যাস্টোডন, জায়ান্ট স্লথ এবং অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ছবি ভর্তি একটি অসাধারণ "ক্যানভাস" আবিষ্কার করেছেন, যা ১২,৬০০ বছর পর্যন্ত পুরনো।
ওই বিশাল ট্যাপেস্ট্রি যা কলম্বিয়ার আমাজনের পাহাড়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার (আট মাইল) পাথর জুড়ে বিস্তৃত, সেটি তৈরি করতে প্রাগৈতিহাসিক শিল্পীরা লাল গিরিমাটি ব্যবহার করেছিলেন।
এক্সিটার ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্ক রবিনসন, যিনি কোয়াটারনারি ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারের উপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন - "এগুলি সত্যিই অবিশ্বাস্য ছবি, যা পশ্চিম অ্যামাজোনিয়ায় বসবাসের প্রথম দিকের মানুষরা উৎপাদন করেছিল।"
রবিনসন এবং তাঁর দল বিশ্বাস করে যে আদিবাসীরা অন্তিম বরফ যুগের শেষের দিকে কলম্বিয়ান আমাজনের উত্তর প্রান্তে, সেরানিয়া লা লিন্ডোসার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে এই শিলাচিত্রগুলি আঁকতে শুরু করেছিল।
রবিনসন আরও বলেছেন যে শিল্প কর্মগুলির সৃষ্টি ১২,৬০০ থেকে ১১,৮০০ বছর আগের সময়কালে ঘটেছিল যখন "আমাজন একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনে রূপান্তরিত হচ্ছিল যে রূপে আমরা আজকে তাকে চিনি"।
ক্রমশ বাড়তে থাকা গরম ওই সময়ের ঘেসোজমি, কাঁটালো ঝোপঝাড় আর গাছের জগাখিচুড়ি জঙ্গলকে আজকের পরিচিত বনাঞ্চলের রূপ দিয়েছে।
অত্যন্ত আশ্চর্যভাবে টিকে যাওয়া বরফ যুগের ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে মানুষের হাতের ছাপ, জ্যামিতিক নকশা এবং অসংখ্য বিভিন্ন প্রাণী - কুমীর, বাদুড়, বানর এবং কচ্ছপ থেকে শুরু করে শুঁড়ওলা তেখুরো স্তন্যপায়ী প্রাণী। অন্যান্য শিলাচিত্রগুলিতে আশেপাশের প্রকৃতির সাথে মানুষের যোগাযোগের ছবি ও বিভিন্ন প্রাণি শিকারের দৃশ্য আঁকা হয়েছিল যেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রাণি বর্তমানে বিলুপ্ত।
রবিনসন বলেছেন - “ছবিগুলি তখনকার গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের জীবনযাত্রার জীবন্ত এবং রোমাঞ্চকর আভাস দেয়। আজকে এটা ভাবলেই অবিশ্বাস্য মনে হয় যে তারা দৈত্যাকার তৃণভোজীদের মধ্যে থাকত আর তাদের শিকার করত যারা কেউ কেউ ছিল মোটর গাড়ির আয়তনের”।
গবেষকরা জানিয়েছেন যে সম্ভবত মানুষের শিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জোড়া কারণে দক্ষিণ আমেরিকার অনেক বড় প্রাণী শেষ বরফ যুগের শেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
‘লাস্ট জার্নি’ নামে পরিচিত একটি প্রজেক্টের অংশ হিসেবে রবিনসন এবং তাঁর সহকর্মীরা ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে শিলা আশ্রয়গুলিতে খনন করেছিলেন। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য ছিল আমাজনে মানুষ কখন প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল তার কাল নির্ধারণ করা আর এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের উপর তাদের কার্যকলাপ কী প্রভাব ফেলেছিল তা আবিষ্কার করা।
রবিনসনের সহ-গবেষক এবং সহযোগী প্রত্নতাত্ত্বিক হোসে ইরিয়ার্ত একই বিবৃতিতে বলেছেন, "মানুষ কীভাবে ভূমি পুনর্গঠন করেছে এবং কীভাবে তার সামাজিকভাবে যোগাযোগ রাখত।"
(www.theoffnews.com Amazon rainforest rock painting)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours