সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
আফ্রিকার লোককথা
অনেক অনেক দিন আগে মামাদ নামে একজন জ্ঞানী মানুষ বাস করতেন। তিনি জীবনে কোনদিন মিথ্যা বলেননি। তাঁর দেশে সবাই তো তার কথা জানতই, এমনকি কুড়ি দিন দূরেও যারা থাকত তারাও তাঁকে জানত।
রাজার কানে মামাদের কথা পৌঁছাল আর রাজকর্মচারীদের ওপর হুকুম বর্তাল তাকে প্রাসাদে নিয়ে আসার জন্য। জ্ঞানী মানুষটিকে রাজা ভাল করে দেখলেন আর বললেন –
“মামাদ এটা কি সত্যি যে তুমি কখনও মিথ্যা কথা বলো নি?”
“হ্যাঁ, এটা সত্য।”
“আর এটাও কি ঠিক যে তুমি পরেও কোনদিন অসত্য কথা বলবে না?”
“হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত।”
“ঠিক আছে, সত্যি বলো, কিন্তু খুব সাবধান! মিথ্যে কথা কিন্তু খুব চালাক, চট করে তোমার জিভে চলে আসতে পারে।”
কয়েকদিন যাওয়ার পরই রাজা আবার ডেকে পাঠালেন মামাদকে। গাদা লোকলষ্কর জড় হয়েছে – রাজা যাবেন শিকারে। রাজা তাঁর ঘোড়াকে ধরে আছেন ঘোড়ার কেশর চেপে ধরে রেখে; তাঁর বাঁ পা ইতিমধ্যেই রেকাবে উঠে গেছে। তিনি মামাদকে আদেশ করলেন –
“আমার গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে যাও আর রাণীকে খবর দাও আমি কাল দুপুরে তাঁর কাছে খাব। প্রচুর খাবারদাবার বানাতে বল। তুমিও আমার সঙ্গে একসাথে খাবে।”
মামাদ রাজাকে কুর্ণিশ করে রাণীর কাছে গেলেন। তখন রাজা হাসতে হাসতে বললেন, “আমরা শিকারে যাবই না আর মামাদ রাণীর কাছে মিথ্যা বলবে, হে হে। কাল আমরা সবাই মিলে ওকে নিয়ে হাসাহাসি করব।”
কিন্তু জ্ঞানী মামাদ প্রাসাদে গিয়ে বললেন – “রাণীমা, আপনি আগামীকালের দুপুরের ভোজনের জন্য প্রচুর খাবারদাবারের আয়োজন করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন। রাজা কাল দুপুরে আসতেও পারেন আবার নাও পারেন।”
রাণী বললেন – “ঠিক করে বলুন তো তিনি আসবেন না আসবেন না?”
“আমি সত্যিই জানি না তিনি তাঁর ডান পা-টা রেকাবে ঢোকালেন নাকি আমি চলে আসার পরেই বাঁ পা-টা মাটিতে নামিয়ে রাখলেন।”
সকলে রাজার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। তিনি পরের দিন এলেন আর রাণীকে বললেন – “জ্ঞানী মামাদ, যে কখনও মিথ্যা কথা বলেনি, কাল কিন্তু তোমাকে বলেছে।”
কিন্তু রাণী তাঁকে মামাদ কী কী বলেছেন সব বললেন। তখন রাজামশাই উপলব্ধি করলেন যে জ্ঞানী মানুষ কখনও মিথ্যা বলেন না, আর তাঁরা সেটুকুই বলেন যা তাঁরা নিজের চোখে দেখেন।
(www.theoffnews.com truthful African folk tales)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours