মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হিন্দমোটর, হুগলি:
আজকাল এই অসৎ মানুষের ভীড়ে সেদিন হঠাৎই এক ভালো মানুষের সাথে যোগাযোগ হয়ে গেল। তোমরা খুব সামান্য ভাবতে পারো কিন্তু আমার কাছে অসামান্য। সে ভালোলাগাটুকু হারিয়ে না ফেলে তোমাদের সাথে ভাগ করে নিলাম।
ঘোর কলিযুগের সে এক মেয়ের গল্পকথা। নামটি তার মৌ দেবনাথ। ফেসবুকের ট্রোল সূত্রে দিন চারেকের না-আলাপের আলাপ। মেয়েটি একটি হেল্প পোস্টে এক অসহায় বাচ্চা বিড়ালের ছবি দিয়েছে। দুধের বাচ্চা সে। বাচ্চাটিকে কোন মানুষ রূপী অমানুষ তার মায়ের কাছে থেকে তাকে কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে যায় মরার জন্য। মেয়েটি তার অসহায় কান্না শুনে তাকে উদ্ধার করে নিজের কাছে রাখে।
কিন্তু সে যেহেতু আরও কয়েকটি পশুর সেবা করে তার পক্ষে ওর চিকিৎসা খরচ নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। সে তাই সবার কাছে পাঁচ দশ টাকা সাহায্য চাইছিল। সত্যিই আমি নিজেও জানি ওদের ওষুধের ভীষণ দাম। বিড়াল বাচ্চাটির করুণ মুখ দেখে আমার ভীষণ মায়া লাগছিল। ভাবলাম নিজের কাছে যদি আনতে পারতাম। সে ইচ্ছে মনে চেপেই হেল্প পোস্টে দেওয়া জিপে নাম্বারে আমার সাধ্যমত অল্প কিছু টাকা পাঠাই। অবশ্য খোলামনে নয়। মনে সন্দেহ নিয়েই সেই টাকা আমি সাহায্য করি। কারণ আজকাল অনেকেই ওদের নাম করে টাকা তোলে আর সে টাকায় নিজেরা ফূর্তি করে। টাকা পাঠিয়ে আমি মেয়েটিকে ফোন করি এবং বলি সামান্য কিছু দিলাম আর লাগলে পরে দেব। সাথে এও বললাম আমি যদি পারতাম ওকে রাখতে খুশী হতাম। কিন্তু যেহেতু আমি রাস্তার এবং বাড়ি মিলিয়ে রেস্কিউ করা বেশ কিছু কুকুর, বিড়ালের খাওয়া আর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি তাই পারলাম না। শরীর এবং সামর্থ্য দুই আমার নেই। মেয়েটি ধন্যবাদ জানাল এবং বলল তবুও তো আপনি ভেবেছেন, দিয়েছেন।
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরছি। ট্রেন থেকে নামতেই একটি মেসেজ আমার অ্যাকাউন্টে এল। আমার সাহায্য করা টাকা ফিরে এসেছে ওই মেয়েটি মানে মৌ দেবনাথের কাছ থেকে। সাথে একটা মেসেজ তাতে লেখা -(নিচে দিলাম লেখার সে ছবি)।
একজন মহিলা তার পোস্ট দেখে যিনি পশু চিকিৎসক তিনি বাচ্চার আশ্রয় এবং চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন তাই আমরা যারা ওকে সাহায্য করেছি সে টাকা ও সসম্মানে সবাইকে ফেরত দিচ্ছে আর হেল্প পোস্ট তুলে নিচ্ছে।
মেসেজ পেয়ে অবাক আমি। এক অদ্ভুত সে অনুভূতি। পরম ভালোলাগা এই ভেবে যে অসহায় মা হারা বাচ্চাটি নিরাপদ আশ্রয় পেল, আর আমার দ্বিধা মিশ্রিত ভালোবাসার, তার মূল্য দ্বিগুণ করে এইভাবে ফিরিয়ে দিল মেয়েটি? অপরাধবোধ আমার মনে তখন। কারণ আমি তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি।
থমকে গেল আমার দুটো পা। বসে পড়লাম স্টেশনের বেঞ্চে। প্রায় সবাই চলে গেছে। আমি একা আর কিছু লোকজন এদিক ওদিক। আকাশের দিকে তাকালাম। পূর্ণ চন্দ্র হবার আশায় উঠেছে চাঁদ। সেও হাসছে। আমার ভালোলাগা টের পেল মনে হয়। অনেক শঠতা দেখেছি, স্বার্থপরতা, প্রবঞ্চনা, হিংসা দেখেছি মানুষের। যারা অকৃতজ্ঞ তাদের খেলা দেখেছি। তার মাঝে এ ঘটনা আমার এক পরম প্রাপ্তি। কারণ আমি অনুভূতিতে বাঁচি।
আবার বুঝলাম, সব কিছু ভালো নয়। আবার কিছু কিছু যে ভীষণ ভালো। এই ইন্টারনেট যুক্ত সোস্যাল সাইটের যুগেও।
হে দয়াময়, ভালো থাকুক এই ভালো মনগুলো। সে মনের অধিকারী মানুষগুলো। রবিঠাকুর মনে এলেন তক্ষুনি -
"দিলেম যা রাজ-ভিখারীরে
স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে,
তখন কাঁদি চোখের জলে
দুটি নয়ন ভরে--
তোমায় কেন দিইনি আমার
সকল শুন্য করে।"
(www.theoffnews.com honesty)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours