সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

“পুজোয় চাই নতুন জুতো” - আমাদের ছোটবেলায় দুর্গাপুজোর ঠিক কদিন আগে খবরের কাগজে পাতা জোড়া বাটা কোম্পানির জুতোর বিজ্ঞাপন বেরত, সঙ্গে থাকত বিজ্ঞাপন জগতে আলোরণ সৃষ্টিকারী এই সহজ কিন্তু সার্থক ক্যাপশন। বাড়ির বড়রা সেই বিজ্ঞাপন দেখে তাতে গোল্লা এঁকে দিতেন কোন জুতোটা আমার জন্য কেনা হবে। তারপরে সেই কাগজ সমেত বাটার দোকানে যাওয়া হতো। হর্নশু দিয়ে জুতো তো পরিয়ে দেওয়া হত - বড় হলে পরার সময় কিছুদিন কাপড় গুঁজে পরা হতো আর একটু ছোট হলে তো পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ফোসকা অবশ্যম্ভাবী।

রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা-আবিষ্কার’ কবিতায় ‘চামার-কুলপতি’-র অভিনব আবিষ্কারের কৃতিত্ব আত্মসাৎ করেছিল গবুচন্দ্র মন্ত্রী কিন্তু অস্ট্রিয়ায় ২২০০ বছরের পুরনো বাচ্চাদের ফিতেওলা যে জুতো গোটাগুটি অবস্থায় পাওয়া গেছে তা নিশ্চয়ই লৌহ যুগের কোনও মুচির তৈরি করা। 

জার্মানির বোচুমের ‘জার্মান মাইনিং মিউজিয়াম’ আর ‘লাইবনিজ রিসার্চ মিউজিয়াম ফর জিও রিসোর্সেস’-এর গবেষকরা একমত হয়েছেন যে ৩০ ইউরোপীয় মাপে বা ১২ আমেরিকান মাপের এই জুতোটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা ডুর্নবার্গের পশ্চিম গ্রামে এই প্রাচীন শিশুর জুতা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা যে জায়গায় খনন করছিলেন সেখানেই লৌহ যুগে মানুষরা রক সল্ট বা পাথুরে নুন খনন করত।

এই এলাকার নুনের একটা গুণ হল যে এই বাচ্চার জুতোর মত অনেক জিনিসকে খুব ভাল সংরক্ষণ করে রাখে। সেই কারণেই এত বছর পরেও স্যান্ডালটি এত ভাল অবস্থায় আছে।

জার্মান মাইনিং মিউজিয়ামের গবেষণা বিভাগের নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক থমাস স্টোয়েলনার প্রেস রিলিজে বলেছেন যে তাঁরা বহু বছর ধরে ডুর্নবার্গে খননে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলি সনাক্ত করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই আবিষ্কারগুলি থেকে তাঁরা বুঝতে পারেন যে অতদিন আগে খনির কাজ কীভাবে চলত, খনির শ্রমিকরা কীভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন করত আর কী কাজই তাদের করতে হতো।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রাচীন বাচ্চার জুতোর সঙ্গে অন্যান্য অনেক পুরনো জিনিস খুঁজে পেয়েছেন, যেমন কাঠের বেলচা আর ফারের টুকরো। এমন ফার বা উলের অংশও তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন যেটা হয়ত একটা ফার কোটের হুডের অংশ ছিল। বাচ্চার জুতোর যে ফিতেগুলি তাঁরা পেয়েছেন সেগুলি সম্ভবত শণ বা লিনেন দিয়ে তৈরি।

খনিতে বাচ্চার জুতো আবিষ্কার খুব তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এর থেকে জানা যায় যে প্রাচীন যুগে বাচ্চারাও খনিতে বড়দের সঙ্গেই থাকত।

অধ্যাপক স্টোয়েলনার আরও উল্লেখ করেছেন, "জৈব পদার্থ সাধারণত সময়ের সাথে সাথে পচে যায়। এই বাচ্চার জুতো মতই ডুর্নবার্গে পাওয়া কাপড়ের অবশিষ্টাংশ বা মলমূত্রও লৌহ যুগের খনি শ্রমিকদের জীবনধারণের বিরল অথচ সামগ্রিক ধারণা দেয়।”

যে বাচ্চার জুতোটি পাওয়া গেছে সে হয়ত কোনও দুর্গাপুজোয় সেটি উপহার পায়নি কিন্তু নতুন জুতো পাওয়ার আনন্দ নিশ্চয়ই এখনকার বাচ্চার থেকে তার কোনও অংশে কম ছিল না!

(www.theoffnews.com oldest leather Shoe ancient Dunburg)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours