মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হিন্দমোটর, হুগলি:
কোভিড পিরিয়ডের কড়াকড়ি কমেছে তখন। বেরোতে শুরু করেছে সবাই নিয়মকানুন মেনেই। আমিও এভাবেই কোনও এক কাজে বেরিয়ে ফেরার পথে শ্রীরামপুর থেকে অটোতে উঠলাম। ওঠা মাত্র অটোচালক বললো আপনি? কতদিন পর। ভালো আছেন?
চমকে উঠলাম। কারণ আমি তাকে চিনতে পারিনি। তারপর চেনে হয়তো মনে করে,
-হ্যাঁ
বলে হাসলাম। মুখে মাস্ক।
কিছুক্ষণ পর অটোওয়ালা বলল -
"দোকানটা বন্ধ করে দিলেন? "
সাতপাঁচ না ভেবে বলে দিলাম,
-হ্যাঁ।
"লকডাউনের আগে না পরে করলেন?"
-পরে।
ও আচ্ছা। তাই আপনায় দেখি না।
আবার খানিক্ষন চুপচাপ। অটো চলছে নিজের গতিতে। আমি ভাবছি আমার কিসের দোকান? কেনই বা বন্ধ করলাম ইত্যাদি।
আবার অটোচালক-
" মার্কেট ভালো নয় বুঝলেন।"
-হ্যাঁ। "
"এখন বিউটি পার্লারে লোক হচ্ছে?"
-হ্যাঁ, হচ্ছে মোটামুটি।
"তাহলে দোকান খুলে ফেলুন। ঠিক কাস্টমার আসবে।"
বুঝলাম এতক্ষনে যে আমার বিউটি পার্লার আছে।
সত্যি এমন কত জিনিস আমাদের নিজের থাকে যা আমরা নিজেও জানি না।
যাক খুশীই হলাম। নেই তো নেই। ভাবতে দোষ কি?
"টিংকুদা ভালো আছে?"
-হ্যাঁ। (যদিও তিনি কে আমি জানি না)
আরও কিছু খবরাখবর নেওয়া দেওয়া হল যেমন-
রাস্তায় লোক অনেক, ভাড়া বেশী, পিঁয়াজের দাম, ট্রেনের প্যাসেঞ্জার কম, পুলিশ ধরছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার নামার পালা--
বললাম,
-দাঁড় করাবেন, এবার নামব।
"এখানে কেন? ওই বাড়িতে যাবেন না। "
-না।
"কেন?"
-না অন্য একজনের বাড়ি যাব। দরকার আছে।
"ফিরবেন কখন?"
-রাত্তির হবে৷
"আচ্ছা।"
ঘ্যাঁচ করে অটো থামল। এবার বললেন,
"সাবধানে যাবেন।"
-হ্যাঁ। আসি। ভালো থাকবেন।
আমি ফিরছি, তারপর বিউটি পার্লারের মালকিন হয়ে। ভাবছি, যাক না চিনে কত গল্প হলো। হয়তো সে আমাকে অন্য কেউ ভেবেই কত গল্প করল। এতে দুজনেরই কিছু ক্ষতি হল না। উপরন্তু মানুষটা এক অচেনা মানুষকে চেনা ভেবে নিয়ে অটোচালক বন্ধু মন খুলে তবেই তো দুটো কথা বলল। এক মস্ত অস্থির সময়ের (কোভিড পরবর্তী) ঢেউ পেরিয়ে আমাদের কথাই আমাদের বড় প্রিয় ছিল তখন। হয়তো তাকে ভুল ধরিয়ে দিলে সে অপ্রস্তুত হতো। খেই হারাত, থেমে যেত তার মনের কথাগুলো।
তার চেয়ে এই ভালো। কেউ না থেমে যাক তার স্বতঃস্ফূর্ততা ভুলে। চলুক চলতে থাকুক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
জীবনে তো কত নাটক করতে হয় আমাদের। সংসারে বা কর্মজীবনে বা বাঁচতে গিয়ে। কষ্ট চেপেও কেউ হাস্যকৌতুক করে। এতো একটা ছোট্ট সাইড রোল।
মন্দ কি? আমার মন বলল ঠিক করেছি আমি। আরও বলল-
"আমি পথ হারাই, পথ মাড়াই, আবারও পথ হারাই।"
আর পথের এই টুকরো মুহূর্তগুলো উপভোগ করে যাই প্রাণভরে। বাঁচি প্রাণভরে।
"আদমি মুসাফির হ্যায় আতা হ্যায় যাতা হ্যায়
আতে যাতে রাস্তে মে ইয়াদে ছোড় যাতে হ্যায়।"
(www.theoffnews.com friendship autorickshaw)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours