সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
সুইস এনজিও ‘ইএ আর্থ অ্যাকশনে’র ‘প্লাস্টিক ওভারশুট ডে’ রিপোর্টে সম্প্রতি জানানো হয়েছে যে বিশ্বে প্রতি বছর যে অপুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক আবর্জনা জমা হয়, তার ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী যে ১২টি দেশ তার মধ্যে ভারত অন্যতম। যদিও দ্রুত উন্নয়নশীল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির মাথাপিছু প্লাস্টিক আবর্জনার উৎপাদনের পরিমাণ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে ২০২১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক আবর্জনার উৎপাদন ৭.১১ শতাংশ বেড়েছে। ওই সংস্থার ধারণা যে ২০২৪ সালে বিশ্বে মোট ২২ কোটি টন প্লাস্টিক আবর্জনা তৈরি হবে যার মধ্যে ৭ কোটি টন পরিবেশ দূষণ ঘটাবে এবং ভারতে অপুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ হবে ৭৪ লক্ষ টন যা “খুবই বেশি।”
কানাডার অটোয়াতে জাতিসংঘের আন্তঃসরকার আলোচনা কমিটির (আইএনসি) চতুর্থ বৈঠকের আগে এই রিপোর্ট জনসমক্ষে এসেছে, যখন বিশ্বের তাবড় নেতারা প্লাস্টিক দূষণের চূড়ান্ত অবসানের জন্য একটি কড়া এবং শক্তিশালী আইন তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে - “১২টি দেশ বিশ্বের ৬০ শতাংশ অপুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক আবর্জনা্র জন্য দায়ী রাষ্ট্রগুলি হলো - চীন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক।” যদিও রিপোর্টে ভারতকে "কম-বর্জ্য-উৎপাদনকারী" দূষণকারী হিসাবে দেখান হয়েছে কারণ তার মাথাপিছু কম প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন (প্রতি বছর ৮ কেজি)। এখনও, ভারতের অপুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য চীনের এক-পঞ্চমাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশের কম হবে। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে ভারতের তরফে পরিবেশে গড়ে ৩,৯১,৮৭৯ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং জলে ৩১,৪৮৩ টন রাসায়নিক পদার্থ মিশে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হয়েছে।
বেলজিয়ামবাসীরা বছরে মাথাপিছু ১৪৭.৭ কেজি প্লাস্টিক আবর্জনা সৃষ্টি করে বিশ্বের প্লাস্টিক বর্জ্যের শীর্ষ উৎপাদক। এটা ভারতের তুলনায় ১৬ গুণ বেশি। অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষেত্রে ওমান দেশটি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে, ২০২৪ সালে জনপ্রতি ১১১ কেজি অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক উৎপাদিত হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এটি নরওয়ের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি। ১২টি দেশের মধ্যে একেবারে নীচে রয়েছে ভারত।
ওই রিপোর্টে সতর্ক করে আরও উল্লেখ রয়েছে যে ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এমন এলাকায় বসবাস করবে যেখানে প্লাস্টিক আবর্জনা ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ‘ইএ আর্থ অ্যাকশন’ জানিয়েছিল যে ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত প্লাস্টিক আবর্জনা এই গ্রহের ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’কে ছাড়িয়ে যাবে এবং এই দিনটিকে “প্লাস্টিক ওভারশুট ডে” বলা হবে।
প্রতিটি দেশের নিজস্ব "প্লাস্টিক ওভারশুট ডে" রয়েছে, যা উৎপন্ন প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ এবং এটি পরিচালনা করার দেশের ক্ষমতা দ্বারা নির্ধারিত হয়। ভারত ২৩ এপ্রিল তার প্লাস্টিক ওভারশুট দিবসে পৌঁছাবে, রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ইএ আর্থ অ্যাকশন অ্যান্ড প্লাস্টিক ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্কের সহ-সিইও সারাহ পেরিয়ের্ড বলেছেন - “এই তথ্যটি অভ্রান্ত, আবর্জনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু যে হারে প্লাস্টিকের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে তার তুলনায় এই নিয়ন্ত্রণ তুচ্ছ হয়ে গেছে। পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা বৃদ্ধি প্লাস্টিক সংকটের সমাধান করবে এমন ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। প্লাস্টিক তৈরিতে কড়া নিয়ন্ত্রণ ছাড়া প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম সবথেকে বেশি হলে একটা কাগুজে লড়াই হয়েই রয়ে যাবে।”
(www.theoffnews.com plastic polution)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours