সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
ব্রাজিলীয় লোককথা
সে বহু দিন আগের কথা। ব্রাজিলে একটি হতদরিদ্র লোক বাস করত। সে এতটাই গরীব ছিল যে হাঁড়ি চড়ানোর জন্য রোজ তাকে একের পর এক জিনিস বিক্রি করতে হতো – যাকে বলে একেবারে হাঁড়ির হাল। কিছুদিন পর তার এমন অবস্থা হলো যে তার পোষা বেড়ালটি ছাড়া তার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না। বেড়ালটি তার জানসে পিয়ারী ছিল তাই সে বলল, “মেনি সোনা, যাই হোক না কেন, আমি তোকে কখনও কাছ ছাড়া করব না, জান কবুল। না খেতে পেয়ে মরি তাও ভি আচ্ছা।”
বেড়াল তাকে বলল, “হে মহান প্রভু ডোমিংগো, দুশ্চিন্তা করবেন না। যতদিন আমি তোমার সঙ্গে আছি তোমার খাবার অভাব হবে না। তোমার আমার দু’জনারই ভাগ্য ফেরাবার জন্য আমি এখনই বাড়ির বাইরে রওনা দিচ্ছি।”
বেড়াল তাদের ডেরা থেকে বেরিয়ে সোজা জঙ্গলে গেল আর মাটি খুঁড়তে শুরু করল। তারপর খুঁড়তেই থাকল, খুঁড়তেই থাকল। যতবার খোঁড়ে ততবার রূপোর টুকরো বেরিয়ে আসে। তাদের মধ্যে কয়েকটা টুকরো সে ডেরায় নিয়ে এল যাতে তার মনিব তাদের দুজনের খাবার কিনতে পারে। বাকী টুকরোগুলো সে রাজা মশাইকে ভেট দিল।
পরের দিন সে মাটি খুঁড়ে পেল অনেক সোনা্র টুকরো যেগুলো সে রাজাকে উপহার হিসেবে দিল। তার পরের দিন সে উপহার দিল অনেক হীরের টুকরো।
রাজা তাকে তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এত দামী দামী উপহার তুমি কোথা থেকে পাচ্ছ? কে আমাকে এই অসাধারণ উপহারগুলো পাঠাচ্ছেন?”
বেড়াল উত্তরে বলল, “আমার মনিব ডোমিংগো”।
এখন হয়েছে কি, রাজার একটি সুন্দরী কন্যা ছিল। রাজা ভাবল তার রাজ্যের সব থেকে ধনী ব্যক্তি নিশ্চয়ই এই ডোমিংগো। সে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিল যে এই সুপাত্রকে অবিলম্বে তার মেয়ের বিয়ে করা উচিৎ।
বেড়াল যখন ডোমিংগোকে এই সুখবর দিল যে রাজকুমারী তাকে বিবাহ করতে চায়, সে আরও মনমরা হয়ে বলল, “বিয়ে করতে যাওয়ার মতো আমার কোন জামাকাপড়ই নেই”।
বেড়াল তাকে আবার আশ্বস্ত করল, “ওসব নিয়ে একদম ভেবো না। ওটা জাস্ট আমার ওপরে ছেড়ে দাও”।
বেড়াল রাজাকে গিয়ে জানাল, “মহারাজ, আমার মুনিব ডোমিংগোর বিয়ের পোশাকআশাক যে দর্জিখানায় বানানো হচ্ছিল সেখানে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড ঘটেছে। সেই দর্জি আর তার সহকারীরা সকলে পুড়ে মরেছে আর আমার মনিবের বিয়ের সব পোশাক ভস্মীভূত হয়ে গেছে। মহারাজের কী ডোমিংগোর উপযোগী কোন পোশাক আছে যা তিনি বিয়েতে পড়তে পারবেন? রাজা তাঁর সবচাইতে মহার্ঘ্য পোশাকপরিচ্ছদ ডোমিংগোকে পাঠালেন। তাকে রাজবেশ পরিয়ে বিয়ের জন্য তৈরি করা হল।
ডোমিংগো বেড়ালকে বলল, “আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসে রাখার মত আমার তো কোন প্রাসাদ নেই!”
“ঘাবড়িয়ো না”, চটজলদি উত্তর দিল বেড়াল, “আমি সেটারও ব্যবস্থা করছি”।
বেড়াল জঙ্গলে গিয়ে একটা প্রকাণ্ড প্রাসাদে গিয়ে হাজির হল যেখানে বিশাল একটা দৈত্য বাস করত। বেড়াল সটান সেই দৈত্যর কাছে গিয়ে খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল, “হে মহামতি দৈত্য, আমার মনিব ডোমিংগোর জন্য আপনার এই প্রাসাদটা ধার নিতে চাই। দয়া করে কিছুক্ষণের জন্য কি এটা আমাকে দেবেন?”
এই কথা শুনে দৈত্য তো রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। তার সবথেকে পিলে চমকানো চীৎকার করে সে বলে উঠল, “না, আমার প্রাসাদ, আমারই প্রাসাদ। তোকে বা তোর ছুঁচো মুনিবকে বা আর কাউকেই আমি প্রাসাদ ধার দেব না”।
বেড়াল বলল, “বেশ, ঠিক আছে”। এই বলে সে দৈত্যকে চোখের পলকে বেকনে পরিণত করল আর ওইখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তাকে খেয়ে ফেলল।
দৈত্যর প্রাসাদটা ছিল অনিন্দ্য সুন্দর। প্রাসাদের একটা ঘর ছিল সোনায় মোড়া আর একটা ঘর ছিল রূপোয় মোড়া আর একটা ঘর ছিল হীরে দিয়ে সাজানো। উদ্যানের পাশ দিয়ে একটা অপূর্ব নদী বয়ে চলেছে।
ডোমিংগো আর তার নবোঢ়া স্ত্রী যখন রাজকীয় বজরায় আসীন হয়ে নদী দিয়ে উদ্যানের দ্বারের কাছে উপস্থিত হল তখন তাদের চোখে পড়ল বেড়াল গবাক্ষের ওপর বসে গান করছে। তারপর তারা আর কখনও তাকে দেখতে পায়নি। সে জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে গেল অন্য কোনও দরিদ্র লোককে আমীর করবার জন্য। হয়ত তোমার সঙ্গেও তার একদিন দেখা হয়ে যেতে পারে। কে বলতে পারে? ব্রাজিলে বলে “কুয়েম সাবে?”
(www.theoffnews.com Brazilian folk tales)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours