সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

অবজ্ঞা, অজ্ঞতা, অসাবধনতা, অসচেতনতা। এই চারটি বাংলা শব্দ মর্মার্থের নির্যাস হলো মনুষ্য শরীরের রোগের বাসার জ্বলন্ত উপকরণ। মানব জীবনে ক্রমাগত তার অভিযোজন পাল্টে যাচ্ছে। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। অবাধ্য গতিতে। অভিযোজন বদলের দোসর হিসেবে ক্রমশঃ তাই পাল্টে যাচ্ছে মানুষের অভ্যাস, রুচি, আচরণ, মতামতের মতো জীবন ধারণের খুব পরিচিত সংঞ্জাগুলোও। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের বেঁচে থাকার মধ্যে ঘটেছে আমূল পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস। আজ তো বিশ্ব জুড়ে ফাস্ট ফুডের রমরমা প্রচলন। এক প্রকার যথেচ্ছ হারেই। ফলাফলও তাই একেবারে রেডিমেড মেলে। অধিকাংশ মানুষ আজ অপ্রত্যাশিত পর্যায়ে বিভিন্ন জীবনঘাতী রোগে যে আক্রান্ত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে। এহেন আশু সংকট নিরসনে কিইবা আর করা যায়? এমনই আশঙ্কা থেকে মুক্তি প্রাপ্তির তত্ত্বতালাশের খোঁজে একটি মনোজ্ঞ আলোচনাচক্রের আয়োজন হয়ে গেল ভারত চেম্বার অফ কমার্স'এর তত্ত্বাবধানে। উদ্যোক্তাদের বণিকসভার নিজস্ব ভবণে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গত ৮ নভেম্বর। বিকেল বেলার এই অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল "পরিবর্তিত জীবনযাত্রায় রোগের প্রভাব ও  সুস্থতার চাবিকাঠি।"

ঘন্টা দেড়েকের এই আলোচনা চক্রে প্রারম্ভিক ভাষণ দেন আয়োজক সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নরেশ পাচিসিয়া। তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের সাবধানবাণী শুনিয়ে বলেন, "আজকাল আমরা প্রায় সকলেই ফাস্ট ফুড খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে নানা ধরনের রোগের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। শরীরের তাই অস্বস্তি মাথা চাড়া দিচ্ছে হামেশাই। সুতরাং এখনই আমাদের সাবধান হবার সময় এসে গেছে। অন্যথায় আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে নিয়ে আসব অচিরেই।" নরেশবাবুর বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বণিকসভার লেডিস ফোরামের চেয়ারপার্সন রেনুকা শাহ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, আজকাল একটু বয়স বাড়লে আমরা যেন আর স্বাভাবিক ভাবে নড়তে চড়তে পারি না। এর একটাই কারণ। বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ আমাদের শরীরে দ্রুত গতিতে জাঁকিয়ে বসেছে। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের সতর্ক হতে হবে। সময়টা এখানে খুব বড় ফ্যাক্টর। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ নিময় করে।'

আলোচনা চক্রের মধ্যমনি হিসেবে রোগমুক্তির বিকল্প বিশেষজ্ঞ রীতেশ বাবরি মন্তব্য করেন, সংক্রমণ ব্যতীত আধিকাংশ সাধারণ রোগ কিন্তু বাইরে থেকে এসে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে না। আমাদের শরীরের অন্তর্গত নানাবিধ অনিয়মের কারণেই আমরা সাধারণ ভাবে রুগ্ন হয়ে পড়ি। তথ্য অনুসারে আমাদের শরীরের রক্তে প্রতি সেকেন্ডে ২ মিলিয়ন নতুন লোহিত কণিকা তৈরি হয়। একই সময়ের মধ্যে ৩.৮ মিলিয়ন নয়া কোষ গঠিত হয়। তবু কি বিচিত্র ব্যাপার, শরীরের অন্তর্নিহিত স্থলে নিজস্ব পর্যায়ে এতো বিপুল পরিমাণ সংশোধনের পরেও আমরা রোগাক্রান্ত হই। এর মূল কারণ হলো শরীরের এই নিত্য সৃষ্টি যজ্ঞের ভারসাম্য আমরা নিজেরাই নষ্ট করি। অবহেলা, অবজ্ঞা, অজ্ঞতা, অসাবধানতার ফলে ভারসাম্যহীনতার জেরে শরীরের নানা প্রান্তে বাধার সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির এই সৃষ্টিলীলায় লাগাতার অবরোধের কারণে শরীরে ঘিরে শুরু হয় পাল্টা অভিঘাত পর্ব। আর তখনই মনুষ্য কলেবরকে ছেঁকে ধরে নানাবিধ রোগ।

রীতেশবাবু আরও বলেন, "এর থেকে একটাই মুক্তির উপায়। যা হলো ধারাবাহিক ভাবে নিয়ন্ত্রন ও ভারসাম্যের স্থিতি নষ্ট না করা। পরিমিত পর্যায়ে ব্যালেন্সড আহার, নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জন্য প্রাণায়াম, প্রয়োজন মাফিক ব্যায়াম, পরিমিত ধ্যানাভ্যাস, নেশামুক্তি ও পর্যাপ্ত নিদ্রা শরীরের নিজস্ব ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।"

পরিশেষে তিনি যোগ করেন, টেনশন ফ্রি হয়ে আনন্দে জীবনযাপন করুন, হাসি খুশিতে থাকুন। দেখবেন রোগ আপনাকে এমনিই আলবিদা জানাচ্ছে।

(www.theoffnews.com lifestyle fastfood diseases)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours