সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
পলকা শীতের নম্র ছোঁয়া যেন আসন্ন শৈত্য ঘনঘটার জানান দিচ্ছে বঙ্গ প্রকৃতির ক্যানভাসে। তাই এই নব্য ঠান্ডা জনিত আবহে শারীরিক সুরক্ষায় আগাম প্রস্তুতিও বংবাসীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এখন যথেষ্ট বিদ্যমান। নিশ্চিত সুরক্ষা কে না চায়। আসলে আমাদের জীবন যাত্রা ঘিরে সুরক্ষার বিকেন্দ্রিক নানান কাম্য বলয় এই সমাজ ব্যবস্থার এক বাস্তব মেক ইন ইন্ডিয়া হয়ে উঠেছে। তাই এই সুরক্ষা প্রসঙ্গে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) কেনই বা মুখ ফিরিয়ে থাকবে বা থাকতে পারে।
তাই এই প্রাসঙ্গিকতাকে অভিনব উপায়ে বাস্তব রূপরেখায় পরিণত করার প্রয়াসে সিআইআইয়ের উদ্যোগে আয়োজিত হয়ে গেল 'টেন্থ ইনসিওরইন্ড' শীর্ষক এক মনোজ্ঞ আলোচনা সভা। অনুভবের হেমন্ত শিশিরের গন্ধ মাখা আদুরে সকাল রৌদ্দুরে আয়োজিত এই সভা যে তাই সুরক্ষার শীলমোহরে দেশীয় ইন্স্যুরেন্সকেই মান্যতা দিল একশো শতাংশ। গত বৃহস্পতিবারের ভাবগম্ভীর আলোচনায় সার্বিক সাগর মন্থনের তাই নিটফল হলো, জীবনের অঙ্ক খাতায় ভারতীয় শিল্পের পাটিগণিতে ইন্স্যুরেন্সের প্রভাব ও ২০৪৭ সালে শক্তিশালী সুরক্ষিত ভারত গড়ার সংকল্প। আসলে ইন্স্যুরেন্সের যজ্ঞ পীঠে সুরক্ষার মন্ত্র উচ্চারণে মেরা ভারত মহান যে সিআইআইয়ের মন্দ্রিত চিরস্বপ্ন।
এই সুরক্ষা মঞ্চে সশরিরী হাজির না হতে পারলেও ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন মন্দাকিনী বালোধি। দিল্লীবাসী এই ললনা যে কর্মসূত্রে যুক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধিকর্তা হিসেবে।
বিরাটাকার লাইভ স্ক্রিনের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্দাকিনীদেবী বলেন, "পূর্বের থেকে আমাদের জীবনযাত্রা জেড গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তনের হাওয়ার নৌকার পালে স্বনির্ভর শিল্পেও ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম অগ্রজ দেশ। সুতরাং সার্বিক পর্যায়ে সুরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ভারতীয় ইন্স্যুরেন্সের ভূমিকা আজকের দিনে চুড়ান্ত অপ্রতিরোধ্য। কেন্দ্রীয় সরকার তাই নমনীয়তার মোড়কে দেশীয় ইন্স্যুরেন্সকে ব্যবস্থাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে অবিচল।" তিনি আরও জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী কালের ভারত আর ২০২৪ ভারতের মধ্যে তারতম্য অনেক। আমরা সনাতন ভারতের ভিত্তি বজায় রেখেও ডিজিটাল যুগ অতিক্রম করে বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কালে বিবর্তিত হয়েছি। এই সত্যটা আমাদের সবাইকে মানতেই হবে। কি জীবনে কি শিল্পে। ফলে ইন্স্যুরেন্সকে উপেক্ষা করা আর সভ্যতার চাকা পিছনে ঘোরানোর প্রয়াস সমার্থক বিষয়। আজ আমরা আর্থিক দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম শক্তিশালী দেশ। সমরক্ষেত্রে পৃথিবীতে আমরা চতুর্থ স্থানে। শিল্পেও ভারত আজ প্রথম দশের বিশ্ব ক্লাবের সদস্য। ২০৪৭ সালে ভারতের অর্জূনের পাখির চোখ হলো প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ফার্স্ট বয় হওয়া। তাই ইন্স্যুরেন্স হলো আমাদের ভিত্তি, আমাদের সুরক্ষা, আমাদের ভরসা।
সিআইআইয়ের এই আলোচনায় অংশ নেন দেশের একাধিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বেশ কয়েকজন রথী মহারথীরা। বক্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এলআইসির পিজিএসএম সেক্রেটারি অনুরাধা মান্না। তাঁর মন্তব্য, দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি থেকে একশো বছরের যাত্রাপথের হিসেব কষতে বসলে ২০৪৭ সাল অবধারিত ভাবেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। সেই স্বপ্নিল মুহূর্ত যেন এখন থেকেই আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। সুতরাং স্বভিমান রক্ষার প্রশ্নে ভারতবাসীর আর অপেক্ষা করার সময় নেই। এই সময়কালে ভারতবাসীর জীবনকে সৌন্দর্যে চলমান করার জন্য লাইফ ইন্স্যুরেন্স যেমন সমাজের অকৃত্রিম বন্ধু তেমন দেশের অনবদ্য শিল্প পরিকাঠামো ও বিপুল উৎপাদনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্স্যুরেন্সের ভূমিকাও যে সর্বময় সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি স্বরূপ।
আইসিআইসিআই লোম্বার্ড জিআইসি লিমিটেডের কর্পোরেট সল্যুসন্স গ্রুপের ন্যাশনাল হেড রমণজিৎ ভাল্লা এই মঞ্চে মন্তব্য করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ভারতে প্রথম ইন্স্যুরেন্স ১৮১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এলআইসির হাত ধরে। যা ১৯৫৬ সালে জাতীয়করণ হয়েছিল। ২০০০ সালে দেশে প্রথম বেসরকারী বীমাকরণের অনুপ্রবেশ ঘটে। ফলে দেশের বীমা ক্ষেত্রে তুমুল প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। প্রত্যাশিত ভাবেই এই প্রতিযোগিতায় বীমা বিপ্লবের সুচনা সংঘটিত হয় ভারতের নানা আঙ্গিকে।
সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার আর্থিক বিষয়ক চেয়ারম্যান কৌশিক মুখোপাধ্যায় অবশ্য সতর্ক করে বলেন, বীমাকরণ এমন একটা অধ্যায় যেখানে স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর অভাবে দেশের আর্থিক বুনিয়াদের উপরেই বুলডোজার চলবে। সুতরাং এটা প্রতিষ্ঠা করার সময় এসে গেছে যে ইন্স্যুরেন্স ও স্বচ্ছতা হলো পারস্পরিক সমার্থক শব্দ। ডিজিটাল ইন্সুরেন্সে আমরা অনেক সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিযোগ শুনতে পাই। যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি দেশের বীমা ক্ষেত্রকে ঢেলে সাজাতে চলেছে সম্প্রতি। সিআইআইয়ের তরফে আমরা অনুরোধ করবো, কেন্দ্রীয় সরকার যেন আসন্ন এই উদ্যোগের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্সের স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে কঠোরতম নীতি গ্রহণ করে।
(www.theoffnews.com Insurance India)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours