দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
বিশ্বভারতীতে গেরুয়াকরণের প্রতিবাদে মুখর হলেন ভাষাভবনের পড়ুয়ারা। অভিযোগ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পবিত্র প্রতিষ্ঠানকে গেরুয়াকরণের মাধ্যমে কলুষিত করার চেষ্টা করছে একটি কায়েমী স্বার্থ। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটে। সদ্য কেন্দ্র সরকার বাংলা, অসমিয়া, মারাঠি, পালি ও প্রাকৃত ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে বিশ্বভারতীর ভাষা ভবণ এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করার জন্য বিদগ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তিনিকেতনের লিপিকাগৃহে ডা. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন, দিল্লির সঙ্গে যৌথভাবে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। অনির্বাণ গঙ্ডাগোপাধ্যায় ডা. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক। তিনি বিজেপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির (এনইসি) সদস্যও। এহেন একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এদিনের সেমিনারে বক্তব্য রাখতে আসেন, ত নিয়ে শুরু হয় জোর চর্চা। ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ তার প্রতিবাদে তাঁকে বাধা দিতে আসেন। অভিযোগ, গুটিকয়েক বাম সংগঠনের পড়ুয়ারা প্রবেশ পথের সামনে ধর্ণায় বসে পড়েন। তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় সহ অন্যান্য সুরক্ষা কর্মীরা এক ছাত্রকে জোর করে হাত ধরে তুলতে গেলে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। এরপর তারা লিপিকা গৃহ চত্বরে শ্লোগান দেন। ছাত্রী বান্ধুলি কারার বলেন, ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে আলোচনায় আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে কবিগুরুর পবিত্র মাটিতে আরএসএস ও বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঢুকতে দেব না। তার উত্তরে ডা. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আরএসএস কখনই পিএফআই, সিমির মতো ভারতবর্ষে নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। জ্যোতি বসু রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কেউ বক্তা এলে এই পড়ুয়াদের তো কোনও আপত্তি থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত মতবাদের ধারা আসবে। কোনও কিছুকে বাধা দেওয়া উচিত না। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ধর্ণা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু অতিথিদের আঁটকানো কোনও অধিকারের মধ্যে পড়ে না। সেই জন্য হাতে ধরে তুলে দিয়েছি। এর বেশি কিছু হয়নি। ভাষা ভবনের অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন প্রধান জানান, কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য এখানে হয়নি। সদ্য স্বীকৃত ধ্রুপদী ভাষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পড়ুয়াদের ভিতরে আসতে বলা হয়। যাইহোক তারা আসেনি। ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতেই পারে। তারা আমার ছাত্রছাত্রী। আমার নিজের। তাই কারও বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ আধিকারিক অতীগ ঘোষ বলেন, কোনও সেমিনার হলে আমাকে জানানো হয়। আমি হল বুক করি। এক্ষেত্রে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই এবিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এত গোপনীয়তা অবলম্বন করে এই সেমিনারের আয়োজন করেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিশ্বভারতীতে প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলেও ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি সিএএ সমর্থনে বিশ্বভারতীর আলোচনা সভায় যোগ দেওয়া রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে ঘেরাও করে সভা ভন্ডুলের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ ওঠে বামপন্থী ছাত্রদের বিরুদ্ধে।
সেদিন যেহেতু লিপিকা সভা গৃহের আসনে বিশ্বভারতী বামপন্থী ছাত্ররা লাগাতার অবস্থা বিক্ষোভ করছিল তাই লেকচার সিরিজের স্থান চুপিসারে বদল করে শ্রীনিকেতনের সমাজ কল্যাণ বিভাগের সভাগৃহে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্ররা সেই খবর পেয়ে সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা মাত্রই গেট টপকে ঢুকে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
(www.theoffnews.com Visva Bharati University)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours