প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূর্ব বর্ধমান:

অভয়া বলুন আর তিলোত্তমা বলুন, ওর মায়ের বিবৃতি অনুযায়ী মেয়েটির আসল নাম বদলে গেছে যা দুর্ভাগ্যজনক। মেয়েটির মা, তিনিও এই নাম বদলে যাওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। 

হতভাগী মেয়েটি জন্মালো, লেখাপড়া করল, লক্ষ্যে পৌঁছালো আবার সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেল। একদম অকালে।

মায়ের একমাত্র মেয়ে। কত আদরের মেয়ে। 

এদেশে মৃন্ময়ী মায়ের পূজা হয়, চিন্ময়ী মা ধর্ষিতা হয়। অদ্ভুত।

মেয়েদের হত্যাকারীদের লুকোনোর জন্য সুনিপুণ চক্রান্ত হয়, সরকার আততায়ীকে লুকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করে, আজও করছে যা মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। 

আমি ভাবছি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে কতটা মেধাবী হতে হয়। কত পরিশ্রম করতে হয়। কত কত বই বিনিদ্র রজনী জেগে পাতার পর পাতা উল্টে পড়তে হয়। এককথায় যারা জয়েন্টে ভালো স্থান অর্জন করে তারাই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়। প্রফেসর হয়। রিসার্চ করে । বিজ্ঞানী হয়।

ধর্ষিতা ও খুন হলে মহামান্য আদালতের নির্দেশ তার আসল নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম প্রকাশ্যে আনতে হবে, যা হবে মনগড়া একটা নাম।  

মহামান্য আদালতের মতে আসল নাম প্রকাশ্যে আসলে তা অপরাধের। ষআদালতের যুক্তি আসল নাম প্রকাশ্যে আনলে মেয়েটির পরিবারের সম্মানহানি হবে, মেয়েটির সম্মানহানি হবে। 

আচ্ছা, যে মেয়েটি অত্যাচারিত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল তার এই পৃথিবীতে সম্মান থেকেই বা কি লাভ? তার বাবা-মায়ের লজ্জা হবার তো কোন কারণ আমি খুঁজে পাই  না। 

সম্মানহানি যদি হয়ই তা মেয়েটির পরিবার বা মেয়েটির কেন হবে? 

আমার মতে সম্মানহানি হয় সরকারের। সম্মানহানি হবে সমাজের। কারণ এই সমাজ একটি মেয়েকে বাঁচতে দেয়নি। সরকার একটি মেয়ের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। ইনস্টিটিউশন নজর রাখেনি। তাই লজ্জা ইনস্টিটিউশনের, সরকারের ও সমাজের হওয়া উচিত। 

তাই কি নির্যাতিতার নাম গোপনের নির্দেশ? একটা সময়ের পর মানুষ যেন ঘটনা ভুলে যায় সেই জন্যই কি নির্যাতিতার নাম গুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত?

সমাজ, সরকার মেয়েটিকে বাঁচতে দিল না। সমাজ পুরুষতান্ত্রিক আজও। আজও নারী ভোগ্য বস্তু মাত্র। এই সমাজের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে আমি দাবি জানাচ্ছি নির্যাতিতা যদি মৃত হয় তার আসল নাম, ধাম ব্যবহার করার জন্য আইনি সংশোধন হোক। সেই মেয়ের ধর্ষকদের জানা গেলে বিচার হোক গণ আদালতে। 

কারণ, আইনি জটিলতায় আসল অপরাধীকে যেমন সরকার লুকিয়ে ফেলে, তেমনি বিচার পেতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। 

ধর্ষকের ফাঁসির পক্ষে আমি নই। ফাঁসি হলে ধর্ষক মরে না, বেঁচে যায়। আমি এমন শাস্তি চাই, যে শাস্তির কথা ভেবে ধর্ষক ধর্ষণের ভাবনা ভাবতে একশো বার ভাববে। আমি দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির পক্ষে যেমন ধরুন এই ধরনের মানুষকে খাসি করে দিতে হবে ইত্যাদি।

সত্যিই বলছি, আরজি কর-এর ডাক্তার ম্যাডামের নাম আমার আজ স্মরণে নেই। তবে স্মরণ রেখেছি, ওর উপর নারকীয় অত্যাচারের বিচার আজও হয়নি। 

আমি আশাবাদী একদিন বিচার হবেই। 

মহামান্য আদালতের উপর, সরকারি তদন্তকারী সংস্থার উপর থেকে ভরসা হারালে এই দেশ-সমাজ আমায় আবার ভারত বিরোধী ভাববে। তাই বিচার ব্যবস্থার কিছু কিছু বিষয়ে ঘৃণা হলেও,আশাবাদী হয়েই বাঁচতে হবে। 

নয়ত ওরা দেশবিরোধী, সরকারবিরোধী ঘোষণা করবে।

মনে করি, এই সঞ্জয় একা ধর্ষণ করেনি।

(www.theoffnews.com Abhaya rape murder court government)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours