সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

ওড়িশা ইনস্টিটিউট ফর মেরিটাইম অ্যান্ড সাউথ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ (OIMSEAS), রাজ্য সরকারের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক শাখা, এই অঞ্চলে কাজ করে চলেছে। OIMSEAS বালাসোর শহরের কাছে সুরক্ষিত প্রারম্ভিক মধ্যযুগের দুর্গের কাঠামোর অবশেষ আবিষ্কার করার পরে রেমুনা তহসিলের দুর্গাদেবী গ্রামে প্রত্নস্থলটি নথিভুক্ত করার জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এর কাছে অনুমতির প্রার্থনা করেছিল। দুর্গাদেবী এবং রানাসাহি আবিষ্কারের আগে বালাসোরে কোনও বড় ঐতিহাসিক স্থান নথিভুক্ত হয়নি। ময়ূরভঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী বালাসোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুর্গাদেবী সাইটের দক্ষিণে সোনা নদী এবং এর উত্তর-পূর্ব দিকে বুরাহাবালংয়ের মধ্যে প্রায় ৪.৯ কিলোমিটার পরিধির একটি বৃত্তাকার মাটির দুর্গ রয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা খনন স্থলে তিনটি সাংস্কৃতিক সময়ের স্বতন্ত্র চিহ্ন আবিষ্কার করেছেন: ক্যালকোলিথিক (২০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ১০০০ খ্রিষ্টপূর্ব), লৌহ যুগ(১০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব), এবং প্রারম্ভিক ঐতিহাসিক সময়কাল (৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ১০০ খ্রিষ্টপূর্ব)। একই সাথে এই অঞ্চলে সামুদ্রিক কর্মকান্ডের সাথে সাথে বৌদ্ধধর্মের বিকাশ ঘটে। অযোধ্যা, জয়রামপুর, কুপারি, সুজানাগড়, সোরো, বর্ধনপুর এলাকা থেকেও বৌদ্ধ দেহাবশেষ পাওয়া গেছে।

ইনস্টিটিউট জানিয়েছে যে খনন শুরুর উদ্দেশ্য হল ভারতের পূর্ব উপকূলের নগরায়নের সাথে সামুদ্রিক কর্মকান্ডের যুগপত বৃদ্ধি এবং বিকাশকে সংযুক্ত করা, উত্তরের গঙ্গা উপত্যকাকে মধ্য ওড়িশার মহানদী উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করা এবং উত্তর ওড়িশার প্রাথমিক সাংস্কৃতিক বিকাশের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া। 

"দুটি ছোট নালা, গঙ্গাহারা এবং প্রসানা, প্রত্নস্থলটির উত্তর এবং দক্ষিণে মিশেছে, যাতে ওই দুর্গটির জন্য একটি প্রাকৃতিক পরিখা তৈরি করেছে, যা আজ থেকে প্রায় ৪,০০০ বছর আগে তৈরি একটি প্রাচীন জল ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়," ইনস্টিটিউট জানিয়েছে।

OIMSEAS জানিয়েছে যে দুই একর উঁচু জায়গাতে অনুভূমিক খনন করা হয়েছিল, যেখানে ৪ থেকে ৫ মিটারের গভীরতায় মানব সংস্কৃতির প্রমাণ আবিষ্কৃত হয়েছে। কাজের প্রথম পর্যায়ে, নির্বাচিত পরিখাগুলিতে বৈজ্ঞানিক প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করা হয়েছিল, যা ২.৬ মিটার পর্যন্ত গভীর ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি মানব বসতির পাশাপাশি চ্যালকোলিথিক যুগের নিদর্শনগুলি আবিষ্কার করেছেন।

সুনীল কুমার পট্টনায়েক, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং সচিব, OIMSEAS বলেছেন - "দুর্গাদেবীর ক্যালকোলিথিক যুগের প্রধান আবিষ্কার হল একটি গোল কুঁড়েঘরের ভিত, লাল রঙের মৃৎপাত্রের উপর কালো রঙের চিত্রণ, কালো স্লিপড ও লাল স্লিপড মৃৎপাত্রে এবং তামার জিনিসপত্র। গোল কুঁড়েঘরের মেঝে লাল মাটি দিয়ে পেটান হয়েছে। ওই গোল ভিত এবং ওখানে উপলব্ধ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জিনিস থেকে মানুষের জীবনযাত্রার ধারণা করা হয়েছে। বেশিরভাগ লোকেরাই স্থায়ী জীবনযাপন করছিল এবং কৃষিকাজ, পশুপালন এবং মাছ ধরা শুরু করেছিল”।

একইভাবে, লৌহ যুগ থেকে আবিষ্কৃত সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রমাণ এবং অবশিষ্টাংশের মধ্যে রয়েছে মৃৎপাত্র, কালো পালিশ করা পোড়া জিনিসপত্র, কালো এবং লাল মৃৎপাত্র, লোহার জিনিস যেমন পেরেক, তীরের মাথা এবং লৌহ যুগের বিভিন্ন ধরণের ধাতু গলাবার মাটির পাত্র বা মুচি এবং লৌহমল।

পট্টনায়েক বলেছেন - “ওড়িশায়, বিশেষ করে উত্তর ওড়িশায় সভ্যতার বিকাশে লোহার ব্যবহার একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। উচ্চ এবং মধ্য মহানদী উপত্যকায় বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিকদের আবিষ্কৃত বেশ কয়েকটি লৌহ যুগের স্থান রয়েছে, কিন্তু উত্তর ওড়িশায় এটিই প্রথম স্থান।”

তিনি বলেছেন - "সাংস্কৃতিক উপকরণ থেকে বোঝা যায় যে ওখানে মানুষের জীবনধারা - কৃষির ভিত্তি থেকে বাণিজ্য এবং পরিখা দিয়ে জায়গাটির চারপাশে দুর্গ নির্মাণ - সব দিক থেকেই খুব উন্নত ছিল, যা খ্রিঃপূঃ ৪০০ সাল থেকে খ্রিঃপূঃ ২০০ সালের মধ্যে দুর্গাদেবীতে নগরায়নের উত্থানের ইঙ্গিত দেয়।” 

তিনি বলেছেন - “এই সাইটটি প্রারম্ভিক ঐতিহাসিক সময়েরও সাংস্কৃতিক উপকরণ খুঁজে পেয়েছে, যেমন লাল মৃৎপাত্রের নমুনা, পোড়ামাটির চাকা, কানের দুল, ব্রেসলেট, পুঁতি এবং কিছু শঙ্কু আকৃতির বস্তু।"

OIMSEAS-এর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে - "তবে, আমরা AUC, ইন্টার-ইউনিভার্সিটি এক্সিলারেটর সেন্টার, নয়া দিল্লির মাধ্যমে সাইটের জন্য একটি নিখুঁত তারিখ পাওয়ার চেষ্টা করছি৷ আরও খনন শুধুমাত্র বালাসোর জেলার সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নে নয় বরং ভারতের পূর্ব উপকূলেও নতুন দিশা আনবে"।

বিষ্ণুপদ শেঠি, আইএএস, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এবং রঞ্জন কুমার দাস, আইএএস-এর নির্দেশনায় এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর সুনীল কুমার পট্টনায়ক, ওআইএমএসইএএস-এর সচিবের তত্ত্বাবধানে খনন কাজ শুরু হয়েছিল।

(www.theoffnews.com archeology Orissa)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours