সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
শক্তির প্রাণ ভোমরা হলো বিদ্যুৎ। আর এই বিদ্যুৎ উৎপাদন মানেই কার্বণজাত দস্যু দূষণের দাদাগিরি। ফলে বলি পাঁঠার মতো কুঁকড়ে ওঠে স্বচ্ছতার পরিবেশ। তাই শক্তির হাত ধরে পরিবেশ জুড়ে এই কার্বণ গ্রাস কান্ডে বিপন্ন গোটা প্রাণী সমাজ। একইসঙ্গে অস্তিত্বের নিশ্চয়তা হারাচ্ছে মনুষ্যকুল।
তথ্যটা এরকম। সময়টা ২০২৩ সাল। সারা বিশ্বে সামগ্রিক পরিবেশে বৈশ্বিক শিল্পজাত কার্বণ উদগীরণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭ বিলিয়ন মেট্রিক টন। ঠিক সেইখানে একই ইস্যুতে ভারতের তরফে পৃথিবীর পরিমন্ডলে কার্বণ দূষণের পরিসংখ্যান ছিল ২.৭ বিলিয়ন মেট্রিক টন। এই সংখ্যা তথ্যকে যদি শুধু মাত্র শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রিভুত করা যায় তবে তার নিটফল মানুষের শিরদাঁড়ায় ঘুন ধরতে বাধ্য। কারণ সমগ্র বিশ্ব সহ ভারতের মোট কার্বণ নিঃসরণের ৬৫% থেকে ৭০% সৃষ্টি হয় শুধুমাত্র শক্তিজাত শিল্পের কারণেই। ওই ২০২১ সময়কালেই পৃথিবীতে শক্তি উৎপন্নের জন্য পরিবেশে ৩২ গিগাটন কার্বণ ছড়িয়ে গিয়েছিল। আর শক্তি উৎপাদনের নিরিখে ভারতের পক্ষে বিশ্বব্যাপী কার্বণের মাত্রায় যুক্ত করেছিল ১.৯ গিগাটন কৃষ্ণ দূষণ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রক আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের উদ্যোগে দেশীয় শক্তিজনিত কার্বণ নিঃসরণের বর্তমান পরিমাণ ৭০%'কে নামিয়ে ৫০%'এ হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আর এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কর্মকান্ডে স্বনির্ভর ভারত পাশে পেয়েছে আমাদের দেশের আত্মিক চিরসখা ব্রিটেনকে। সুতরাং ভারতের নিজস্ব উদ্যোগে যেখানে বিশ্বের দূষিত পরিবেশকে আরও স্বচ্ছ করার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে লন্ডন হাতে হাত মিলিয়ে দিল্লির দোসর হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সম ভাবনায়, ঠিক সেই বিন্দুতে পারস্পরিক যৌথ প্রতিশ্রুতির মেলবন্ধনের সিন্ধুতে সুনামির অনুঘটকের কাজটা করে ফেলল কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)।
গত বুধবার। স্থান বলতে তিলোত্তমা নগরের অভিজাত হোটেল তাজ বেঙ্গল। সেখানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল 'এনার্জি ২০২৪ কনক্লেভ।' মঞ্চের মূল ফোকাস একসময়ে কেন্দ্রীভূত হয়ে ওঠে অ্যান্ড্রিউ ফ্লেমিং'কে ঘিরে। তিনি যে কলকাতায় অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের দায়িত্ব প্রাপ্ত পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ব্রিটেন হাইকমিশনার। এমন এক হেভিওয়েট আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, "শক্তি উৎপন্নের ফলে বৈশ্বিক কার্বণ দূষণ আজকের দুনিয়ায় পৃথিবীর কাছে অন্যতম বৃহৎ আশঙ্কার কারণ। ভারত ও ইনল্যান্ড অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ'বিষয়ে একইরকমের উদ্বিগ্ন। তাই বিশ্বের কার্বণ জনিত দূষণ রোধে এই দুটি রাষ্ট্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে অঙ্গীকার বদ্ধ।" তাঁর আরও বক্তব্য, জীবাশ্ম জ্বালানির ভান্ডারে মজুতের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তিত হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসেও জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও একইসঙ্গে ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। ফলে শক্তি উৎপন্নে পুনরুজ্জীবন ঘটাতে আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নির্ভর হতেই হবে। তার সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের দেশ ব্রিটেন এইধরনের অত্যাধুনিক প্রকৌশল ভারতের সঙ্গে আদানপ্রদান করতে প্রস্তুত। কারণ এই দুই দেশের যৌথ লক্ষ্য হলো পরিবেশগত ওজন লেয়ারের ভারসাম্য রক্ষা করা, বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজ্যের অপ্রচলিত ও পুনর্নবীকরণ শক্তি মন্ত্রী মহম্মদ গুলাম রব্বানি বক্তব্য রাখতে গিয়ে আশাব্যঞ্জক কথা শুনিয়েছেন, "সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি সহ পুনর্নবীকরণ শক্তি ও অপ্রচলিত শক্তি থেকে যে বিদ্যুৎ সারা দেশে উৎপন্ন হয় তা সমগ্র ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪৪%। আর এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, পুনর্নবীকরণ শক্তি ও অপ্রচলিত শক্তি উৎপন্নে সারা দেশের মধ্যে অগ্রণীর ভূমিকা নিয়ে চলছে বরাবর।"
সিআইআইয়ের এনার্জি সাব কমিটির চেয়ারম্যান ইভান সাহা উক্ত আলোচনায় মন্তব্য করেন, জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ থেকে বর্তমানে সারা দেশে মোট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ৪৫০.৭৬ গিগাওয়াট। যা বিশেষতঃ এই ক্ষেত্রে পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় স্থানাধিকার উৎপাদন। এহেন পরিসংখ্যান আগামী ২০৩০ সালে ৫০০ গিগাওয়াটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবে ভারত। একইসঙ্গে কার্বণ দূষণের মাত্রা হ্রাসের পরিমাপে ভারত বিশ্বকে নেতৃত্বে দেবে বলেও ইভানবাবু দৃঢ়তা সঙ্গে মত প্রকাশ করেন।
(www.theoffnews.com CII Energy Conclave)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours