সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:
সোমালিয়ার লোককথা
সে অনেকদিন আগের কথা। এক শিয়ালীর বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিয়ালীর খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তার জিভ না থাকায় সে উলু দিয়ে বিয়ের মেয়েলি আচার পালন করতে পারত না। তাই সে ঠিক করল যে কারুর কাছ থেকে তার জিভটা ধার করে নেবে যাতে সে বিয়ের সময় উলু দিতে পারে। সে একের পর এক পশুর কাছে গেল যাতে সে ধার করা জিভ নিয়ে উলুধ্বনি করতে পারে। সে সবাইকে অনুনয় করে বলল যে বিয়ের পরেই সে জিভটা ফেরত দিয়ে দেবে কিন্তু তার আবেদনে কেউ সাড়া দিল না। অবশেষে সে কুমীরানীর সন্ধানে গেল। নদীর পাড়ে কুমীরানী ঘুমোচ্ছিল। শিয়ালী তাকেও বলল, “কুমীরানী, আমাকে তোমার জিভটা দয়া করে ধার দাওনা যাতে আমার বোনের বিয়েতে আমি উলু দিতে পারি।” অনেক অনুনয় বিনয়ের পর কুমীরানী অবশেষে রাজি হল কিন্তু একটা শর্তে – বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালীকে তার জিভটা ফেরৎ দিতে হবে, শিয়ালী বলল, “তথাস্তু। তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তোমার জিভটা ফেরত দেব।” বিয়ের রাতে শিয়ালী সারারাত ধরে উলুধ্বনি করল। কুমীরানী তারপর থেকে অপেক্ষা করতে লাগল শিয়ালীটা কবে তার জিভটা ফেরত দেবে। কিন্তু বিয়ে পেরিয়ে গেলেও শিয়ালী কুমীরানীকে তার জিভটা ফেরত দিল না। অন্য পশুরা শিয়ালিনীকে জিজ্ঞেস করল সে জিভটা কুমীরানীকে ফেরত দিল না কেন। শিয়ালী জবাব দিল, “বহুকাল ধরে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে খাবারের স্বাদ কেমন। ভাল ভাল খাবারের স্বাদ পাওয়ার সুযোগ আমি আর হারাতে চাই না আর উলু না দিতে পারলে আমি এই খাবারগুলোও পাব না।” তখন থেকেই কুমিরের জিভ নেই। শিয়ালী নদীর কাছে বা কুমীরানীর সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকতে পারে এমন সব জায়গার ধারপাশও কখনও মাড়ায় না। তার প্রবল ভয় আছে যে কুমীরানী তাকে মেরে ফেলে তার জিভটা কেড়ে নেবে। কুমীরানী এখনও অপেক্ষা করে আছে যে শিয়ালী তার জিভটা ফেরত দিয়ে যাবে।
(www.theoffnews.com Somalian folk tales fox crocodile)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours